Bangladesh’s St Martin’s Island: বাংলাদেশের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, তাঁর কাছ থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ চেয়েছিল আমেরিকা। কিন্তু, তিনি দেননি। সেই কারণেই পিছন থেকে কলকাঠি নেড়ে আমেরিকা তাঁর সরকারের পতন ঘটিয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্তের কাছে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের কক্সবাজার-টেকনাফ উপদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে নয় কিলোমিটার দূরে।
পদত্যাগ নিয়ে বিবৃতি
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে, সজীব ওয়াজেদ রবিবার (১১ আগস্ট) প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর, 'পদত্যাগ' নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সম্প্রতি শেখ হাসিনার 'পদত্যাগ' নিয়ে একটি বিবৃতি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই বিবৃতিতে পদত্যাগের জন্য তাঁর মাকে দায়ী করা হয়েছে। বিষয়টি, 'সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানানো।' এর আগে কথিত বিবৃতি অনুসারে হাসিনা বলেছিলেন যে তিনি যদি বাংলাদেশের, 'সেন্ট মার্টিন দ্বীপ এবং বঙ্গোপসাগর আমেরিকা'কে দিতেন, তবে ক্ষমতায় থাকতে পারতেন।
পূর্বে দেওয়া বিবৃতি
বিবৃতিটি হাসিনার ২০২৩ সালের একটি ভাষণ থেকে নেওয়া বলে মনে হচ্ছে। সেখানে তিনি দাবি করেছিলেন, 'সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি লিজ দেওয়া হলে ক্ষমতায় থাকতে কোনও সমস্যা হবে না। তবে তিনি তা করবেন না।' বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রথম আলোয় সেই বিবৃতি-সহ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু, প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাসিনা বিবৃতিতে কোনও দেশের নাম নেননি।
বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ
তাঁর বক্তৃতায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা অভিযোগ করেছিলেন, তৎকালীন বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দ্বীপটি বিক্রি করতে চায়। সেই সময় হাসিনা বলেছিলেন, '২০০১ সালে বিএনপি কীভাবে ক্ষমতায় এল? তারা গ্যাস বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। এখন তারা কি দেশ বিক্রি করতে চায় নাকি সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়?'
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ কোথায়?
দ্বীপটি বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশ এবং মায়ানমার সীমান্তের কাছে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের কক্সবাজার-টেকনাফ উপদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে নয় কিলোমিটার দূরে। ৭.৩ কিলোমিটার লম্বা দ্বীপটির বেশিরভাগ জায়গাই সমতল। গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ৩.৬ মিটার। এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। যার, পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিমে ১০-১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রাচীর রয়েছে। এটি সামুদ্রিক কচ্ছপেরও একটি প্রজনন ক্ষেত্র। দ্বীপটির স্থায়ী জনসংখ্যা প্রায় ১০,০০০ জন। ডেইলি সান দ্বারা প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, এটি একটি বিশিষ্ট পর্যটন আকর্ষণের কেন্দ্র। সেখানে প্রতিদিন গড়ে ১০,০০০ পর্যটক যাতায়াত করেন।
আরও পড়ুন- কয়েকদিন ধরে অবাধে লুঠতরাজের শিকার! স্বাধীন করেও বাংলাদেশে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিন্দুরা?
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ইতিহাস
দ্বীপটি একসময় টেকনাফ উপদ্বীপের অংশ ছিল (প্রায় ৫,০০০ বছর আগে)। কিন্তু, তা ধীরে ধীরে সমুদ্রে তলিয়ে যায়। প্রায় ৪৫০ বছর আগে, বর্তমান সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ শহরতলির পুনরুত্থান হয়েছিল। আর, ১০০ বছরে দ্বীপের উত্তর এবং বাকি অংশগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপরে উঠে এসেছিল। রিপোর্টে এমনটাই জানিয়েছে, ডেইলি সান। আরব বণিকরা প্রথম এই দ্বীপে বসতি স্থাপন করে। ১৮ শতকে তারা সেখানে আসতে শুরু করে। বণিকরা প্রথমে দ্বীপটির নাম দিয়েছিল, 'জাজিরা' (অর্থাৎ 'দ্বীপ' বা 'উপদ্বীপ') এবং পরে 'নারিকেল জিঞ্জিরা' বা 'নারকেল দ্বীপ'-এ নাম পরিবর্তিত হয়েছিল। ১৯০০ সালে, ব্রিটিশ ভারত একটি ভূমি সমীক্ষার সময় দ্বীপটিকে সংযুক্ত করে। ততক্ষণে, কিছু জেলে দ্বীপে বসতি স্থাপন করেছিল। তাদের মধ্যে কিছু ছিল বাঙালি। কিছু আবার রাখাইন সম্প্রদায়ের। এই রাখাইন বর্তমান মায়ানমারে অবস্থিত। ব্রিটিশ দখলদারিত্বের সময়, দ্বীপটি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নামে পরিচিত হয়। রিপোর্ট অনুসারে, চট্টগ্রামের তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার মার্টিনের নামে দ্বীপটির নামকরণ করা হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত হওয়ার পর, সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি পাকিস্তানের অংশ হয়ে ওঠে। পরবর্তীকালে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, স্বাধীন বাংলাদেশের অংশ হয়ে যায়।