সুপ্রিম কোর্ট কেরালা হাইকোর্টের ২০২১ সালের একটি রায় পরীক্ষা করবে। সেই রায় একজন মুসলিম মহিলার 'খুলা'-এর মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার নিশ্চিত করেছে। বিচারবহির্ভূত বিবাহবিচ্ছেদ হল, আদালতের হস্তক্ষেপ ছাড়াই বিবাহ বিচ্ছেদ। কেরল হাইকোর্টের বিচারপতি এ মহম্মদ মুস্তাক ও সিএস ডায়াসের বেঞ্চ ২০২১ সালের ৯ এপ্রিল, 'খুলা' ইস্যুতে রায়টি দিয়েছিল। যাতে বলা হয়েছে যে একজন মুসলিম মহিলার 'খুলা'র অধিকার 'সম্পূর্ণ রয়েছে'। আর, তা 'স্বামীর সম্মতি বা সম্মতির ওপর নির্ভর করে না'। ২০২১ সালে দেওয়া কেরল হাইকোর্টের ওই রায়ের ভিত্তিতে প্রশ্ন উঠেছে, মুসলিম মহিলারা মুসলিম বিবাহ আইন, ১৯৩৯-এর বিলুপ্তির পরে বিচার বহির্ভূত বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার হারিয়েছেন কি না।
প্রথমত, খুলা কি?
খুলা বলতে একজন মুসলিম মহিলার তার স্বামীকে একতরফাভাবে তালাক দেওয়ার অধিকারকে বোঝায়। এটি শরিয়ত আইনের অধীনে মুসলিম পুরুষদের দেওয়া তালাকের অধিকারের মতই ব্যাপার। তালাকের একটি রূপ হিসেবে খুলার স্বীকৃতি সরাসরি পবিত্র কোরান থেকে এসেছে। যাই হোক, কোন পদ্ধতিতে 'খুলা' করতে হবে, তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ইসলামিক আইন শাস্ত্রের হানাফি মাযহাবের অনুসারিদের মত অনেকে বিশ্বাস করেন যে বৈধ খুলার জন্য স্বামীর সম্মতি একটি পূর্বশর্ত। অন্যরা, কেরল হাইকোর্টের বর্তমান বিচারপতি ড. কাউসার ইদাপ্পাগথের মত বলছেন যে একজন স্ত্রীর খুলার অধিকার রয়েছে। স্বামীর তালাক উচ্চারণের অধিকার, বিবাহের অপূরণীয় ভাঙন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য। তাঁর বই 'ডিভোর্স অ্যান্ড জেন্ডার ইক্যুইটি ইন মুসলিম পার্সোনাল ল অফ ইন্ডিয়া'তে, ড. বিচারপতি এডাপ্পাগাথ আরও বলেছেন যে 'খুলা'তে, স্ত্রী তাঁর 'বিবাহ বন্ধন থেকে মুক্তি'-র জন্য তাঁর স্বামীকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়ে থাকেন।
'খুলা' ছাড়াও মুসলিম মহিলাদের একতরফা বিবাহ বিচ্ছেদের আরও তিনটি উপায় আছে
তালাক-ই-তফউইজ:- এটি চুক্তিভিত্তিক তালাক। যেহেতু ইসলাম বিবাহকে একটি চুক্তি হিসেবে দেখে, তাই পক্ষগুলি তাদের চুক্তির শর্তাবলি বেছে নিতে এবং তাদের বৈবাহিক জীবন কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন। যদি স্বামী বিবাহের সময় সম্মত কোনও শর্ত লঙ্ঘন করেন, তাহলে স্ত্রী আদালতের হস্তক্ষেপ ছাড়াই তালাক পাওয়ার অধিকারী হবেন। যাই হোক, চুক্তির শর্তগুলি যুক্তিসঙ্গত হওয়া উচিত এবং সরকারি নীতির বিরুদ্ধে যাওয়া উচিত নয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি স্বামী স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই আবার বিয়ে করেন, অথবা তাঁকে অবহেলা করেন, তবে তা তালাক পাওয়ার জন্য বৈধ কারণ।
মুবারআত:- এটি পারস্পরিক সম্মতিতে বিচ্ছেদের একটি রূপ। বিয়ে ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব আসতে পারে দুই পক্ষ থেকেই। একবার উভয় পক্ষই মুবারআতে প্রবেশ করলে, স্বামী-স্ত্রীর সকল পারস্পরিক অধিকার এবং বাধ্যবাধকতা শেষ হয়ে যায়। শিয়া এবং সুন্নি উভয় সম্প্রদায়ই বিবাহ বিচ্ছেদের এই রূপটিকে অপরিবর্তনীয় বলে মনে করে।
ফাসখ:- এটি আদালতের হস্তক্ষেপ বা কাজির মতো কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তালাক। 'খুলা' যেমন স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে একজন দিয়ে থাকেন। মুরারআত, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের দ্বারাই দেওয়া হয়। ফসখ হল তৃতীয় পক্ষ বা বাহ্যিক কর্তৃপক্ষ, যা সালিসকারী, মধ্যস্থতাকারী বা বিচারক দ্বারা নির্ধারিত হয়।
আরও পড়ুন- কারণটা কী! কেন সমকামী বিয়ের পক্ষে রায় দিল না সুপ্রিম কোর্ট?