On the occasion of Holi across India: হোলিতে নেশা নতুন কিছু না। হোলি উপলক্ষে দেশজুড়ে ভাং, গাঁজা খাওয়ার চল আছে। এমনকী হোলির পরেও নেশা করতে অনেকে এই সব জিনিসপত্র ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়াও ঔষধি হিসেবে, কীটনাশক হিসেবে এবং ধানের বীজের অঙ্কুরোদগমেও এই সব নেশার জিনিস অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন।
কীভাবে ভাং বানানো হয়?
গাঁজা গাছ পরিপক্ক অবস্থায় লম্বায় ৪ থেকে ১০ ফুট হতে পারে। এটি সাধারণত ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমিতে পাওয়া যায়। বিশেষ করে মেলে- হিমাচল প্রদেশ, পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গে। এছাড়াও দাক্ষিণাত্যেও পাওয়া যায়। গাঁজাকে তেলুগুতে গাঁজাই, তামিল ভাষায় গাঞ্জা এবং কন্নড় ভাষায় বাঙ্গি বলে। এই উদ্ভিদ বর্জ্যভূমিতেও জন্মায়। রাস্তার ধারেও দেখতে পাওয়া যায়। গাঁজা গাছ থেকে তিনটি জিনিস পাওয়া যায়- ফাইবার, তেল এবং মাদকদ্রব্য। গাছের বীজ এবং পাতা থেকে ভাং পাওয়া যায়। এর গুঁড়ো বা পাউডার ফিল্টার করে পান করার জন্য তৈরি করা হয়। হোলিতে ঠান্ডা দুধ, স্বাদযুক্ত দুধ বা লস্যির সঙ্গে ভাং মেশানোর চল আছে।
গাঁজা ব্যবহার
শুধুমাত্র নেশাই নয়। গাঁজা অন্য়ান্য কাজেও ব্যবহার করা হয়। যেমন, তিসি তেলের বদলে বার্নিশ শিল্পে, নরম সাবান তৈরিতে, এছাড়াও ওষুধ হিসেবেও গাঁজা ব্যবহার করা হয়। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (আইসিএআর), তার 'ইনভেন্টরি অফ ইনডিজেনাস টেকনিক্যাল নলেজ ইন এগ্রিকালচার'-এ গাঁজার ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছে। এটি দেশীয় প্রযুক্তিগত জ্ঞান সংগ্রহ, সেই জ্ঞান নথিভুক্তকরণ এবং জ্ঞানকে কাজে লাগানো বা বৈধতা সংক্রান্ত একটি প্রকল্প। এই প্রকল্প সম্পর্কে রিপোর্ট, ২০০২-০৩ সালে প্রথমবার প্রকাশিত হয়েছিল।
গাঁজার ছাই দিয়ে প্রাণীদের চিকিৎসা
আইসিএআর-এর মতে, গাঁজার ছাই পশুর ত্বকে হেমাটোমা রুখতে প্রয়োগ করা হয়। হেমাটোমা হল, এমন একটা রোগ, যেখানে রক্তনালীর বাইরে রক্ত জমাট বাঁধে। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত চন্দর ও মুখার্জির বই থেকে জানা যায়, উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন পাহাড়ে গাঁজার ছাই হেমাটোমা রুখতে ব্যবহার করা হয়।
দড়ি তৈরির জন্য
দড়ি তৈরির জন্য গাঁজা থেকে ফাইবার এবং বীজ বের করা হয়। কাংড়ার ছোট/বড়া ভাঙ্গাল এবং হিমাচল প্রদেশের মান্ডি জেলার কারসোগ এলাকায় গাঁজা চাষ করা হয়। আসক্তিযুক্ত মাদকদ্রব্য তৈরির জন্য গাঁজাচাষ অবৈধ হলেও, হিমাচলপ্রদেশের মত রাজ্যে শিল্প এবং উদ্যান পালনের অঙ্গ হিসেবে গাঁজা গাছ থেকে ফাইবার এবং বীজ বের করা হয়। এজন্য ওই অঞ্চলে গাঁজার নিয়ন্ত্রিত চাষের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। গাছ পরিপক্ক হওয়ার পরে, তা শুকানোর জন্য আলাদা করা হয়। শুকানোর পরে বীজ সংগ্রহ করা হয়। ডালপালা এবং শাখা থেকে ফাইবার আলাদা করা হয়। এই ফাইবার পাটের চেয়েও শক্তিশালী এবং দড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত ভার্মার লেখায় এমনটাই বলা আছে।
আরও পড়ুন- মস্কো-সন্ত্রাসের পর এখন বিশ্বের ত্রাস! আইসিস-কে হামলা চালাতে পারে ভারতেও?
ধানের বীজের অঙ্কুরোদগমেও গাঁজা পাতার ব্যবহার
আইসিএআরের নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জম্মু-কাশ্মীরের শের-এটেম্পেরচার কাশ্মীর ইউনিভার্সিটি অফ এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজির সম্প্রসারণ শিক্ষার পরিচালক ড. এমপি গুপ্ত, কৃষিতে গাঁজার ব্যবহার সম্পর্কে তাঁর লেখায় বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। ড. গুপ্ত বলেছেন, 'ভাং দিয়ে ধানের বীজের চিকিৎসা করা হয়। ধানের বীজের অঙ্কুরোদগমের ক্ষেত্রেও ভাং রীতিমতো কার্যকরী। জম্মু ও কাশ্মীরের মত নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের যে এলাকায় তাপমাত্র কম থাকে, সেখানে নার্সারির জন্য গাঁজার সবুজ পাতা থেকে রস বের করা হয়। ধানের বীজকে জলভরা পাত্রে রাখা হয় এবং গাঁজার রস ওই পাত্রে মেশানো হয়।'