L K Advani: শুধুই রামভক্তি, আসলে কোন প্রেক্ষিতে রথযাত্রা করেছিলেন বিজেপির 'লৌহপুরুষ' আদবানি?
Bharat Ratna: আদবানিকে 'ভারতরত্ন' দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ১৯ শতকে অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের প্রথম প্রস্তাবটি আসার সময়, ১৯৮০-র দশকে আন্দোলনটি গতি পেয়েছিল।
বাজপেয়ীর অধীনে বিজেপি এই বিষয়ে খোলাখুলিভাবে ঢুকে পড়ার ব্যাপারে কিছুটা সন্দিহান ছিল। কিন্তু, আদবানি বুঝতে পেরেছিলেন যে ক্রমবর্ধমান রাম মন্দির আন্দোলন হিন্দু ভোটকে একত্রিত করার এক অনন্য সুযোগ দিয়েছে।
Advani-Rath Yatra: রথযাত্রার সময় এক সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছেন এলকে আদবানি। (১৯৯০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, এক্সপ্রেস আর্কাইভের ছবি)
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ঘোষণা করেছেন যে প্রবীণ বিজেপি নেতা এলকে আদবানিকে ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান 'ভারতরত্ন' দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী সোশ্যাল মিডিয়া এক্স-এ পোস্ট করেছেন, 'আমি একথা জানাতে পেরে খুবই আনন্দিত যে, লালকৃষ্ণ আদবানিজিকে ভারতরত্ন দেওয়া হবে। তিনি আমাদের সময়ের সবচেয়ে সম্মানিত রাষ্ট্রনায়কদের একজন। ভারতের উন্নয়নে তাঁর অবদান অসামান্য।' ৯৬ বছর বয়সি আদবানি ১৯৮০-র দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে ভারতীয় জনতা পার্টিকে একটি জাতীয় রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। রাম জন্মভূমি আন্দোলনের জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের একত্রিত করতে তিনি ১৯৯০ সালে রথযাত্রা বের করেছিলেন। যা তাঁর পার্টির উত্থানের কেন্দ্রবিন্দু ছিল।
Advertisment
I am very happy to share that Shri LK Advani Ji will be conferred the Bharat Ratna. I also spoke to him and congratulated him on being conferred this honour. One of the most respected statesmen of our times, his contribution to the development of India is monumental. His is a… pic.twitter.com/Ya78qjJbPK
গান্ধীবাদী সমাজতন্ত্র থেকে হিন্দুত্ব ১৯৮০ সালে জনতা পার্টি ভেঙে বিজেপির উত্থান ঘটে। সেই বছরই মুম্বইতে অনুষ্ঠিত তার প্রথম জাতীয় সম্মেলনে, দলের সভাপতি অটলবিহারী বাজপেয়ীর ভাষণে জোর দেওয়া হয়েছিল। যেখানে বাজপেয়ী বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, বিজেপি কেবল শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ভারতীয় জনসংঘের নতুন অবতারই নয়। বরং, জয়প্রকাশ নারায়ণের উত্তরাধিকারী বলে দাবি করেছিলেন বাজপেয়ী। গান্ধীবাদী সমাজতন্ত্রকে দলের (বিজেপির) মূল আদর্শ বলে ঘোষণা করেছিলেন সেই বক্তব্যে। রাজনৈতিক বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফ জাফরেলট ('পরিমার্জন থিসিস', ২০১৩)-এ লিখেছেন, 'বাজপেয়ী একটি মধ্যপথ বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সম্ভবত একটি কৌশলগত গণনার ওপর ভিত্তি করে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পূর্ববর্তী জনতা পার্টির সমর্থকদের ধরে রাখাই ছিল এর উদ্দেশ্যে।' কিন্তু, ১৯৮৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে এই অবস্থানের পুরষ্কার পায়নি বিজেপি। রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর সহানুভূতির তরঙ্গে ৪০০টিরও বেশি আসন জিতেছিল। বিজেপি জিতেছিল মাত্র দুটিতে। এই ব্যর্থতা অবশ্য বিজেপির চূড়ান্ত উত্থানের প্রথম অধ্যায়। আদবানি দলের রাশ হাতে নিয়েছিলেন। আর বিজেপিকে একটি নতুন দিকে পরিচালিত করেছিলেন।
Advertisment
রাম জন্মভূমি আন্দোলন রাম জন্মভূমি আন্দোলন ১৯৮০-র দশকে শুরু হয়। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-এর মত হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলো রাম মন্দির ইস্যুতে এগিয়ে আসে। ১৯ শতকে অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের প্রথম প্রস্তাবটি আসার সময়, ১৯৮০-র দশকে আন্দোলনটি গতি পেয়েছিল। বাজপেয়ীর অধীনে বিজেপি এই বিষয়ে খোলাখুলিভাবে ঢুকে পড়ার ব্যাপারে কিছুটা সন্দিহান ছিল। কিন্তু, আদবানি বুঝতে পেরেছিলেন যে ক্রমবর্ধমান রাম মন্দির আন্দোলন হিন্দু ভোটকে একত্রিত করার এক অনন্য সুযোগ দিয়েছে। ১৯৮৯ সালে, পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে তার ঐতিহাসিক 'পালমপুর রেজোলিউশনে রাম জন্মভূমি আন্দোলন' গ্রহণ করে। শ্রীলঙ্কা ও কাশ্মীর, সেই সঙ্গে বোফর্স কেলেঙ্কারিতে রাজীব গান্ধীর ভূমিকার ওপর আদবানি চাপ বাড়ালে বিজেপি দ্রুত একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১৯৮৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি ৮৫টি আসনে জিতেছিল। কিন্তু, আদবানি বুঝতে পেরেছিলেন যে এর চেয়েও বড় পথ তৈরি করা যেতে পারে। আর, তা তৈরি করা দরকার। ১৯৯০ সালে, ভিপি সিং মণ্ডল কমিশনের সুপারিশ গ্রহণ করে। সরকারি চাকরির জন্য ওবিসি সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেন। আদবানি মনে করেছিলেন, এটা বিজেপির হিন্দুত্বকে মারাত্মকভাবে সমস্যায় ফেলবে। পালটা তিনি, বাবরি মসজিদের জায়গায় একটি রাম মন্দির নির্মাণের জন্য প্যান-হিন্দু চাপ তৈরি করার উদ্দেশ্য নিয়ে রাস্তায় নামেন। যা রথযাত্রা নামে পরিচিত।