Disposal of toxic waste: ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার প্রায় ৪০ বছর পরে মধ্যপ্রদেশ সরকার ইউনিয়ন কার্বাইড থেকে বের হওয়া ৩৩৭ মেট্রিক টন (MT) বিষাক্ত বর্জ্য পোড়াবে বলে জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার গত ৪ মার্চ, এই জন্য ১২৬ কোটি টাকা বরাদ্দও করেছে। ওই দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া লোকজন তাঁদের সমস্যার জন্য ইউনিয়ন কার্বাইডের কাছে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। ২০২৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট ইউসিসির উত্তরসূরি সংস্থাগুলোর থেকে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি কিউরেটিভ পিটিশন (কিউরেটিভ পিটিশন হল রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পরে আইনি আবেদন) খারিজ করে দিয়েছে।
ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডি
১৯৮৪ সালের ২ ডিসেম্বর রাতে মধ্যপ্রদেশের ভোপালে এক বিরাট দুর্ঘটনা ঘটে। শহরের কাছেই অবস্থিত ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইউসিআইএল)-এর মালিকানাধীন এক কীটনাশক কারখানা থেকে অত্যন্ত বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানেট (এমআইসি) গ্যাস লিক হয়। তাতে প্রায় ৫,০০০ জন মারা যান। যাঁরা বেঁচে যান, তাঁদের অনেকেই চর্মরোগে আক্রান্ত হন। মহিলাদের প্রজনন স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই দুর্ঘটনার পরবর্তীতে জন্ম নেওয়া শিশুরা জন্মগত স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হয়। পরিবেশ দূষণ ব্যাপক আকার ধারণ করে। কারখানার চারপাশের জলের উত্সগুলো দূষিত হয়ে পড়ে। অনেক হাত-পাম্প সিল করে দেওয়া হয়। এই দুর্ঘটনার দায়ে মূল অভিযুক্ত ইউসিআইএল আসলে মার্কিন সংস্থা ইউনিয়ন কার্বাইড কর্পোরেশনের (ইউসিসি) সহযোগী সংস্থা। বর্তমানে ইউসিআইএল- ডাও কেমিক্যালসের অংশ।
বর্জ্য অপসারণে চার দশক লাগল কেন?
২০০৪ সালে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে সমাজকর্মী অলোকপ্রতাপ সিং এক জনস্বার্থ মামলা (পিআইএল) দাখিল করেছিলেন। তাতে ডাও কেমিক্যালকে ওই জায়গার দূষণের জন্য তিনি দায়ী করেছিলেন। পাশাপাশি, তিনি ইউসিআইএল-এর বর্জ্য পরিষ্কার করার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। আদালত এরপর ভারত সরকারের রাসায়নিক ও পেট্রোকেমিক্যাল বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। এই ঘটনার পর সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড (CPCB)-এর বিশেষজ্ঞরা ২০০৫ সালে গুজরাটের অঙ্কলেশ্বরে ভরুচ এনভাইরো-ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড (BEIL)-এর মালিকানাধীন একটি বিশ্বমানের ইনসিনারেটরকে শনাক্ত করে। যেখানে নিরাপদে বর্জ্য ফেলা যায়। কিন্তু, ওই জায়গায় ভোপালের সেই বর্জ্য ফেলার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে গুজরাটে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।
আরও পড়ুন- বিশ্বজুড়ে ভূমিধসের সিরিজ! মোটেও আঞ্চলিক ঘটনা নয়, বড় অঘটনের আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের একাংশের
সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ
যার প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করে। তার জেরে সিদ্ধান্ত হয়, ওই জায়গায় ভোপালের ময়লা ফেলা হবে না। টাস্ক ফোর্স এরপর হায়দরাবাদের ডুঙ্গিগাল এবং মুম্বইয়ের তালোজা-সহ অন্যান্য জায়গায় চিকিত্সার বর্জ্য, জমা থাকা বর্জ্য পোড়ানোর জন্য ডিসপোজাল ফেসিলিটি (টিএসডিএফ) থাকা এলাকাগুলো চিহ্নিত করে। ২০১০ সালে, সুপ্রিম কোর্ট মধ্যপ্রদেশের পিথমপুরে (TSDF)-এ একটি সফল ট্রায়াল চালানোর পর বর্জ্য (346MT) পোড়ানোর অনুমোদন দেয়। কিন্তু, রাজ্য সরকার দুই বছর পরে এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানায়। ২০১২ সালে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, 'ভোপাল গ্যাসের বিষাক্ত বর্জ্য পোড়ানোর জন্য জায়গাটি প্রযুক্তিগতভাবে উপযুক্ত নয়, বরং অনেক বেশি বিপজ্জনক।' শেষ পর্যন্ত আদালতে অনেক টানাপোড়েনের পর পিথমপুরেই বর্জ্যগুলো নষ্ট করার জন্য গত ৪ মার্চ, কেন্দ্রীয় সরকার ১২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।