নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে ৬৫ ঊর্ধ্ব এবং যাঁরা বাড়িতে বা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টিনে রয়েছেন, বিহার ভোটে তাঁরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন।
পোস্টাল ভোটিং কী?
নির্দিষ্ট কিছু ভোটার পোস্টাল ভোট দিতে পারেন। এই মাধ্যমে একজন ভোটার দূর থেকে ব্যালট পেপারে তাঁর পছন্দ জানিয়ে ভোট গোনার আগে নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে পাঠাতে পারেন।
এই সুবিধা কারা পান?
সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনীর সদস্য, রাজ্যের বাইরে পোস্টিং এমন কোনও সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর কর্মী, বারতের বাইরে থাকা সরকারি কর্মী ও তাঁদের স্বামী বা স্ত্রী পোস্টাল ব্যালট ব্যবহার করে ভোট দিতে পারেন। যাঁরা প্রতিষেধমীলক ভাবে আটক রয়েছেন, তাঁরাও কেবলমাত্র পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারেন।
ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপ রাষ্ট্রপতি, বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সভার অধ্যক্ষ ও নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মীরাও এ পদ্ধতিতে ভোট দিতে পারেন। তবে এ সুবিধা পাওয়ার জন্য তাঁদের নির্দিষ্ট ফর্মে আবেদন করতে হয়।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের তরফে আইনমন্ত্রক অনুপস্থিত ভোটারদের নয়া বিভাগ তৈরি করেছে, যেখানে অনুপস্থিত ভোটাররা এ পদ্ধতিতে ভোট দিতে পারবেন। অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবায় যুক্ত কর্মীরা, যাঁরা কাজের জন্য ভোট দিতে যেতে পারেন না, তাঁরা এ পদ্ধতিতে ভোট দিতে পারবেন। বর্তমানে দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশন, উত্তর রেলওয়ে (যাত্রী ও পণ্য) পরিষেবা এবং সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা অনুপস্থিত ভোটার তালিকায় রয়েছেন।
গত মাসে ৬৫ ঊর্ধ্ব ও যাঁরা কোত্ভিড-১৯ পজিটিভ বা কোভিড আক্রান্ত , তেমন ব্যক্তিদের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
পোস্টাল ব্যালটের ভোট কীভাবে দেওয়া হয়?
মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিটার্নিং অফিসারকে ব্যালট পেপার ছেপে একদিনের মধ্যে পাঠিয়ে দিতে হয়। সংশ্লিষ্ট ভোটারের কাছে যাতে যথেষ্ট আগে ব্যালট পেপার পৌঁছয় এবং তিনি গণনার দিনের আগে তা পাঠিয়ে দেবার সুযোগ পান সে কারণেই এই ব্যবস্থা।
সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের রেকর্ড অফিসের মাধ্যমে ব্যালট পাঠাতে হয়। রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশবাহিনী, ভারতের বাইরে থাকা সরকারি কর্মচারী ও তাঁদের স্বামী বা স্ত্রী পোস্টে বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ব্যালট পেপার পাঠাতে পারেন। বাকিদের ব্যক্তিগত ভাবে বা পোস্টে ব্যালট পাঠাতে হয়।
ব্যালট পেপার পাওয়ার পর ভোটার তাঁর পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশে টিক বা ক্রস চিহ্ন দেবেন। তাঁরা নিজেরাই যে ব্যালট পেপারে চিহ্ন দিয়েছেন সে ব্যাপারে তাঁদের প্রত্যয়িত ঘোষণা করতে হবে। ব্যালট পেপার ও এই ঘোষণা বন্ধ খামে রিটার্নিং অফিসারের কাছে ফেরত পাঠাতে হবে। তা ভোট গণনার নির্ধারিত দিনের আগে রিটার্নিং অফিসারের কাছে পৌঁছতে হবে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সম্প্রতি পোস্টাল ব্যালট নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে লেখালিখি করছে কেন?
বিরোধীরা পোস্টাল ব্যালটের বিরুদ্ধে নয়। কংগ্রেস, সিপিআই, সিপিএম, তৃণমূল কংগ্রেস ও আরজেডি ৬৫ ঊর্ধ্ব এবং কোভিড-১৯ আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন আক্রান্তদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দানের অনুমতি দেওয়ার নির্বাচনী কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছে।
সিপিএম এ ব্যাপারে প্রথম আপত্তি জানিয়ে বলেছিল রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে পরামর্শ না করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস একে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছে। সিপিআই বলেছে এর ফলে যারা ক্ষমতায় রয়েছে এবং যাদের হাতে সম্পদ রয়েছে তারা বেনিয়ম করবে।
কংগ্রেসের যুক্তি ৬৫ ঊর্ধ্ব বহু নাগরিক অশিক্ষিত ও এর ফলে তাঁরা বিভিন্ন পর্যায়ে অন্যদের সাহায্য চাইবেন, যার জেরে তাঁদের ভোট গোপন থাকবে না। এর জেরে তাঁরা প্রশাসন, বা সরকার বা শাসক দলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়বেন।
মঙ্গলবার এই উদ্বেগের প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে আরজেডি-র তরফ থেকেও এবং তারা বলেছে এধরনের পরিবর্তনের আগে সব পক্ষের সহমত হওয়া প্রয়োজন।
কমিশন আজ পর্যন্ত কেবলমাত্র সিপিএমের তোলা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে কমিশন আত্মপক্ষ সমর্থন করে জানিয়েছে প্রবীণ নাগরিকদের কোভিড-১৯ সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে এবং সে কারণে তাঁদের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে দেওয়া হলে ঝুঁকি কমবে।