Bilkis Bano Case Supreme Court Judgement: গুজরাতে সাম্প্রদায়িক হিংসার সময় ২০০২ সালে বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ করার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ১১ সাজাপ্রাপ্তকে ফের জেলে পাঠাতে বলেছে শীর্ষ আদালত। ১৪ বছর জেল খাটার পর ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট এই সাজাপ্রাপ্তরা মুক্তি পেয়েছিল। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট সেই মুক্তিকেই খারিজ করে সাজাপ্রাপ্তদের দুই সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে।
কেন বাতিল হল মুক্তি?
বিচারপতি বিভি নাগারথনা ও বিচারপতি উজ্জল ভুঁইয়ার বেঞ্চ বলেছে, গুজরাট সরকারের এই মামলায় সাজা মুক্তির এক্তিয়ার নেই। কারণ, মামলাটা চলেছে মহারাষ্ট্রে। তাই মহারাষ্ট্র সরকার এই মামলায় মুক্তির সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাছাড়া, মুক্তির সময় যে আদালত সাজা দিয়েছিল, মুম্বইয়ের সেই বিশেষ সিবিআই আদালতের মতামত গ্রাহ্য করা হয়নি। কারণ, বিশেষ সিবিআই আদালত মুক্তির বিরুদ্ধেই মত দিয়েছিল। পাশাপাশি, আদালত যে জরিমানার নির্দেশ দিয়েছিল, তা না-দিয়েই সাজাপ্রাপ্তরা খালাস পেয়ে গিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে মুক্তির আবেদন
এক) ২০২২ সালে, বিলকিস বানো গণধর্ষণ মামলায় দোষীদের অন্যতম রাধেশ্যাম শাহ। ১৪ বছর জেলে থাকা দোষীদের জন্য গুজরাত সরকারের ১৯৯২ সালের নীতি উল্লেখ করে শাহ সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। গুজরাট সরকারকে অকাল মুক্তির নির্দেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল। দুই) সেই অনুযায়ী, দুই মাসের মধ্যে রাধেশ্যাম শাহর অকাল মুক্তির আবেদন বিবেচনা করতে ২০২২ সালের ১৩ মে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অজয় রাস্তোগি ও বিচারপতি বিক্রম নাথের বেঞ্চ। তিন) একটি সরকারি কমিটি দোষীদের মুক্তির সুপারিশ করেছিল। তার ভিত্তিতে সাজাপ্রাপ্তরা ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট মুক্তি পেয়েছিল। মুক্তির পর স্থানীয় বিজেপি নেতারা সাজাপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানায়।
পালটা আদালতে বিলকিস
পালটা, মুক্তির বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন বিলকিস বানো। সঙ্গে, বিলকিসের সমব্যথীরাও জনস্বার্থ মামলা (পিআইএল) দায়ের করে আদালতের দ্বারস্থ হন। সোমবার (৮ জানুয়ারি) শীর্ষ আদালত, ২০২২ সালের ১৩ মে-এর নির্দেশ বাতিল করেছে। আদালত জানিয়েছে, গুজরাত সরকার ১৯৯২ সালের মুক্তি নীতি যে বাতিল হয়েছে, সেই ব্যাপারে শীর্ষ আদালতকে কিছুই জানায়নি। একইসঙ্গে শীর্ষ আদালতকে বলেনি যে এই মুক্তির ব্যাপারে মহারাষ্ট্র সরকারই উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ।
শাহর প্রতারণা
আদালত জানিয়েছে, মুক্তির আবেদনকারী রাধেশ্যাম শাহ সত্যিটা চেপে গিয়েছিল। আদালতকেও বিভ্রান্ত করেছে। শাহ যে ১৯৯২ সালের মুক্তি নীতির আওতায় খালাস পেতে চেয়েছিল, সেই নীতি গুজরাত সরকার আগেই বাতিল করেছে। শীর্ষ আদালত আরও বলেছে, শাহ তার আবেদনে এই বিষয়টিও চেপে গিয়েছে, সে গুজরাত হাইকোর্টে গিয়েছিল। কিন্তু, গুজরাত হাইকোর্ট জানিয়েছিল, বিষয়টি মহারাষ্ট্রের এক্তিয়ারে। তারপর শাহ, ২০১৯ সালে মহারাষ্ট্র সরকারের কাছেও মুক্তির আবেদন করেছিল।
আরও পড়ুন- বিলকিস বানো মামলায় ফের কারাগারের পিছনে ধর্ষকরা, কেন সুপ্রিম কোর্টের এই বোধোদয়?
এখন কী হবে?
সাজাপ্রাপ্তদের আদালতের নির্দেশমতো আত্মসমর্পণ করতে হবে। মুক্তির জন্য তারা মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে আবেদন জানাতে পারে। এর আগে রাধেশ্যাম শাহ মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে মুক্তির আবেদন জানিয়েছিল। সেসময় মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র বিভাগ ৪৩৬CrPc ধারা অনুসারে বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারকের মতামত চেয়েছিল। বিচারক ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি, অকাল মুক্তির বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। আদালত বলেছিল যে ২০০৮ সালের ১১ এপ্রিলের সরকারি সিদ্ধান্ত (জিআর) দোষীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এই সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, নারী এবং নাবালকদের বিরুদ্ধে ব্যতিক্রমী অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়া অপরাধীকে ন্যূনতম ২৮ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। এই মামলায় আসামিরা ১৪ বছরের বেশি কারাদণ্ড পূর্ণ করেছে।