গত ২৩ জুলাই ছিল বাল গঙ্গাধর তিলকের জন্মবার্ষিকী। তাঁকে মহাত্মা গান্ধী 'আধুনিক ভারতের নির্মাতা' এবং জওহরলাল নেহেরু 'ভারতীয় বিপ্লবের জনক' বলে বর্ণনা করেছিলেন। যাইহোক, তিলকের যে উপাধিটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত, তা হল 'লোকমান্য' বা জনগণের প্রিয়। আর, এই তকমা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিলকের অবদানকে সর্বোত্তমভাবে তুলে ধরেছে। বুঝিয়ে দিয়েছে, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাল গঙ্গাধর তিলকের অবদান ঠিক কতখানি ছিল।
আন্দোলনে হিন্দু অনুষ্ঠান
তিলক স্বাধীনতা সংগ্রামকে একটি সাম্প্রদায়িক ছায়া দেওয়ার জন্য সমালোচিত হয়েছেন। তিনি গণেশচতুর্থী এবং শিবাজি জয়ন্তীর মতো হিন্দু উৎসবগুলোকে তাঁর গণসংহতি কর্মসূচির অঙ্গ করেছিলেন। তাঁর এই সব কর্মসূচি দেশের নায়কদের ঘিরে আবর্তিত হয়েছিল। পাশাপাশি, নারীমুক্তি এবং জাতির সংস্কারের ক্ষেত্রে তাঁর রক্ষণশীল অবস্থানও সমালোচিত হয়েছিল। মহাত্মা গান্ধীর ভাষায়, 'কোনও মানুষই লোকমান্যের ধারাবাহিকতা ও স্বরাজের সুসমাচার প্রচার করেননি।' আসলে স্বরাজের (স্বশাসন, বা বিদেশি শাসন থেকে স্বাধীনতা) অবিরাম সাধনার মধ্যেই তিলক তাঁর বিখ্যাত লাইনটি উচ্চারণ করেছিলেন, 'স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার এবং আমি তা অর্জন করব।' তাঁর ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিক এই উদ্ধৃতি বর্তমানে ইউপিএসসি-সহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় পাঠ্যসূচির মূল অংশ।
'স্বরাজ'-এর বিষয়ে তিলকের অবস্থান
তিলক ২৩ জুলাই, ১৮৫৬ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। একজন আইনজীবী, পণ্ডিত এবং সাংবাদিক (তিনি মারাঠি ভাষায় কেশরি এবং ইংরেজিতে মারাঠা পত্রিকা চালাতেন)। ১৮৯০ সালে তিলক ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন। প্রাথমিকভাবে, ভারতীয়দের জন্য সংস্কার এবং আরও অধিকারের দাবিতে কংগ্রেসের থেকে তাঁর অবস্থান খুব বেশি আলাদা ছিল না। কিন্তু, সেখানে পূর্ণ বিপ্লবের দাবি ছিল না।
ইতিহাসবিদদের চোখে
একে ভাগবত এবং জিপি প্রধান তাঁদের লোকমান্য তিলক সংক্রান্ত জীবনীতে লিখেছেন যে যদিও তিলক 'সরকারি নিপীড়ন বা অবিচারের নিন্দায় কঠোর ভাষা ব্যবহার করেছিলেন, তিনি কয়েকটি সাংবিধানিক অধিকারের মধ্যপন্থী দাবির বাইরে গিয়েছিলেন বলে মনে হয় না। সাধারণভাবে, তাঁর প্রবন্ধগুলি (কেশরী এবং মারাঠি ভাষায়) ১৮৮৫ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসের দাবিকে সমর্থন করেছিল।' একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, এই সময়েও তিলক কংগ্রেস থেকে আলাদা ছিলেন। যেমন ভাগবত এবং প্রধান লিখেছেন, 'যেখানে কংগ্রেসের নেতারা বার্ক এবং ম্যাকোলেকে অনুকরণ করে ১৯ শতকের ইংরেজিতে কথা বলতেন, তিলক এই চিন্তাগুলোকে মানুষের ঘরোয়া বাগধারায় অনুবাদ করেছিলেন।'
আরও পড়ুন- কী সেই প্রস্তাব, যার জন্য অধিবেশনই মুলতুবি হয়ে গেল?
কংগ্রেসের সঙ্গে মতপার্থক্য
যাইহোক, তিলক শীঘ্রই আরও ব্রিটিশ শাসনের জন্য কংগ্রেসের প্রার্থনা এবং আবেদনের মধ্যপন্থী পদ্ধতিতে অধৈর্য হয়ে ওঠেন। লালা লাজপত রায় এবং বিপিনচন্দ্র পালের সঙ্গে মিলে তিলক 'লাল বাল পাল' হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। লক্ষ্য হিসেবে তিনি ব্রিটিশদের থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সহিংসতা-সহ অসাংবিধানিক উপায়ও অনুসরণ করার কথা বলেছিলেন। এসব নিয়ে মধ্যপন্থী এবং চরমপন্থীদের মধ্যে ফাটল বেড়ে যায়। কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত ১৯০৭ সালে বিভক্ত হয়। যাইহোক, স্বরাজ সম্পর্কে তিলকের বিখ্যাত উক্তিটি ১৯১৬ সালে এসেছিল। সেই বছর তিনি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাবাসের পরে পুনরায় কংগ্রেসে যোগদান করেছিলেন।