BJP and simultaneous elections: 'ওয়ান নেশন, ওয়ান ভোট'। এবারের লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ইস্যু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ, লোকসভা নির্বাচনের ঘোষণার ঠিক আগে একযোগে নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন উচ্চপর্যায়ের কমিটি। তবে, কমিটির প্রস্তাব বলে নয়। বিজেপির একযোগে নির্বাচন নিয়ে হাঁকাহাঁকি, পাকাপাকি আসলে বহুদিন থেকেই চলছে।
দল প্রতিষ্ঠা হওয়ার মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে, ১৯৮৪ সাল থেকে প্রায় ৪০ বছর ধরে দেশজুড়ে একসঙ্গে নির্বাচনের কথা বলে আসছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তবে, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর একযোগে নির্বাচনের দাবিতে আরও সোচ্চার হয়েছেন বিজেপি নেতারা। এবার কোবিন্দ কমিটির পেশ করা প্রস্তাবিত ৮২এ (৫) ধারা অনুযায়ী, কোনও রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন যে সময়েই হোক না কেন, তার নির্বাচন লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গেই হবে বলে জানানো হয়েছে।
শুধু তাই নয়, বিজেপির দীর্ঘদিনের দাবিমতো কোবিন্দ কমিটি একটাই মাত্র ভোটার তালিকা তৈরির সওয়াল করেছে। অর্থাৎ রাজ্য এবং কেন্দ্রের একটাই ভোটার তালিকা থাকবে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনগুলোর আলাদা ভোটার তালিকা। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের আলাদা ভোটার তালিকা, এমনটা আর থাকবে না। বিজেপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮০ সালে। তার চার বছর পর, অর্থাৎ ১৯৮৪ সালে প্রথম লোকসভা নির্বাচন হয়েছিল।
সেবারই বিজেপি সর্বভারতীয়স্তরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। সেই সময়ই বিজেপি তার ইস্তাহারে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার, ভোটার পরিচয়পত্র তৈরি, বহু সদস্যের নির্বাচন কমিশনের দাবি তুলেছিল। সেই দাবিগুলোর মধ্যে কয়েকটি ইতিমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে। আরও কয়েকটি বাস্তবায়িত হওয়া বাকি। এক দেশ, এক ভোট- তেমনই একটি বাস্তবায়িত না হওয়া দাবি।
আরও পড়ুন- লোকসভা ভোটের পরেই ফের নির্বাচন, ‘এক দেশ, এক ভোট’ নিয়ে কী সুপারিশ কমিটির?
১৯৮৪ সালে বিজেপি কী বলেছিল?
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে লোকসভা ভোট হয়েছিল। সেবার বিজেপি ২২৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। সেখানে বিজেপি বলেছিল যে আর্থিক ক্ষমতা, মন্ত্রিত্বের ক্ষমতা, মিডিয়ার ক্ষমতা এবং পেশীশক্তি, নির্বাচনের সুষ্ঠতা এবং স্বাধীনতাকে নষ্ট করে। সেকথা মাথায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিজেপি ১১দফা দাবি তুলেছিল। সেগুলো হল-
১) ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সবাইকে ভোটের অধিকারদান।
২) ভোটারদের জন্য একক পরিচয়পত্র চালু।
৩) ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার।
৪) প্রয়োজন অনুযায়ী আইন পরিবর্তন।
৫) বিদেশে বসবাসরত ভারতীয় নাগরিকদের পোস্টাল ব্যালটের অধিকারদান।
৬) প্রতি পাঁচ বছর অন্তর একযোগে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নির্বাচনের আয়োজন।
৭) নির্বাচন কমিশনকে বহু সদস্যের সংস্থা তৈরি করা।
৮) নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
৯) স্থানীয় সংস্থাগুলোর নিয়মিত নির্বাচন।
১০) সরকারি অর্থে নির্বাচনী যাবতীয় ব্যয়ভার বহন।
১১) শাসক দলের সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে বিশেষ আচরণবিধি চালু করা।
অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন বিজেপির এই সব দাবির বেশিরভাগই পরবর্তীকালে ভারতীয় নির্বাচনী ব্যবস্থায় লাগু হয়েছে। তবে, ১৯৮৪ সালে বিজেপি মাত্র দুটি আসনে জিতেছিল। আর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার জেরে সহানুভূতির তোড়ে কংগ্রেস ৪১৪টি আসনে জয়ী হয়েছিল।