New Update
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/04/social-media-2.jpg)
টুইটার ছেয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক হ্যাশট্যাগে
সোশাল মিডিয়ায় রাজনৈতিক আলাপচারিতা একটা বড় ধরনের নেতিবাচকতার জন্ম দিয়েছে, যার মূল কারণ ট্রোলিং এবং রুচিহীন মিম
টুইটার ছেয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক হ্যাশট্যাগে
এবারের ভোটযুদ্ধে সোশাল মিডিয়ায় যে যুদ্ধ হচ্ছে, তা কেবল আকারেই বেড়েছে এমনটা নয়, তার উৎকর্ষও বেড়েছে।
গত সপ্তাহেই দেশ জুড়ে বিভিন্ন মোবাইল ফোনে মেসেজ আসতে শুরু করেছিল। সে মেসেজের প্রেরক হিসেবে দেখানো ছিল INC-IND’। মেসেজে লেখা ছিল, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী দলের ইস্তাহার প্রকাশ করেছেন, যে ইস্তেহারে সকলের জন্যই কিছু না কিছু রয়েছে।
গত ১৭ মার্চ, নিজেদের টুইটার হ্যান্ডেলে নামের আগে চৌকিদার বসিয়ে নিলেন নমো। প্রধানমন্ত্রীকে অনুসরণ করলেন প্রায় সব বিজেপি নেতারা। এসবই ম্যায় ভি চৌকিদার প্রচারের অন্তর্ভুক্ত।
এই দুটি উদাহরণ থেকেই স্পষ্ট যে যোগাযোগের কোনও মাধ্যমকেই ছাড়তে রাজি নয় দেশের কোনও রাজনৈতিক দল, তাদের বিশেষ নজর থাকছে সোশাল মিডিয়ায়, কারণ তরুণ ভোটারদের বড় অংশই সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকেন।
আরও পড়ুন, জাতীয়তাবাদেই জোর বিজেপির ইস্তাহারে
টুইটার ছেয়ে গেছে রাজনৈতিক হ্যাশট্যাগে, তার মধ্যে কিছু ট্রেন্ড সত্যিকারের, আবার কিছু ট্রেন্ড স্বার্থান্বেষীদের চেষ্টায়। ফেসবুক রাজনৈতিক পোস্টের ভাইরাল হওয়া আটকাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রায় কোনও রাজনৈতিক দলই ফেসবুকের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে রাখার সাহস পাচ্ছে না।
নমো অ্যাপের কথাই ধরা যাক, "সম্ভবত সারা বিশ্বে কোনও রাজনৈতিক দলের অ্যাপের মধ্যে এটিই সবচেয়ে জনপ্রিয়। সারা দেশের মানুষ নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যুক্ত থাকার উদ্দেশ্যে এবং দলীয় তথ্য পাওয়ার জন্য এই অ্যাপ ডাউনলোড করেছেন। বিজেপি জাতীয় মুখপাত্র গোপাল কৃষ্ণ আগরওয়ালের ব্যাখ্যানুসারে এক কোটিরও বেশি মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ রাখাই আমাদের লক্ষ্য। যেহেতু আমাদের বিশ্বাস নির্বাচন এ দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং আমরা ফেসবুক-টুইটার- ইনস্টাগ্রামের মত অ্যাপ ব্যবহার করছিস ফলে আমাদের মনে হয়েছে একটা অ্যাপ আরও ভাল।"
রাজনৈতিক প্রচারের জন্য সোশাল মিডিয়ার ব্যবহার ২০১৪ সালের থেকে অনেকটাই বেড়েছে। সে বছরই সোশাল মিডিয়া প্রথমবার ভোটের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। ইউ টিউব, ইনস্টাগ্রাম এবং স্ন্যাপচ্যাটের মত বড় সোশাল মিডিয়া রাজনৈতিক দলের কাছে নয়া দরজা খুলে দিয়েছে।
যুব কংগ্রেসের সোশাল মিডিয়া, যিনি জাতীয় স্তরে দেখভাল করে থাকেন, সেই বৈভব ওয়ালিয়ার মতে, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট এবং ইউটিউব ব্যবহার করা হচ্ছে যাতে বৃহত্তর মানুষের কাছে পৌঁছোনো যায় এবং ভোটারদের কাছে নিজেদের বক্তব্য শোনার আবেদন জানানো যায়। "আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে যোগাযোগ রাখছি এবং প্রচার চালাচ্ছি, আমাদের বিশ্বাস ডিজিটাল মিডিয়ায় প্রচার দু তরফের যোগাযোগের জন্য দারুণ একটা পদ্ধতি।"
সমস্যার নাম ট্রোলিং
সোশাল মিডিয়ায় রাজনৈতিক আলাপচারিতা একটা বড় ধরনের নেতিবাচকতার জন্ম দিয়েছে, যার মূল কারণ ট্রোলিং এবং রুচিহীন মিম। আম আদমি পার্টির সোশাল মিডিয়া ইনচার্জ অঙ্কিত লাল জানালেন, "কোনও ধরনের ট্রোলিংকেই তাঁরা উৎসাহ দেন না। স্বাস্থ্যকর শ্লেষ ঠিক আছে। কিন্তু আমরা কংগ্রেসের মত নিচে নামতে চাই না, বরং আমরা যেসব বিষয়ের উপর ফোকাস করা উচিত, তার উপর জোর দিতে চাই।"
সম্প্রতি বিজেপির ওয়েবসাইট ডাউন হয়ে যাওয়ার পর থেকে আপ এবং বিজেপির মধ্যে টুইটারে সংঘর্ষ খুবই খারাপ জায়গায় চলে গিয়েছিল। অঙ্কিত লালের মতে, "বিজেপি চায় সোশাল মিডিয়ায় এমন একটা ফাঁদ তৈরি করতে, যেখানে তারা যে বিষয়ে চায়, সে নিয়েই কথা হবে। কংগ্রেস খুব সহজেই এসব ফাঁদে পা দেয়, কিন্তু আমরা ঠিক করি এ কাজ আমরা করব না এবং সত্যিকারের ইস্যু নিয়ে কথা বলব।"
কখন কোন পোস্ট করা হবে?
পোস্ট করার বিষয় নিয়ে সব দলগুলিরই অনলাইন সেল রয়েছে, যারা এখন ওভারটাইম কাজ করেছে। তবে কেউই স্বীকার করতে চায়নি যে তাদের হাতে তৈরি করা কনটেন্ট মজুত রয়েছে। যে সব প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাঁদের জন্য যে গাইডলাইন নির্দিষ্ট করা রয়েছে, সে কথা অবশ্য সকলেই স্বীকার করেছেন।
পশ্চিম দিল্লির প্রাক্তন সাংসদ মহাবল মিশ্র ওয়ার্কশপ এবং ট্রেনিং নিয়ে দলের পদ্ধতির কথা বলতে গিয়ে বললেন, "আমাদের মত প্রার্থী যারা টেক স্যাভি নয়, তাদের ক্ষেত্রে এই গাইডলাইন খুবই দরকারি। এর ফলে আমরা যেমন দলের অ্যাজেন্ডার সঙ্গে সংগতি রাখতে পারি, তেমনই আমরা স্বাধীনভাবে প্রচারও চালাতে পারি।"
নমো, রাগা এবং কেজরিওয়াল- প্রচারের তিন মুখ
সমস্ত দলই বলছে এবারের ভোট হবে ইস্যু ভিত্তিক, কিন্তু বিশ্ব জুড়ে এখন ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রচারের ঝড় উঠেছে। যুব কংগ্রেসের সোশাল মিডিয়া ইনচার্জ ওয়ালিয়া বললেন, তাঁরা রাহুল গান্ধীপন্থী থিমের উপর জোর দিতে চান। বিজেপি এ লডা়ইয়ে অনেকাটাই এগিয়ে আছে নমো টিভি ও নমো অ্যাপের সৌজন্যে।
আপের অঙ্কিত লাল মনে করিয়ে দিলেন আপের আগে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নাম একসময়ে উচ্চারিত হত, এবং তারও আগে তাঁকে লোকে চিনত আন্নার লোকপাল নামে।
আদর্শ আচরণ বিধি
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে ডিজিটাল মিডিয়া কীভাবে ব্যবহার করা যায়, সেটাই এখন সবচেয়ে জরুরি। কমিশন স্পষ্ট বলে দিয়েছে, কোনও কেন্দ্রে ভোটের আগে ৪৮ ঘণ্টা সোশাল মিডিয়াতেও প্রচার চালানো যাবে না।
অন্যান্য দেশে, বিশেষ করে আমেরিকার ভোটে হাত পোড়ানোর পর সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মও এখন ইউজারদের টাইমলাইন পরিষ্কার করতে ব্যস্ত। সম্প্রতি, ফেসবুক অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে কংগ্রেস এবং বিজেপির সঙ্গে য়ুক্ত ৭০০-রও বেশি ফেসবুক পেজ ডিলিট করে দিয়েছে। এরকম ঘটনা আরও ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিজেপি-র আগরওয়াল বলেছেন, তাঁরা কংগ্রেসের মত মিথ্যার উপর ভরসা রাখেন না। আপের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, এদের দলের কৌশলই হল মিথ্যে বলে পালিয়ে যাওয়া এবং এতে তাদের নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়।
Read the Full Story in English