বাংলায় বিজেপির অভূতপূর্ব উত্থানের জেরে একটা কথা স্পষ্ট - দুটি মূল কারণে রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের ১৯টিতেই এগিয়ে জেতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি। এক, ভোটের সুনির্দিষ্ট মেরুকরণ, এবং দুই, বিজেপি-বিরোধী ভোটের বিভাজন।
উদাহরণ, কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি মালদা উত্তর এবং দক্ষিণ (প্রয়াত কিংবদন্তি কংগ্রেস নেতা গণি খান চৌধুরীর খাস তালুক)। দুটি আসনেই অনেকক্ষণ পর্যন্ত এগিয়ে ছিল বিজেপি। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মুসলিম-অধ্যুষিত মালদায় মুসলিম ভোট ভাগ করে নিয়েছে কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস (মালদা উত্তরে এবারের তৃণমূল প্রার্থী গণি খানের ভাগ্নি মৌসম বেনজির নূর), যেখানে হিন্দু ভোট সমস্তটাই পেয়েছে বিজেপি। একই চিত্র রায়গঞ্জে, যেখানে একদা মুকুটহীন সম্রাট ছিলেন প্রয়াত কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সী, কিন্তু ২০১৪ সালে আসনটি ছিনিয়ে নেন সিপিএম-এর মহম্মদ সেলিম। এখানে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এগিয়ে আছেন বিজেপির দেবশ্রী চৌধুরী, দ্বিতীয় স্থানে তৃণমূলের কানহাইয়ালাল আগরওয়াল। এখানে মোট জনসংখ্যার ৪৯.৮ শতাংশ মুসলমান।
আরও পড়ুন: ইতিহাসের দোরগোড়ায় বিজেপি, কীভাবে?
মতুয়া সম্প্রদায়ের গড় বনগাঁ এবং রানাঘাটে সকাল থেকে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থীরা। উল্লেখযোগ্য, বনগাঁ থেকেই নিজের নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন নরেন্দ্র মোদী। উত্তরে দার্জিলিং, বালুরঘাট এবং আলিপুরদুয়ারে বিজেপি এগিয়ে গেলেও কোচবিহারে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলে বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে।
পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী এলাকায় ঝাড়গ্রাম, বিষ্ণুপুর এবং বাঁকুড়াতেও প্রথম থেকেই এগিয়ে বিজেপি, এবং নিজের কেন্দ্র বিষ্ণুপুরে কিছু আইনি জটিলতার কারণে প্রচার করার অনুমতি না পেলেও এগিয়ে সৌমিত্র খাঁ, যিনি এবছরেরই জানুয়ারি মাসে তৃণমূল ছেড়ে যোগ দেন বিজেপি-তে।
বিজেপি'র আসন সংখ্যায় এই বিপুল বৃদ্ধির নেপথ্যে একটি বড় কারণ রাজ্যের বাম ভোট গেরুয়া শিবিরের দিকে সরে যাওয়া। যেখানে ২০১৪-য় বামেরা পেয়েছিল মোট ভোটের ৩৯ শতাংশ, এবার তা গিয়ে ঠেকে স্রেফ সাত শতাংশে। এবারও ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়ে নিজেদের ভোট শেয়ার ধরে রেখেছে তৃণমূল, যেখানে বিজেপির ভোট শেয়ার ৩৯ শতাংশ।