বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) লোকসভার কক্ষে যে দু'জন প্রবেশ করেছিলেন এবং হলুদ ধোঁয়া বের করার ক্যানিস্টার খুলেছিলেন, তাঁদের কাছে বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহার অনুমোদন পাস ছিল। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের মতে, অভিযুক্তদের একজন মনোরঞ্জন ডি, সহ-অভিযুক্ত সাগর শর্মাকে এমপির অফিসে বন্ধু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। নতুন সংসদ ভবন দেখার অজুহাতে তাঁদের পাস ইস্যু করা হয়েছিল।
বুধবার সিমহার নির্দেশে তিনটি পাস জারি করা হয়। তার মধ্যে একজন ব্যক্তিকে এক মহিলা ও তাঁর সন্তানকে নিয়ে আসার কারণে ঢুকতে না-পেরে ফিরে যেতে হয়েছে। কারণ, ওই মহিলা ও তাঁর সন্তানের নামে পাস ছিল না। সাংসদ প্রতাপ সিমহার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই অভিযুক্তের সঙ্গে ফিরে যাওয়া মহিলার কোনও সম্পর্ক ছিল না। অভিযুক্তদের মধ্যে মনোরঞ্জন ডি, তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রতাপ সিমহার অফিসে ছোটাছুটি করছিলেন পাসের জন্য। এমনটাই জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই। এই পরিস্থিতিতে দেখে নেওয়া যাক, প্রতাপ সিমহা কে? সংসদে দর্শনার্থীদের প্রবেশের জন্য পাস ইস্যু করার প্রক্রিয়া কী? এক্ষেত্রে সাংসদের দায়বদ্ধতাই বা কতটুকু?
কীভাবে সংসদে ভিজিটর পাস জারি করা হয়?
লোকসভার কার্যপ্রণালী এবং ব্যবসা পরিচালনার নিয়মের বিধি ৩৮৬ দ্বারা সংসদে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত হয়। সংসদে 'অপরিচিতদের প্রবেশ এবং অপসারণ' বিধি অনুযায়ী, স্পিকারের আদেশে, 'বৈঠকের সময় অপরিচিতদের প্রবেশ করার পর সভার কোন অংশগুলো নিয়ন্ত্রিত হবে', তা ঠিক হয়। MN Kaul এবং SL Shakdher-এর লেখা, 'সংসদের অনুশীলন এবং পদ্ধতি' অনুসারে, 'একজন সদস্য শুধুমাত্র তাঁদের জন্য ভিজিটর কার্ড ইস্যু করার আবেদন করতে পারেন, যাঁরা ব্যক্তিগতভাবে ওই সদস্যের খুব পরিচিত। ভিজিটর কার্ডের জন্য আবেদন করার সময়, সদস্যদের একটি শংসাপত্রও দিতে হয় যে, 'ওই দর্শনার্থী আমার আত্মীয়/ব্যক্তিগত বন্ধু/আমার ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত এবং আমি তার/তার জন্য সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছি।' নিরাপত্তার কারণে দর্শনার্থীদের সঙ্গে ছবি-সহ পরিচয়পত্র বহন করতে হয়।
নিয়ম বলছে, 'দর্শকদের পুরো নাম লিখতে হয়। শুধু আদ্যক্ষর লিখলে হয় না। একজন দর্শনার্থীর পিতা/স্বামীর নামও সর্বদা সম্পূর্ণ লিখতে হয়।' একই নিয়ম চালু আছে রাজ্যসভাতেও। বিধি অনুযায়ী, 'একজন সদস্য ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত এমন ব্যক্তির জন্য ভিজিটর কার্ডের আবেদন করতে পারেন বা নির্বাচিত ক্ষেত্রে এমন ব্যক্তিদের জন্য ভিজিটর কার্ডের আবেদন করতে পারেন, যাঁরা ওই সদস্যের সঙ্গে পরিচিত, অথবা তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত। তার কারণ, ওই পরিচিতদের প্রবেশ করানোর জেরে সম্পূর্ণ দায়ভার সদস্যদেরকেই নিতে হয়।
উল্লেখযোগ্যভাবে, বিধি অনুযায়ী, 'সদস্যদের মনে রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে তাঁরা এই ধরনের সদস্যপদের অনুরোধে জারি করা কার্ডধারী ব্যক্তিদের ঘটানো গ্যালারিতে যে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দায়ী থাকবেন।' এই ক্ষেত্রে, মনোরঞ্জন ডি-এর বাবা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন যে যেহেতু প্রতাপ সিমহা তাঁদের স্থানীয় এমপি, তাই তাঁদের সঙ্গে সিমহার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই অনুযায়ী, সিমহার অফিস সাফাইয়ে জানিয়েছে, সাংসদরা সাধারণত তাঁদের নির্বাচনী এলাকার সদস্যদের থেকে এই ধরনের ভিজিটর কার্ড ইস্যু করার অনুরোধ পেয়ে থাকেন। সেই কারণেই কার্ড ইস্যু করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন- একই যাত্রায় পৃথক ফল! মহুয়া বহিষ্কৃত, বিজেপির প্রতাপকে কেন নয়, প্রশ্ন তৃণমূলের
কে এই প্রতাপ সিমহা?
প্রতাপ সিমহা মহীশূর-কোদাগু এলাকার লোকসভা সদস্য। তিনি ২০১৪ সালে প্রথমবার সাংসদ হন। তার আগে তিনি কন্নড় ভাষার প্রকাশনায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার প্রাক্তন সভাপতি। সাংসদ থাকাকালীন সিমহা কর্ণাটকের বিজেপি নেতাদের সঙ্গে ঝগড়া-সহ বেশ কয়েকটি বিতর্কে জড়িয়েছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে, যখন কর্ণাটকে বিজেপি ক্ষমতায় ছিল, সিমহা বলেছিলেন যে মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিয়োগে ৫-৬ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। সহকারি অধ্যাপকদের নিয়োগেও অনিয়ম হয়েছে।
আরও পড়ুন- সংসদে হানা, কেন এমন অপরাধ উচ্চশিক্ষিত নীলমের? আক্ষেপ ঝড়ল মায়ের মুখে
কর্ণাটকে চলতি বছরের শুরুতে কংগ্রেসের কাছে বিজেপি হেরে যাওয়ার পরে, সিমহা বিএস ইয়েদুরাপ্পা এবং বাসভরাজ বোম্মাইয়ের মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময়কালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় হওয়া দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত দাবি করেছিলেন। সেই তদন্ত না-হওয়ায় তিনি সোচ্চারও হয়েছেন। সিমহাকে বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষের ঘনিষ্ঠ হিসাবে দেখা হয়। তিনি ইয়েদুরাপ্পা শিবিরের বিরোধী গোষ্ঠীতে রয়েছেন।
আরও পড়ুন- কৃষক পরিবারের সন্তান-ইঞ্জিনিয়ার-বিবেকানন্দের আদর্শে উদবুদ্ধ! সংসদ ভবনে হানাদারেরা কারা?
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি 'পাগলা কুকুর'কে দয়া না-দেখিয়ে হত্যা করার কথা বলে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলেন।
গত বছরের নভেম্বরে, তিনি একটি বাসস্ট্যান্ড ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন। কারণ তাতে 'মসজিদ-এর মত দেখতে গম্বুজ' ছিল। বিজেপি বিধায়ক এসএ রামদাসের এলাকা উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার করে ওই বাসস্ট্যান্ড তৈরি হয়েছিল। রামদাস সিমার মন্তব্যকে তাই, 'দুর্ভাগ্যজনক' বলে সমালোচনা করেছিলেন। একইসঙ্গে রামদাস জানিয়েছিলেন যে, ওই বাসস্ট্যান্ডের কাঠামোটি মাইসুরু প্রাসাদের অনুকরণে তৈরি হয়েছে।
(মনোজ সিজির ইনপুট-সহ)