পশ্চিমবঙ্গে ফিরেছে কালাজ্বর। বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে এই রোগ ছড়িয়েছে। ফলে রীতিমতো সংকটে এই চার রাজ্যের ১৬ কোটি ৫৪ লক্ষ বাসিন্দা। সেসব কথা মাথায় রেখে এই চার রাজ্যেই কালাজ্বরের বিরুদ্ধে রীতিমতো অভিযানে নেমেছে স্বাস্থ্য দফতর। তাতে পশ্চিমবঙ্গের ১১ জেলায় গত কয়েক সপ্তাহে ৬৫ জন কালাজ্বর আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। রাজ্য সরকারের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে জানিয়েছেন জনৈক স্বাস্থ্য আধিকারিক।
সাম্প্রতিককালে চলতি বছরের গোড়ায় ঝাড়খণ্ডেই প্রথম কালাজ্বরের খোঁজ মেলে। প্রতিবেশী রাজ্যটিতে গত আট বছরে এই প্রথম কালাজ্বরে মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির। সাম্প্রতিক নজরদারিতে পশ্চিমবঙ্গের ১১টি জেলা থেকেও ৬৫টি কালাজ্বরে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে ওই রাজ্যগুলোয় কালাজ্বর কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, সেটাই এখন প্রশাসনের কাছে সবচেয়ে চিন্তার বিষয়।
কালাজ্বরের নমুনা, চিকিৎসা এবং এর কতটা প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে:-
কালাজ্বর কী?
কালাজ্বর বা ভিসারাল লেশম্যানিয়াসিস হল একটি প্রোটোজোয়ান বা পরজীবী রোগ। বেলেমাছির কামড়ে যা ছড়িয়ে পড়ে। বেলেমাছি বাদামি রঙের হয় এবং তাদের শরীরে লোম থাকে। মাছিগুলো ‘লেশম্যানিয়া ডোনোভানি’ নামে পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হয়। ভেক্টর স্যান্ডফ্লাই বা কর্দমাক্ত বাড়ির ফাটল এবং ফাটলে, বিশেষ করে অন্ধকার এবং আর্দ্রতাযুক্ত কোণে এই সব পরজীবী বসবাস করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচওর মতে, লেশম্যানিয়াসের তিনটি প্রধান রূপ রয়েছে। যার মধ্যে কালাজ্বর হল সবচেয়ে গুরুতর রূপ।
এই রোগ মূলত দরিদ্র মানুষকেই প্রভাবিত করে। অপুষ্টি, জনসংখ্যার স্থানচ্যুতি, দরিদ্রদের আবাসন, দুর্বল প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং আর্থিক সংস্থানের অভাবের সঙ্গে এই রোগ যুক্ত। ডব্লিউএইচওর মতে লেশম্যানিয়াসিস পরিবেশগত পরিবর্তন যেমন বন উজাড় এবং নগরায়নের সঙ্গেও যুক্ত। ২০২০ সালে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ৯০ শতাংশের বেশি কালাজ্বরের নতুন প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছে ১০টি দেশ: ব্রাজিল, চিন, ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া, ভারত, কেনিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, সুদান এবং ইয়েমেনে।
আরও পড়ুন- শ্রীলঙ্কা ইস্যুতে সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক কেন্দ্রের, ভারতের হস্তক্ষেপ চায় DMK-AIADMK
ভারতের কোথায় কালাজ্বর ধরা পড়েছে?
পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কালাজ্বর ধরা পড়েছে দার্জিলিং, মালদা, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর ও কালিম্পঙে। পাশাপাশি, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ থেকেও কালাজ্বর আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। তবে, কলকাতায় এখনও পর্যন্ত কোনও কালাজ্বর আক্রান্তের খোঁজ মেলেনি।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, 'বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডে যাঁরা বেশ কিছুদিন কাটিয়ে রাজ্যে ফিরেছেন, তাঁদের মধ্যেই কালাজ্বরের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশ থেকেও কিছু ব্যক্তি কালাজ্বরের উপসর্গ নিয়ে এসেছেন। রাজ্য সরকার এই রোগে আক্রান্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা করছে এবং করবে।'
গত কয়েকবছর ধরে দেশে পতঙ্গবাহিত রোগের সংখ্যা ক্রমশ কমছিল। ২০১৪ সালের সংখ্যাটা ছিল ৯,২০০। গতবছর অর্থাৎ ২০২১ সালে সেই সংখ্যাটা কমে হয় ১,২৭৬। কিন্তু, তার মধ্যেই কালাজ্বরের প্রভাব বাড়ায় এখন রীতিমতো সংকটে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ১৬ কোটি ৫৪ লক্ষ বাসিন্দা।
Read full story in English