Advertisment

বিশ্লেষণ: আরও পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ বোড়ো জঙ্গি গোষ্ঠী

১৯৮৬ সালেরঅক্টোবর মাসে বোড়ো সিকিউরিটি ফোর্স নামের একটি গোষ্ঠী তৈরি করেন রঞ্জন দইমারি। এই গোষ্ঠীই পরে এনডিএফবি নামে পরিচিত হয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

রবিবার কেন্দ্রীয় সরকার আসামের বিদ্রোহী গোষ্ঠী ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট অফ বোড়োল্যান্ড (এনডিএফবি)-কে আরও পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। হত্যা ও জোর করে তোলা আদায়ের মত হিংস্র কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

Advertisment

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ঘোষণা করেছে, এনডিএফবি ও তাদের সমস্ত গোষ্ঠী, উপদল এবং ফ্রন্ট সংগঠনকে ১৯৬৭ সালের ইউএপিএ আইনের আওতায় বেআইনি গোষ্ঠী বলে ঘোষণা করেছে তারা।

বোড়োল্যান্ড সমস্যা

বোড়োরা আসামের বৃহত্তম জনজাতি গোষ্ঠী। রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৫-৬ শতাংশই হল বোড়ো। অতীতে আসামের বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ ছিল তাদের হাতে।

আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ পিটিশন; কে-কখন-কীভাবে

আসামের চার জেলা কোকড়াঝাড়, বাকসা, উদলগুড়ি এবং চিরাং নিয়ে গঠিত বোড়ো টেরিটোরিয়াল এরিয়া ডিস্ট্রিক্ট (বিটিএডি)। এখানে বেশ কয়েকটি জনজাতির বাস।

সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বোড়োদের বিচ্ছিন্নতার ইতিহাস অনেকটাই পুরনো।

১৯৬৬-৬৭ সালে বোড়োল্যান্ডের দাবি তোলে প্লেইনস ট্রাইব্যালস কাউন্সিল অফ আসাম (পিটিসিএ) নামের একটি রাজনৈতিক সংগঠন।

১৯৮৭ সালে নতুন করে সে দাবি উত্থাপন করে অল বোড়ো স্টুডেন্স অ্যাসোসিয়েশন (আবসু)। আবসুর তৎকালীন নেতা উপেন্দ্র নাথ ব্রহ্মার দাবি ছিল আসামকে ৫০-৫০ ভাগ করতে হবে।

১৯৭৯ থেকে ১৯৮৫ সাল জুড়ে যে আসাম আন্দোলন চলেছিল, যার জেরে আসাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, এ অশান্তি তারই মূলে। আসাম আন্দোলনের দাবি ছিল অহমিয়া জনগণের সুরক্ষাকবচ। এর ফলে বোড়ারাও তাদের সত্তা রক্ষার্থে আন্দোলন শুরু করে।

২০১২ সালে বোড়ো-মুসলিম দাঙ্গায় শতাধিক মানুষ নিহত হন, ঘরছাড়া হন ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর কোকরাঝাড় ও শোণিতপুরে ৩০ জনেরও বেশি মানুষকে খুন করে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা।

এনডিএফবি কারা?

রাজনৈতিক আন্দোলন ছাড়াও পৃথক বোড়োল্যান্ডের দাবিতেও সশস্ত্র গোষ্ঠী আন্দোলন শুরু করে।

১৯৮৬ সালেরঅক্টোবর মাসে বোড়ো সিকিউরিটি ফোর্স নামের একটি গোষ্ঠী তৈরি করেন রঞ্জন দইমারি। এই গোষ্ঠীই পরে এনডিএফবি নামে পরিচিত হয়। আক্রমণ, হত্যা ও জোর করে তোলা আদায়ের জন্য এরা পরিচিত।

আরও পড়ুন, ভুটান বেড়াতে গেলে কেন গাঁটের কড়ি বেশি খসতে পারে?

৯-এর দশকে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী এদের বিরুদ্ধে অপারেশন শুরু করে ব্যাপকভাবে, এনডিএফবি সংগঠন চলে যায় ভুটানে। ২০০০-এর গোড়ার দিকে ভারতীয় সেনা ও রয়্যাল ভুটান আর্মির যৌথ হানার মুখে পড়ে তারা।

এনডিএফবি-র উপদল এবং তাদের কার্যকলাপ

২০০৮ সালে আসামে এনডিএফবি-র বোমা হামলায় ৯০ জন মারা যান। এ বছরের জানুয়ারি মাসে সে ঘটনার জন্য রঞ্জন দইমারি সহ এনডিএফবি-র সঙ্গে যুক্ত ১০ জনকে শাস্তি শুনিয়েছে আদালত।

এই বোমা হামলার পর এনডিএফবি দুভাগে ভেঙে গিয়েছিল। এনডিএফবি (পি) গোষ্ঠীর নেতৃত্বে ছিলেন গোবিন্দ বসুমাতারি এবং এনডিএফবি (আর) গোষ্ঠীর নেতৃত্বে ছিলেন রঞ্জন দইমারি।

২০০৯ সালে এনডিএফবি (পি) গোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। ২০১০ সালে দইমারি গ্রেফতার হন, বাংলাদেশ থেকে তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে তিনি জামিন পান। এর পর ওই গোষ্ঠীও সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করে।

২০১২ সালে এনডিএফবি (আর) ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে নিজস্ব উপদল গড়ে তোলেন ইংতি কাথার সংবিজিত। এ সংগটনের নাম হয় এনডিএফবি (এস)। মনে করা হয় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে আসামে ৬৬ জন আদিবাসী হত্যার পিছনে এই গোষ্ঠীই রয়েছে। এনডিএফবি (এস) কোনও রকম আলোচনার বিরুদ্ধে।

২০১৫ সালে এই গোষ্ঠী থেকে সংবিজিতকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় এবং গোষ্ঠীর দায়িত্ব নেন বি সাওরাইগাউরা। এনডিএফবির এই গোষ্ঠী এখনও সক্রিয়। সংবিজিত বোড়ো গোষ্ঠীভুক্ত নন, কার্বি জনজাতির মানুষ। তিনি নিজস্ব জঙ্গি গোষ্ঠী গড়ে তুলেছেন বলে জানা গিয়েছে।

UAPA
Advertisment