Advertisment

কেন দুর্লভ বম্বে ব্লাড গ্রুপের রক্ত?

যদি কারও রক্তে H অ্যান্টিজেন না থাকে, তার অর্থ তিনি রোগ প্রতিরোধে অক্ষম বা যে কোনও রোগের সংক্রমণের আশঙ্কা তাঁর বেশি, এমন নয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Bombay Blood Group

প্রতীকী ছবি

সপ্তাহ দুয়েকের বেশি হল মুম্বইয়ের স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে বম্বে ব্লাড গ্রুপ। এটি একটি দুর্লভ রক্তের গ্রুপ।

Advertisment

রক্তের সাধারণ ও দুর্লভ ধরন

মোট চারটি সাধারণ রক্তের গ্রুপ রয়েছে। এগুলি হল এ, বি, এবি এবং ও। এছাড়া যে দুর্লভ রক্তের গ্রুপটি, যা বম্বে ব্লাড গ্রুপ নামে পরিচিত, তা বম্বে বা অধুনা মুম্বইয়ে আবিষ্কৃত হয়। ১৯৫২ সালে এ আবিষ্কার করেন ডাক্তার ওয়াই এম ভেন্ডে। প্রতিটি রক্তকোষের উপরিতলে অ্যান্টিজেন থাকে, যার মাধ্যমে রক্তের গ্রুপ কী, তা বোঝা যায়। বম্বে ব্লাড গ্রুপ, যা hh নামেও পরিচিত, তার লোহিতকণিকায় H অ্যান্টিজেন থাকে না। এবি ব্লাড গ্রুপে এ ও বি এই দুধরনের অ্যান্টিজেনই থাকে। এ গ্রুপের রক্তে থাকে এ অ্যান্টিজেন, বি গ্রুপে থাকে বি অ্যান্টিজেন। hh গ্রুপের রক্তে কোনও এ বা বি অ্যান্টিজেন থাকে না।

ভারতেও দুর্লভ, বিদেশেও অমিল

বম্বে ব্লাড গ্রুপ, সারা পৃথিবীতে ৪০ লক্ষের মানুষের মধ্যে একজনে পাওয়া যায়। ভারতে অবশ্য এই রক্তের হার সে তুলনায় বেশি। প্রতি ৭৬০০ থেকে ১০০০০ জন মানুষে একজন এই রক্তের গ্রুপ নিয়ে জন্মান।

মহারাষ্ট্র স্টেট ব্লাড ট্রান্সফিউশন কাউন্সিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক অরুণ থোরাট বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার অধিবাসীদের মধ্যে নিকট সম্পর্কে বিবাহ, বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে অন্তঃপ্রজননের কারণে এই রক্তের গ্রুপ বেশি দেখা যায়। এই রক্তের গ্রুপ উত্তরাধিকার সূত্রে পরিবাহিত হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের অধিবাসীদের মধ্যে সাধারণ পূর্বপূরুষ থাকার কারণে এই অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে বম্বে গ্রুপের রক্তের অধিকারী মানুষের সংখ্যা বেশি বলে জানিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফেরানোয় কী কী সমস্যা হচ্ছে?

গ্রুপ পরীক্ষা

hh রক্তের গ্রুপের পরীক্ষার জন্য, H অ্যান্টিজেন পরীক্ষা প্রয়োজন। hh রক্তের গ্রুপ প্রায়শই O গ্রুপ বলে ভুল হয়ে যায়। পার্থক্য হল, O গ্রপে  H অ্যান্টিজেন থাকে, hh রক্তের গ্রুপে তা থাকে না।

যদি কারও রক্তে H অ্যান্টিজেন না থাকে, তার অর্থ তিনি রোগ প্রতিরোধে অক্ষম বা যে কোনও রোগের সংক্রমণের আশঙ্কা তাঁর বেশি, এমন নয়। হিমোগ্লোবিন, প্লেটলেট, শ্বেতরক্তকণিকা এবং লোহিত রক্ত কণিকার হিসেব তাঁদের ক্ষেত্রে অন্যদের মতোই। এই রক্তের গ্রুপের দুর্লভতার কারণে, তাঁরা ব্লাড ট্রান্সফিউশনের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েন।

ট্রান্সফিউশনের সীমাবদ্ধতা

২০১৫ সালের এশিয়ান জার্নাল অফ ট্রান্সফিউশন সায়েন্সের একটি গবেষণায় বলা হচ্ছে, বম্বে ব্লাড গ্রুপের রক্তসম্বলিত কোনও ব্যক্তিকে কেবলমাত্র ওই গ্রুপের রক্তই দেওয়া যেতে পারে, যা অতীব দুর্লভ। অন্য গ্রুপের রক্ত দেওয়া হলে এঁদের শরীর সে রক্ত নিতে প্রত্যাখ্যান করবে। অন্য দিকে hh ব্লাড গ্রুপ নিজেদের ব্লাড গ্রুপ ছাড়াও এবিও ধরনের গ্রুপের কাউকে রক্ত দিতে পারেন।

একটি বেসরকারি রেজিস্টার অনুসারে সারা দেশে ৩৫০ জনের বেশি বম্বে ব্লাড গ্রুপের রক্তদাতা রয়েছেন। তবে থিংক ফাউন্ডেশন নামের এক এনজিও-র সঙ্গে যুক্ত বিনয় শেঠী জানিয়েছেন, ৩০ জনের বেশি এই গ্রুপের রক্তদাতা এক সময়ে পাওয়া যায় না। এই গ্রুপের রক্ত কোনও ব্লাড ব্যাঙ্কে সংরক্ষণ করা হয় না, কারণ রক্ত সাধারণ ভাবে ৩৫ থেকে ৪২ দিন সংরক্ষণ করা যায়। ফলে, যখন বম্বে গ্রুপের রক্তের কোনও রোগীর যখনই রক্তের প্রয়োজন হয়, তা দরকার হয় জরুরি ভিত্তিতে। কখনও কখনও, এক শহর থেকে অন্য শহরে রক্ত নিয়ে আসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে হয়। কয়েক সপ্তাহ আগে, কোটার এক বম্বে গ্রুপের রোগীকে রক্ত গেন পুনের এক রক্তদাতা। সে রক্ত প্রথমে আকাশপথে জয়পুরে নিয়ে এসে, সেখান থেকে সড়কপথে কোটায় নিয়ে আসা হয়।

আরও পড়ুন, প্রতি সেকেন্ডে ৪০ জন আত্মহত্যা করছেন, কী ব্যাখ্যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার?

প্রয়োজনের তুলনায় কম

শেঠী জানিয়েছেন, হঠাৎ যে এই রক্তের চাহিদা বেড়ে গিয়েছে, তা নেহাৎই ঘটনাক্রমে ঘটেছে। গত সপ্তাহে তাঁর কাছে মুম্বইয়ের তিনটি হাসপাতাল থেকে বেশ কয়েকজন বম্বে গ্রুপের রোগীর রক্তের জন্য অনুরোধ আসে। এর মধ্যে দুজন টাটা মেমোরিয়ল হাসপাতালের ক্যান্সার রোগী।

এই গ্রুপের রোগীরা রক্তের অভাবেই মারা যেতে পারেন। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কাতেই এমন ঘটনা ঘটেছে।

নানা খবরের বিশ্লেষণ পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে

Read the Full Story in English

Advertisment