Advertisment

বিশ্লেষণ: কুয়োয় পড়ে গেলে উদ্ধারকাজ কী ভাবে হয়, এ ধরনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় কেন?

সুজিত উইলসনের মৃত্যুর পর মঙ্গলবার মাদ্রাজ হাইকোর্ট তামিলনাড়ু সরকারকে জিজ্ঞাসা করেছে নির্দেশিকা চালু করার জন্য শিশু মৃত্যুর প্রয়োজন কি না।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

তামিলনাড়ুতে পরিত্যক্ত কুয়োয় পড়ে ২ বছরের শিশু সুজিত উইলসনের মৃত্যু নতুন রকমের দুর্ঘটনা নয়। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর হিসেব অনুযায়ী ২০০৯ সাল থেকে ৪০টিরও বেশি শিশু কুয়োয় পড়ে গিয়েছে, এর মধ্যে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হয়েছে।

Advertisment

২৫ অক্টোবর তামিলনাড়ুর ত্রিচিতে মানাপ্পারাইয়ের কাছে মাডুকাট্টুপাট্টি বাড়ির কাছে ৬০০ ফুট গভার পরিত্যক্ত কুয়োয় পড়ে যায় দু বছরের সুজিত উইলসন। মঙ্গলবার সকালে ৮০ ঘণ্টা উদ্ধারকাজ চালানোর পর তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

ভারতে কুয়ো বা বোরওয়েল নিয়ন্ত্রণ করা হয় কীভাবে?

সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ জল আনতে ১০০ থেকে ১৫০০ ফুট পর্যন্ত গভীর গর্ত খুঁড়ে তার মধ্যে ৬ থেকে ১২ ইঞ্চি ব্যাসের পিভিসি পাইপ প্রবেশ করানো হয়।

২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্ট পরিত্যক্ত/সারাই চলছে এমন/ নতুন নির্মিত বোরওয়েল বা টিউবওয়েলে শিশু দুর্ঘটনা এড়াতে রাজ্য সরকারগুলিকে নির্দেশিকা পাঠায়। সেই নির্দেশিকায় বলা হয়, যদি কোনও বোরওয়েল কোন পর্যায়ে পরিত্যক্ত হয় তাহলে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছ থেকে এ সম্পর্কিত শংসাপত্র জোগাড় করতে হবে এবং এ ধরনের তথ্য সংরক্ষণের ব্যাাপারে জেলার কালেক্টর বা বিডিওকে নিশ্চিত করতে হবে। গাইডলাইনে বলা হয়েছে, কোনও বোরওয়েল খোঁড়ার সময়ে বা সারাইয়ের সময়ে তাতে বেড়া দিতে হবে।

পড়ুন, পরবর্তী প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে: কে তিনি?

সুজিত উইলসনের মৃত্যুর পর মঙ্গলবার মাদ্রাজ হাইকোর্ট তামিলনাড়ু সরকারকে জিজ্ঞাসা করেছে নির্দেশিকা চালু করার জন্য শিশু মৃত্যুর প্রয়োজন কি না। আদালত সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন লাগু করা সংক্রান্ত এক আবেদনের শুনানির সময়ে এ কথা বলেছে।

কুয়োয় পড়ে মৃত্যু কি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে?

জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এ বছর একটি নথি প্রকাশ করেছে, যাতে বলা হয়েছে, ভারত ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে পৃথিবীতে এক নম্বরে এবং দেশে ২.৭ কোটিরও বেশি বোরওয়েল রয়েছে। একবার জল শুকিয়ে গেলে মোটর এবং পিভিসি পাইপে সরানোর পর, উপরের অংশ ঠিকভাবে ঢাকা দেওয়া হয়নি। ২০০৯ সাল থেকে ৪০ টিরও বেশি শিশু এ ধরনের বোরওয়েলে পড়ে গিয়েছে এবং গড়ে ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে উদ্ধারকাজ সফল হয়েছে। ৯২ শতাংশ ক্ষেত্রে কুয়োয় পড়ে যাওয়া শিশুর বয়স ১০ বছরের কম।

২০০৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছেস গ্রামীণ ক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশ, শহরের ৫০ শতাংশ পানীয় ও শিল্পের জন্য এবং ৫৫ শতাংশ সেচের জন্য প্রয়োজনীয়  জল আসে বোরওয়েলের মাধ্যমে। এনডিআরএফ-এর নথিতে বলা হয়েছে, বোরওয়েল জনিত মৃত্যুর ঘটনা কমানোর জন্য জলের ধারাবাহিক সরবরাহ সুনিশ্চিত করতে হবে।

 ভারতের কোথায় এই ধরনের দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে?

এনডিআরএফ-এর নথি অনুসারে, এ ধরনের দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে তামিল নাড়ু, গুজরাট ও হরিয়ানায়। এই সব রাজ্যেই ১৭.৬ শতাংশ করে দুর্ঘটনা ঘটে। এর পরেই রয়েছে রাজস্থান (১১.৮ শতাংশ) এবং কর্নাটক (৮.৮ শতাংশ)। মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ এবং মধ্য প্রদেশে ৫.৯ শতাংশ করে দুর্ঘটনা ঘটে।

বোরওয়েল সংক্রান্ত দুর্ঘটনার ৪০ শতাংশ ঘটে, শিশুরা কুয়োয় পড়ে যাওয়ায়।

জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী সারা দেশ জুড়ে ৩৭টি উদ্ধারকাজ চালিয়েছে যার মধ্যে ১৫টি সফল হয়েছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিকতমটি ঘটেছে বিহারের মুঙ্গেরে, যেখানে ৩ বছরের শিশুকে জীবন্ত উদ্ধার করা গিয়েছে।

উদ্ধারের জন্য কী পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়, তাতে চ্যালেঞ্জই বা কী?

কুয়োর গভীরতা এবং ব্যাস, ঘটনাস্থল, ঘটনার ধরন, এসবের সঙ্গে খোঁড়ার যন্ত্রপাতি, অক্সিজেন, চিকিৎসক, অ্যাম্বুলেন্স এবং আলোর সুবিধা কতটা কী পাওয়া যাচ্ছে তার উপর নির্ভর করে উদ্ধারকাজ। সঙ্গে রয়েছে মাটির প্রকৃতি, অর্থাৎ ঘটনাস্থলের মাটি পাথুরে মাটি, নাকি বালি মাটি না নরম মাটি এসবও উদ্ধার কাজের অতীব গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। কোনও বৈজ্ঞানিক বা বিশ্বাসযোগ্য উপায় না থাকলে, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এ ধরনের অপারেশনের জন্য নানা রকম পদ্ধতি গ্রহণ করে থাকে।

পড়ুন, বিশ্লেষণ: ভারতের অপরাধ রিপোর্টে নতুন কী তথ্য রয়েছে?

সাধারণ ভাবে যে কুয়োয় শিশু পড়ে গিয়েছে, তার সমান্তরাল আরেকটি গর্ত খোঁড়া হয়ে এবং একটি আনুভূমিক গর্তও খোঁড়া হয় যা দুটি খাড়া গর্তদুটির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। এই প্রক্রিয়ার জন্য বেশ ভাল সংখ্যক উদ্ধারকর্মীদের প্রয়োজন এবং প্রয়োজন ভারী যন্ত্রপাতি। এ ধরনের অপারেশনে সময় বেশি লাগে, এবং প্রায়ই তাতে দেরি হয়ে যায়, বিশেষ করে সমান্তরাল গর্ত খোঁড়ার সময়ে যদি পাথরে ধাক্কা লাগে। এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা শিশুকে জীবন্ত উদ্ধারের বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

সুজিত উইলসন ৮৮ ফিট গভীরে আটকে গিয়েছিল, তার কাছে পৌঁছনোর জন্য উদ্ধারকারীরা সমান্তরাল গর্ত খুঁড়েছিলেন। সমান্তরাল গর্ত খোঁড়ার সময়ে সিলিন্ডারের মাধ্যমে তাকে অক্সিজেন পাঠানো হয়েছিল। উদ্ধারের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল দড়ি এবং রোবোটিক যন্ত্রপাতি। কিন্তু সব প্রচেষ্টাই শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।

পড়তে ভুলবেন না, ইডেনে দিনরাতের টেস্ট: সন্ধের মুখে বেশি সুইং করবে গোলাপি বল

Read the Full Story in English

Advertisment