Advertisment

Explained: জনসনের ইস্তফা এক রোমহর্ষক কাহিনি, রয়েছে বিড়াল-দর্শনও! কী ভাবে?

কী ভাবে এল শেষ ধাক্কাটা?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
oris Johnson, Boris johnson resigns, Boris Johnson quits, Boris Johnson resignation, Boris johnson news, Britain PM, Indian Express

জনসনের ইস্তফা এক রোমহর্ষক কাহিনি,কাহিনিতে রয়েছে বিড়াল-দর্শনও, কী ভাবে?

বরিস জনসন এখনও বেকার হননি, কিন্তু তিনি পদত্যাগী। পদত্যাগ করেছেন ব্রিটেনের মহামহিম প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে। নয়া প্রধানমন্ত্রী না আসা পর্যন্ত তাঁর উপর কাজ সামলানোর ভার। অবশ্য অনেক টানাপোড়েনের পর, পুড়তে পুড়তে শেষ সুতোয় পৌঁছানোর পর তাঁর ইস্তফা।
বৃহস্পতিবার, এমপি অ্যান্ড্রু মিচেল বিবিসি-কে একটা মজার কথা বলেছিলেন। 'জনসনের অবস্থাটা অনেকটা রাশপুটিনের মতো। তাঁকে বিষ দেওয়া হয়েছে, ছুরি মারা হয়েছে, গুলি করা হয়েছে, কনকনে ঠান্ডা জলে ফেলে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তার পরেও তিনি বেঁচে।' সত্যি, জনসনের পদ আঁকড়ে থাকার লড়াইয়ের রিংটোন বোধ হয় এটাই। যা ইতিহাসে পাতিহাস হবে না কিছুতেই।

Advertisment

কী ভাবে এল শেষ ধাক্কাটা?
মন্ত্রীদের ইস্তফার ঝড় শুরু হয়েছিল। ব্রিটিশ মিডিয়ায় তা প্রকাশও পাচ্ছিল। গার্ডিয়ান বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় (ভারতে দুপুর ১.৩০) খবর করল, ২৭ জন মন্ত্রী তাঁদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এই ২৭ জনের মধ্যে পাঁচ জন ক্যাবিনেট স্তরের, তার চেয়ে ন্যূন স্তরে রয়েছেন ২২ জন। এর সঙ্গে বলতে হবে, বুধবার তাঁর প্রতি আনুগত্যে কাঁচাকলা দেখানোয় সচিব এবং মন্ত্রী মাইকেল গোভ খেয়েছেন জনসনের অর্ধচন্দ্র। এবং পরিবেশ সচিব রেবেকা পো তিতিবিরক্ত হয়ে গিয়ে পদত্যাগ করে পোঁপা দৌড় দিয়েছেন। টুইটারে সেই খবরটা তিনি যখন জানান, তখন ভারতের ঘড়িতে দুপুর ২টো বেজে ৪৫। দুপুর বেলা জনসন যেন পদত্যাগের ঢেলা খেলেন। তিনি আহ বললেন, অনেকেই আহা বলল!

কাহিনিতে বিড়াল
এ ছাড়া ডজন খানেক সংসদীয় ব্যক্তিগত সচিব মানে পার্লামেন্টারি প্রাইভেট সেক্রেটারিস বা পিপিএসএস পদত্যাগ করেন। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা পৌঁছে যায় ৫০-এ। যদিও পিপিএসএসের পদত্যাগের মিছিলকে অনেকেই পাত্তা দিতে চাননি। তাঁরা ফুট কেটেছেন, আরে ভাই এই সচিবদের ছাড়াও গভর্নমেন্ট গটগটিয়ে চলবে। কিন্তু মন্ত্রীদের ছাড়া কী করে চলবে, এই প্রশ্নে এর পর তাঁরা ঢোক গেলেন। এবং তার পরই জনসনের বিদায় ঘণ্টাটা ঢংঢং করে বাজাতে শুরু করেন। কিন্তু তখনও বরিসকে খিড়কিপথ ধরানো যাচ্ছে না। গোঁ ধরে আছেন। বুঝেও তখনও তিনি বুঝছেন না যে, তিনি প্রধানমন্ত্রী আছেন তো কি, সরকার নেই। কেউ নেই। রোদে রাঙা ইটের পাঁজার উপর বসে রাজা, সামনে পিছনে যে দিকে তাকাচ্ছেন দেখছেন-- খাঁ-খাঁ। কিন্তু ইটের পাঁজা থেকে কিছুতে নামবেন না। বুধবার বিকেলে হাউজ অফ কমন্সের জনসন যখন বক্তব্য রাখছিলেন, হ্যাঁ, তখনও জোর করে নিজের শরীরে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন আত্মবিশ্বাস। কিন্তু বৃহস্পতিবার ঠাকুরের গা থেকে মাটি-রং জলে ধুয়ে গিয়ে খড়-কাঠামো দাঁত বের করে হাসছে। এবং ইতিমধ্যে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সেই বিড়াল ল্যারি চলে এসেছে শিরোনামে। বিড়ালটিকে যে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বাইরে। রিপোর্টাররা প্রশ্ন করতে শুরু করেন, ও হে মার্জার আপনারও কি প্রধানমন্ত্রীর মতোই নিষ্ক্রমণ হবে!

শুরু থেকে শেষ
জনসনের এই শনশনে কাহিনির শুরুটা ঘটিয়েছিলেন চ্যান্সেলর অফ এক্সচেকার বা অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনক, জুলাইয়ের ৫ তারিখ পদত্যাগ করেন তিনি। বরিসের পর তিনি নাকি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, এখন এই জল্পনা চলছে জোরদার, এবং ঋষির আর একটা পরিচয় আবার, যা আমাদের কাছে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ, তিনি ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণমূর্তির জামাই। জামাই বাবাজীবনের পথেই স্বাস্থ্য এবং সমাজসেবা সচিব সাজিদ জাভিদও পদত্যাগপত্র দিয়ে দিলেন সে দিন। মাত্র সামান্য সময়ের ব্যবধান, শুরুর বাঁশিটা বেজে গেল। জাভিদ সে দিন বলেছিলেন, 'এটাই এই কাজটির (পদত্যাগ) সময়, ঝামেলা শুরু হয়ে গিয়েছে শীর্ষে।' সুনক তাঁর পদত্যাগপত্রে গোলাবারুদ দাগেন। সরকার নিজের কাজ করছে না, তাই এই সরকারে থাকার কোনও মানে নেই। সোজা কথা শোনান সুনক।
আর… শেষে… জুলাইয়ের ৭ তারিখ চ্যান্সেলর নিযুক্ত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা যেতে না যেতে টুইটারে ক্ষোভ উগরে নিজপদে পদাঘাত করলেন নাধিম জাহাওয়াই। জনসনের বক্ষ নিশ্চিত ভাবেই এতে বিদীর্ণ হয়, হতচকিত হয়েছিলেন নিশ্চয়ই, কী করেই বা মানবেন!
ঘটনা আরও কিছু ঘটবে। ঘটবেই। জনসন-অধ্যায় পদত্যাগেই সমাপ্ত হল, নাকি পদত্যাগী, অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী কোনও চমক দেবেন। লেখাটাকে মহাভারত না করে সেই অপেক্ষায় থাকা যাক না।

Boris Johnson
Advertisment