সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে চিনা পণ্য বয়কটের দাবি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে ভারতে। তবে এই প্রকারের কোনোরকম সম্ভাব্য পদক্ষেপ ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল, অর্থাৎ ঔষধ প্রস্তুতকারী শিল্পের পক্ষে, এবং ভারতের আম জনগণের পক্ষেও, গভীর উৎকণ্ঠার বিষয়। শুধু তাই নয়, এই ধরনের কোনও পদক্ষেপের দ্বারা প্রভাবিত হবেন বিশ্বের বহু এমন মানুষও, যাঁরা ভারতের বিশ্ববিখ্যাত ঔষধ প্রস্তুতকারী শিল্পের ওপর ভরসা করে থাকেন। এমনটাই মনে করেন ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানচেস্টারের অধীনস্থ গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইন্সিটিউট-এর সিনিয়র লেকচারার রোরি হর্নার।
হর্নারের ব্যাখ্যা, "যেসব ব্যবসা গ্লোবাল সাপ্লাই চেন (আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খল)-এর ওপর নির্ভরশীল, যেমন ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প, তাদের ক্ষেত্রে বাণিজ্য বয়কট অথবা নিষেধাজ্ঞা বিশেষভাবে ক্ষতিকারক। ঔষধ প্রস্তুতকারী দেশের তালিকায় ভারত পৃথিবীতে তৃতীয় স্থানে থাকলেও অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (active pharmaceutical ingredients বা API), অর্থাৎ ওষুধ তৈরি করতে যা যা উপাদান প্রয়োজন, সেগুলির জন্য চিনের ওপর উল্লেখযোগ্য ভাবে নির্ভরশীল। ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে প্রায় ৭০ শতাংশ API আসে চিন থেকে। কিছু কিছু ওষুধের ক্ষেত্রে, যেমন প্যারাসেটামল অথবা ইবুপ্রোফেন, এই নির্ভরশীলতা প্রায় ১০০ শতাংশ।"
আরও পড়ুন: চিনকে বহুমুখী বার্তা দেওয়া জরুরি, মত প্রাক্তন বায়ুসেনা আধিকারিকের
এই প্রেক্ষিতে API-এর আমদানি বন্ধ অথবা নিয়ন্ত্রিত হলে ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা। ফারমেক্সসিল (Pharmexcil)-এর হিসেবমত, ২০১৮-১৯ আর্থিক বর্ষে ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের মোট আয় ছিল ৪০ বিলিয়ন (৪০০ কোটি) ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা।
সম্ভাব্য রোগীদের ক্ষেত্রে এই ধরনের পদক্ষেপ বিশেষ আশঙ্কার কারণ। হর্নার বলছেন, "ভারতে ওষুধ উৎপাদনের মাত্রা, এবং ২০ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক রফতানি, যদি বিপুলভাবে সঙ্কুচিত হয়ে যায়, তবে ভারতে এবং ভারতের বাইরেও ওষুধ সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেবে। বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হবে নিম্ন ও মাঝারি আয়ের দেশগুলি, যারা ভারতে প্রস্তুত কম দামের ওষুধের ওপর ক্রমশ আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।"
অতএব চিনের ওপর ভারতের নির্ভরশীলতা কমানো সহজ হবে না, মনে করেন হর্নার। তাঁর কথায়, "ভারত যদি চিনের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায়, তবে তার কৌশল আয়ত্ত করতে হবে, এবং উল্লেখযোগ্য নীতিগত সমর্থনের প্রয়োজন হবে। তা সত্ত্বেও ধাপে ধাপে দেশজ শিল্প প্রতিষ্ঠিত হতে সময় লাগবে।" তাঁর সতর্কবাণী এই যে "ক্ষণিকের প্রতিক্রিয়ায় তড়িঘড়ি আলাদা হয়ে গেলে বিরাট সংখ্যক ওষুধের উৎপাদনের পথে বাধা আসবে, যেগুলির উপাদান বর্তমানে চিন থেকে আসে"।
পরিশেষে হর্নারের বক্তব্য যে, "স্বল্প মেয়াদে বয়কট বা নিষেধাজ্ঞা ভারতীয় শিল্পের ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক প্রমাণিত হবে, যেহেতু দেশে এবং দেশের বাইরেও ব্যাহত হবে ওষুধের সরবরাহ, তবে দীর্ঘ মেয়াদে চিনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোই বিচক্ষণতার কাজ হবে"।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন