কানাডা থেকে গ্যাংস্টার চালানো গোল্ডি ব্রার এখন আলোক বিন্দুতে। রবিবার ভরা সন্ধ্যায় পাঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসেওয়ালাকে নিকেশ করা হয়। ফেসবুকে পোস্ট করে যে দায় গোল্ডি নিয়েছে। গোল্ডি খতরনাক বিষ্ণোই গ্যাংয়ের লরেন্স বিষ্ণোইয়ের ইয়ার। লরেন্স অবশ্য এখন তিহারে, জেলে বন্দি, গ্যাংয়ের কাজকর্ম ছিল গোল্ডির বন্দুকে ন্যস্ত। সিধু মুসাওয়ালাকে হত্যায় এই গ্যাংয়ের প্রবল শত্রু, যাদের সঙ্গে খটাখট গুলির লড়াইয়ে এদের ভয়ঙ্কর আশনাই, সেই বাম্বিহা গ্যাংয়ের নাম উঠে এসেছে। বাম্বিহারা প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে, সেও এক ফেসবুক পোস্টে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাম্বিহা গ্যাংয়ের কাজের পদ্ধতিটা কী, সেইটি খতিয়ে দেখেছে।
খেলার মাঠ থেকে অপরাধের ময়দানে
দাবিন্দর বাম্বিহা। কবাডি খেলে নামধাম ভালই করেছিল সে। পড়াশুনোতেও ভাল ছিল। কৃষকপরিবারের ছেলে, মোগা জেলার বাম্বিয়াভাই গ্রামের বাসিন্দা। শ্যুটার হিসেবেও সে তুখোড়। আসল নামটা তার দাবিন্দর সিং সিধু।
২০১০ সাল, যখন স্নাতক পর্বের পাঠ নিচ্ছিল, তখনই তার নাম একটি খুনের সঙ্গে জড়ায়, তার গ্রামে দুই দলের অশান্তির জেরে সে খুন। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে এবং জেলে ছুড়ে দেওয়া হয়। জেলের ভিতর কিলবিলানো সব গ্যাংস্টারকে সঙ্গ করে দাবিন্দর। তার পর, ২১ বছর বয়সে নিজের গ্যাং সে তৈরি করে ফেলে। হ্যাঁ, জেল থেকে তার আগে অবশ্যই সে পালায়। ক্রমে তার ডালপালা বিস্তার পেতে থাকে। নানা কিছুতে যার গুণ, তার গ্যাংস্টার হওয়ার কাহিনি যেন মুখে মুখে ফিরতে শুরু করে। হাফ ডজন হত্যায় তার নাম জড়ায়। খুনের চেষ্টা, লুঠপাট, রাহাজানিতেও তার নাম। অস্ত্র আইনে অভিযুক্ত। মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল। ২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত। কারণ, ২০১৬-তে খেলখতম। ২০১৬-র ৯ সেপ্টেম্বর বাম্বিহা গ্যাংয়ের বাদশা পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে শেষ। ভাতিন্ডা জেলার রামপুরায় এই নিকেশপর্ব। তখন তার বয়স মাত্র ২৬। যদিও পুলিশকে বারবার সে নাকানিচোবানি খাইয়েছে এর আগে, এমনকি তার গ্যাংয়ের কাজকারবারের আপডেট সে সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়েও নিজ-টিকিটি বাঁচিয়ে রেখেছিল আশ্চর্য কায়দায়। প্রবল ক্ষমতায় ও কৌশলে।
গ্যাংস্টার শেষ, কিন্তু গ্যাং নয়
এক গাদা বন্ধু বাম্বিহার, তাদের মধ্যে কেউ বিদেশে, কেউ আবার জেলে। যারা গ্যাংয়ের 'গৌরব' বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আপ্রাণ। নিজেদের পুরনো কায়দা, মানে গ্যাংয়ের আপডেট সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে যাচ্ছে। অন্য রাজ্যেও রয়েছে তাদের সঙ্গী। যেমন হরিয়ানার কৌশল চৌধুরীর গ্যাং এই বাম্বিয়া গাংয়ের সঙ্গে হলায়-গলায়। আসলে, পুলিশ বলছে, পাঞ্জাবের গ্যাংগুলি ক্রাইমের কামড় হরিয়ানায় দেয় অনেক সময়তেই, সেখানকার গ্যাংয়ের মাধ্যমে তারা সে কাজ করে। ফলে এমন ধরনের আত্মীয়তার দরকার হয়।
বাম্বিহা গ্যাং যারা চালাচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছে আর্মেনিয়ার লাকি গৌরব পাতিয়াল। তিন দফায় সে জেলে গিয়েছে। সুখপ্রীত সিং বুদ্ধ আরেক জন, সে মোগা জেলার কুসা গ্রামের বাসিন্দা। বুদ্ধ এখন গারদে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান কবাডি খেলোয়াড় সন্দীপ সিং নাঙ্গাল আমাবিয়াকে জলন্ধরে হত্যার পিছনে এই বাম্বিহা গ্যাং-ই।
আরও পড়ুন- মোদি সরকারের আট বছর পূর্তির পরই সুসংবাদ, বাড়ল দেশের জিডিপি
গ্যাংস্টার ও গায়ক
বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সঙ্গে বাম্বিহা গ্যাংয়ের বিশাল শত্রুতা, তারা একে অপরের লোকজনকে টপকে দেওয়ার জন্য ওঁত পেতে থাকে। এর মধ্যে জড়িয়ে পড়ে গায়করাও। সঙ্গীতের সাম্রাজ্যের লড়াইয়ে গ্যাংস্টার-ছায়া দীর্ঘ হয়েছে। এমনই অভিযোগ। অকালি নেতা এবং সঙ্গীত দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত ভিকি মিদুখেরা খুন হয়ে যায় মোহালিতে গত বছর, এতে মুসেওয়ালার ম্যানেজার শগুনপ্রীতের নাম উঠে আসে। বিষ্ণোই গ্যাংয়ের অভিযোগ, মুসেওয়ালার হাত ছিল মিদুখেরা হত্যায়। এই কারণেই মুসেওয়াকে সরিয়ে দিল ওই গ্যাংয়ের গাজোয়ারি-রা। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টে বাম্বিহা গ্যাংয়ের দাবি, লরেন্স বিষ্ণোই এবং গোল্ডি ব্রারের মুসেওয়ালাকে হত্যা করা উচিত হয়নি। কারণ বাম্বিহাদের সঙ্গে মুসেওয়ালার কোনও সম্পর্কই নেই। বাম্বিহা-র আবার এমনও অভিযোগ যে, গায়ক মনকিরত আউলাখের সঙ্গে বাম্বিহা গ্যাংয়ের বন্ধুত্বের সম্পর্ক, ফলে নিরাপত্তা পাচ্ছেন তিনি, কিন্তু হত্যার একদিন আগে মুসেওয়ার নিরাপত্তা সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
Read full story in English