Advertisment

দিল্লির হিংসা ঠেকাতে কেজরিওয়ালের সরকার কী করতে পারে, কী পারে না?

কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিল্লিতে যে হিংসা চলছে, তা রোধ করতে সেনাবাহিনী নামানোর ব্যাপারে দিল্লি প্রশাসনের ভূমিকা কতটুকু? সত্যিই কি তাদের হাতে কোনও ক্ষমতাই নেই?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Delhi Disturbance, LG

দিল্লিতে নিরাপত্তা বাহিনী (ছবি- গজেন্দ্র যাদব)

কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিল্লি হিংসায় কেঁপে উঠেছে। এরই মধ্যে একটি বড় প্রশ্ন সামনে উঠে এসেছে যে দেশের রাজধানী দিল্লির আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার জন্য সরকারের পদক্ষেপ করা উচিত কি না। এর কোনও একটি সরাসরি উত্তর হয় না, কারণ এর মধ্যে একাধিক বিষয় রয়েছে।

Advertisment

দিল্লি সরকারের কোনও আধিকারিক কি আইনশৃ্ঙ্খলা পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে কেন্দ্রীয় সরকারকে সশস্ত্র বাহিনী নামানোর অনুরোধ করতে পারেন?

সংবিধানে ২৩৯ এএ অনুচ্ছেদে দিল্লির আইনে মন্ত্রিপরিষদ ও নির্বাচিত আইন প্রণেতাকে আইন তৈরি ও প্রশাসনিক ক্ষমতার বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তবে এই আইনে নির্ধারিত দুটি বিষয়, আইনশৃঙ্খলা ও পুলিশ সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ।

তবে, এর ব্যতিক্রম রয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির দুটি ক্ষেত্র, ১২৯ ও ১৩০ অনুসারে, বেআইনি জনসমাবেশ বিষয়ে দুটি নির্দিষ্ট ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে একজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৯ নং ধারা অনুসারে কোনও জনসমষ্টিকে যদি একজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে বেআইনি সমবেশ করতে দেখেন, তাহলে তিনি তাদের ছত্রভঙ্গ করার নির্দেশ দিতে পারেন। যদি তা ব্যর্থ হয়, তবে ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশকে ব্যবহার করতে পারেন।

যদি সে প্রচেষ্টাও বিফল হয়, তাহলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৩০ নং ধারানুসারে ম্যাজিস্ট্রেট কেন্দ্রাধীন সশস্ত্র বাহিনীর কোনও অফিসারকে ডেকে এই সমাবেশ ছ্ত্রভঙ্গ করতে বলতে পারেন। ফলে সীমিত এই দুই ক্ষমতার মধ্যেও, মুখ্যমন্ত্রীর অধীন একজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট জন সুরক্ষা সম্পর্কিত নির্দেশ জারি করতে পারেন।

ফৌজদারি কার্যবিধির ১৩০ নং ধারা কীভাবে কার্যকর হয়?

এর তিনটি উপধারা রয়েছে। প্রথম উপধারায় বলা হয়েছে যদি অসামরিক বাহিনী কোনও বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে ব্যর্থ হয় - এবং জনসুরক্ষার জন্য তা প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তাহলে "উপস্থিত উচ্চতম পদমর্যাদার একজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা ওই সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে পারেন।"

কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনীর আধিকারিক একজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে বাধ্য। তবে ১৩০ নং ধারায় ওই আধিকারিককে পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে তাঁর নেতৃত্বে কীভাবে ওই বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার। ২ নং উপধারায় বলা হয়েছে, "তিনি ওই সমাবেশকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য তাঁর অধীনস্থ বাহিনীর কাকে কাজে লাগাবেন এবং বেআইনি সমাবেশের থেকে কাউকে গ্রেফতার করবেন কিনা, তাও তিনি স্থির করতে পারবেন। গ্রেফতারির ব্যাপারে তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ মোতাবেকও কাজ করতে পারেন, নিজের বিবেচনা অনুসারেও কাজ করতে পারেন।"

৩ নং উপধারায় বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনী "সামান্য ক্ষমতা" প্রয়োগ করবে। বলা হয়েছে, "সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যেক অফিসার প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য সমস্ত পদক্ষেপ করবেন, তবে তা করার জন্য তিনি সামান্য ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন, যাতে ব্যক্তি ও সম্পত্তির ক্ষতির পরিমাণ সামান্য হয়।"

পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের কি সশস্ত্র বাহিনী ডাকার ব্যাপারে বেশি ক্ষমতা রয়েছে?

আইন শৃঙ্খলা ও পুলিশ যেহেতু রাজ্য তালিকার বিষয়, ফলে রাজ্য সরকার আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সশস্ত্র বাহিনী চাইতে পারে। যদি এমনও হয় যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তত খারাপ নয় যাকে সংবিধানের ৩৫৫ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে "আভ্যন্তরীণ উপদ্রবের" পর্যায়ে ফেলা যেতে পারে, তাহলেও কেন্দ্র এ অনুরোধে সাড়া দিতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে যে "বেআইনি সমাবেশ" ছত্রভঙ্গ করা এবং সমাবেশের সদস্যদের গ্রেফতার করার ব্যাপারে ১৩০ নং ধারায় উল্লিখিত একজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটেকে যে সেনাবাহিনীর সাহায্য চাইবার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা ছাড়া কোনও রাজ্য সরকার বা কোনও কর্তৃপক্ষ সশস্ত্র বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বা "আভ্যন্তরীণ উপদ্রবের" অন্য কোনও বিষয়ে কাজে লাগাতে পারে না।

সংবিধানের সপ্তম তফশিলেও রাজ্য তালিকার আইনশৃঙ্খলার বিষয়টিই রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে কাজে লাগানো রাজ্যের আওতার বাইরে।

১৯৮৪ সালের শিখ বিরোধী দাঙ্গার সময়ে কখন সেনা ডাকা হয়েছিল?

১৯৮৪ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর দিল্লিতে শিখ বিরোধী দাঙ্গা শুরু হবার সময়ে  দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ছিলেন পি জি গভাই। তিনি সরকারের কাছে সেনা নামানোর অনুরোধ করেছিলেন। বিচারপতি রঙ্গনাথ মিশ্রের তদন্ত কমিশনের মতে সেনাবাহিনীকে ডাকতে দিল্লি প্রশাসন (লেফটেন্যান্ট গভর্নর ও পুলিশ কমিশনার) দেরি করেছিল, যদিও ৩১ অক্টোবর মাঝরাতে (হত্যার দিন) ৫০০০ সেনা প্রস্তুত ছিল। নানাবতী কমিশনও মিশ্র কমিশনের এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে সহমত হয়।

নানাবতী কমিশনে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব তারলোচন সিং। তিনি বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে ফোন করে লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে "দাঙ্গা প্রতিরোধে সমস্ত ব্যবস্থা নিতে" বলেছিলেন এবং এও বলেছিলেন যে "পরিস্থিতি খুব খারাপ হলে সেনাবাহিনীকেও ডাকা উচিত।"

সাক্ষ্যদানকারীদের মধ্যে ছিলেন আই কে গুজরাল (পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী)। তিনি বলেছিলেন ১ নভেম্বর ১৯৮৪-তে তিনি লেফটেন্যান্ট গভর্নর গভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেছিলেন সেনা বাহিনীকে ডাকা উচিত, যার উত্তরে লেফটেন্যান্ট গভর্নর বলেছিলেন, "সেনাবাহিনীকে ডাকা হলে শঙ্কার পরিস্থিতি তৈরি হবে।"

মেজর জেনারেল জে এস জামওয়াল, যিনি দিল্লি এলাকার জেনারেল অফিসার কম্যান্ডিং ছিলেন, তিনি তাঁর সাক্ষ্যে বলেছিলেন, ১৯৮৪ সালের ১ নভেম্বর বেলা ১১টার সময়ে তিনি সেনা প্রধানের কাছ থেকে বার্তা পান যে অসামরিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাহায্যের আহ্বান পেলেই সে সম্পর্কিত পদক্ষেপের জন্য তিনি যেন প্রস্তুত থাকেন। এই বার্তা পাওয়ার পর তিনি লেফটেন্যান্ট গভর্নর গভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেন, সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হলে যেন জানানো হয়। সাক্ষ্যে তিনি বলেন, ২ নভেম্বর সন্ধের পর সেনাবাহিনী নামানো হয় এবং ৩ নভেম্বর থেকে বেশ কিছু এলাকায় তা যথেষ্ট কার্যকর হয়ে ওঠে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Arvind Kejriwal delhi
Advertisment