Calcutta’s Urbanisation: কলকাতা বা একদা ক্যালকাটার কোনও জন্মদিন নেই। ২০০৩ সালে রায়ে স্পষ্ট করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। অর্থাৎ জব চার্নককে কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা-রূপকার বলার কোনও কারণ নেই। এমন পর্যবেক্ষণ দুই দশক আগে ছিল হাইকোর্টের। সেই মোতাবেক তৎকালীন বাম সরকারকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। ২৪ অগাস্টকে শহরের জন্মদিন হিসেবে পালন করার প্রশাসনিক উদ্যোগ থেকে বিরত থাকতেও নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
তবে ইতিহাসে একটা প্রসঙ্গ ঘুরেফিরে আসে, যে দিনে কোনও এলাকা আবিষ্কার হবে, সেই দিনকেই তার প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে ধরা হবে। অর্থাৎ তার আগে সেই এলাকার কোনও অস্ত্বিত্ব বা গঠন নাকচ হবে। কিন্তু জব চার্নকের ক্ষেত্রে বিষয়টা ছিল অন্য। তাঁর আগমনের আগেই কলকাতার অস্তিত্ব ছিল। কারণ সুতানুটি, গোবিন্দপুর এবং কলকাতা কোনও বন্ধ্যা জমি ছিল না। যথেষ্ট উর্বর এবং উন্নত ছিল ক্যালকাটা। কিন্তু শহর মোটেই ছিল না।
এদিকে, এই প্রসঙ্গে জেএনইউয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক পার্থ দত্ত বলেন, ‘ঐতিহাসিকরা কোনও শহরের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে বিশেষ কোনও দিনকে দেখতে নারাজ। কারণ একটা শহর একদিনে বেড়ে ওঠে না। তবে এটা ঠিক ২৪ অগাস্ট জব চার্নক কলকাতা বন্দরে পৌঁছেছিলেন। তাঁর উপস্থিতির প্রামান্য নথি আছে। এবং তিনি স্থির করেছিলেন এই এলাকা ঘিরে সভ্যতার গোড়াপত্তন, শহুরে সংস্কৃতির আমদানি হবে। কারণ সেই সময় কলকাতা কোনও শহর ছিল না।‘
সেই অধ্যাপকের কৌতূহলী প্রশ্ন,’নগর সভ্যতার ঐতিহাসিক হিসেবে আমার মনে একটা প্রশ্ন জাগে। কবে থেকে শহরে রূপান্তরিত হতে শুরু করে কলকাতা? একটা শহর মানে অনেক লোকের একসঙ্গে বসবাস, মিশ্র সংস্কৃতি, একাধিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ, অর্থনৈতিক কার্যকলাপ। অর্থাৎ কোনও গ্রামীণ পরিবেশ নয়, শহুরে পরিবেশ। এই পরিবেশের রূপান্তর কবে থেকে?‘
অধ্যাপক দত্তের যুক্তি, ‘আমার মতে ১৬৯০ অর্থাৎ জব চার্নক যে বছর কলকাতায় পৌঁছন, সে বছর থেকেই শহুরে সভ্যতা আমদানি হয়নি কলকাতায়। বরং এই রূপান্তর ১৭৫৬ থেকে শুরু হয়েছিল। যবে থেকে নবাব সিরাজদৌল্লা, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে লড়তে কলকাতার দখল নিয়েছিল। সেই সময় এই সংস্থা এক প্রতিষ্ঠানের সংস্কার এবং নির্মাণ শুরু করে, যাকে আমরা এখন ফোর্ট উইলিয়াম বলেই জানি। কিন্তু নবাবের সঙ্গে সেই যুদ্ধে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হেরেছিল। তারা বুঝেছিল প্রতিরোধ গড়তে এবং সুরক্ষিত রাখতে ফোর্টের প্রয়োজনীতা কতটা।‘
তিনি বলেন, ‘এরপর থেকেই ফোর্ট উইলিয়াম সংস্কার শুরু হয় এবং সুরক্ষা বলয় দিয়ে দূর্গ হিসেবে গড়ে তোলা হয়। এই নির্মাণ ছিল ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা। নবাব বাহিনীর ফোর্ট উইলিয়ামে আক্রমণ কলকাতার মানচিত্র বদলে দিয়েছিল। কারণ সেই দূর্গের ভিতরে ব্রিটিশ এবং ইউরোপীয় অনেক পরিবারের বাস ছিল। সেই আক্রমণের পর থেকেই সেই পরিবার স্থানান্তরিত হতে শুরু করেন। অর্থাৎ ফোর্টের বাইরে আসতে শুরু করেন। যাদের মধ্যে অনেক বণিক এবং প্রশাসক ছিলেন। কারণ তাঁরা জানত কলকাতায় হামলা হলে সেই হামলা প্রতিরোধের পরিকাঠামো রয়েছে। এভাবেই সেই পরিবারগুলো ছড়িয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে চৌরঙ্গী, এসপ্লানেডের মতো এলাকা তৈরি হতে থাকে। সেটাই ছিল ইউরোপীয় কলকাতা, যাকে আমরা হোয়াইট টাউন হিসেবে জানি।‘
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন