বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (বিআরও) 'বীকন প্রজেক্ট' হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পে কাশ্মীরের লিদ্দার উপত্যকায় হিমালয়ের কোলে তুষারলিঙ্গ অমরনাথের গুহা মন্দিরের রাস্তা পুনরুদ্ধার এবং উন্নত করার কাজ চলছে। ২ নভেম্বর, বিআরও এক্স (পূর্বে টুইটারে)-এ পোস্ট করেছে যে মন্দিরের পথে বালতাল রোডকে উন্নত করার পর, মোটর গাড়িতেই পবিত্র গুহা পর্যন্ত যাওয়া যাচ্ছে। যা প্রথমবার ঘটল। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও জাতীয় সড়কমন্ত্রী নিতিন গড়করি চলতি বছরের শুরুতে মন্দিরে যাওয়ার জন্য একটি নতুন রাস্তা তৈরির কথা ঘোষণা করার পরে, এই পথ তৈরি হয়েছে।
অমরনাথে যাওয়ার পথ
অমরনাথ তীর্থস্থান, বরফলিঙ্গ, ১৩ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত। তীর্থযাত্রীরা লিদ্দার উপত্যকায় পহেলগাও বা সোনমার্গ হয়ে মন্দিরে পৌঁছতে পারেন। লিঙ্গের গুহাটি পহেলগাও থেকে ৪৮ কিলোমিটার উত্তরে। তীর্থযাত্রীরা প্রাথমিক ১৬ কিমি (পহেলগাও থেকে চন্দনওয়ারি) মোটরগাড়িতে যান। বাকি পথ হয় হেঁটে, নয়তো টাট্টু ঘোড়ায় চেপে যান। এই পথে গুহায় যেতে সময় লাগে ৩-৫ দিন। সোনমার্গ থেকে বালতাল হয়ে যাওয়ার পথটা অপেক্ষাকৃত ছোট। বালতাল এবং মন্দিরের মধ্যে দূরত্ব ১৪ কিমি। এই পথ সাধারণত আট ঘণ্টা হেঁটে অথবা একটি টাট্টুতে ছয় ঘণ্টারও কম সময়ে অতিক্রম করা যায়। বেশিরভাগ তীর্থযাত্রী অমরনাথে রাত্রিযাপন করেন। যদিও মন্দিরে একদিনেই যাওয়া ও ফেরা সম্ভব। তীর্থযাত্রীরা হেলিকপ্টারে চেপেও মন্দিরে পৌঁছতে পারেন। কপ্টার বালতাল থেকে পঞ্চতার্নি পর্যন্ত চলে। যার দূরত্ব মন্দির থেকে ৬ কিলোমিটার। পরিবেশগত সমস্যায় কপ্টার পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কারণ, পরিবেশবিদদের একাংশ তুষারলিঙ্গ দ্রুত গলে যাওয়ার জন্য হেলিকপ্টারকে দায়ী করেছিলেন।
গড়করির প্রস্তাব
চলতি বছরের এপ্রিলে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়করি একটি প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন। এই প্রকল্প হল, মোটরপথে অমরনাথে যাওয়ার রাস্তা। ৫,৩০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে চন্দনওয়ারি (পহেলগাও দিকে) থেকে বালতাল (সোনামার্গের দিকে) পর্যন্ত একটি ৩৪ কিলোমিটার দুই লেনের মোটরগাড়ি চলাচলের রাস্তা তৈরি। যার মধ্যে রয়েছে শেষনাগ থেকে পঞ্চতার্নি পর্যন্ত একটি ১০.৮ কিলোমিটারের টানেল। যা পহেলগাও রুটের সবচেয়ে কঠিন অংশ। এই টানেল ১৪,৫০০ ফুট উচ্চতায় মহাগুনাস শিখর দিয়ে গিয়েছে। একটি ৫ কিলোমিটার কংক্রিটের পথ তীর্থযাত্রীদের গাড়িকে পঞ্চতরণী থেকে মন্দিরে পৌঁছে দেবে। তীর্থযাত্রীরা বালতাল থেকে মন্দিরে ৯ কিলোমিটার রোপওয়ে পথেও যেতে পারেন। এই রোপওয়ে পথ ৭৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হবে। গডকরি জানিয়েছেন যে চলতি বছরের শেষ নাগাদ এই প্রকল্পের জন্য টেন্ডার ডাকা হবে।
আরও পড়ুন- দূষণ কমাতে মেঘ বানিয়ে বৃষ্টি নামানোর পরিকল্পনা দিল্লির, কীভাবে সম্ভব?
বিআরও কী করছে
বালতাল এবং চন্দনওয়ারি থেকে মন্দির পর্যন্ত হাঁটাপথ জম্মু-কাশ্মীর সরকারের রাস্তা ও বিল্ডিং (R&B) বিভাগ রক্ষণাবেক্ষণ করছিল। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে, উভয়পথই রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নতির জন্য বিআরও-র কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিআরও আধিকারিকরা জানিয়েছেন, বালতাল রুটের পথগুলো ১৫ ফুট পর্যন্ত চওড়া করা হয়েছে। ট্রাক এবং পিকআপ গাড়িগুলোর গুহা মন্দিরে যাওয়ার জন্য এই পথই যথেষ্ট। বিআরও আরও জানিয়েছে যে পর্যটকদের গাড়িকে এখনও পর্যন্ত ওই সড়কপথে যাতায়াতের অনুমতি দেওয়া হয়নি। বদলে, হাঁটাপথই প্রশস্ত করার কাজ চলছে।