সুরের তরঙ্গটা সবে শেষ করেছিলেন, থামল তাঁর হৃদয়তরঙ্গ। ৫৩ বছরে খ্যাতিশীর্ষ থেকে মৃত্যুতে পৌঁছলেন কেকে। যদিও অমরত্বই পেয়েছেন। কিন্তু স্টেজ পারফর্ম্যান্সের অব্যবহিত পরে কেন শেষ হয়ে গেলেন এই তারকা শিল্পী, জানা যাচ্ছে এর কারণ-- হার্ট অ্যাটাক। হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে কত মানুষের জীবন যে শেষ হয়ে গিয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই।
এই তো কোনও প্রিয়জন কর্মচঞ্চল, হৃদয়ের কথা বলিতে ব্য়কুল হয়ে উঠেছিলেন, বলছিলেনও, পরক্ষণে হৃদয়টির থেমে যাওয়া কিছুতেই মানা যায় না। 'ফিরে এসে ফিরে এসো' বলে তার পর যতই আর্তনাদ করি না কেন, মৃত্যুর বধির কানে তা তো পৌঁছয় না কিছুতেই। এই হল দস্তুর। এটাই মৃত্যুর আলেখ্য। হার্ট অ্যাটাকের মেডিকাল টার্ম-- মায়োকার্ডিয়াল ইনফাকশন বা এমআই (myocardial infarction, MI)।
হার্টে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে গিয়ে, এই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। হার্ট অ্যাটাক বা এমআই নিয়ে কম আলোচনা হয়নি হিসেবের খাতায়। কিন্তু হার্ট অ্যাটাক রুখতে সাধারণ সচেতনতা কি গড়ে উঠেছে আমাদের মধ্যে? মনে তো হয়-- না। বিশেষ করে যখন উত্তরোত্তর হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর হার বাড়ছে এ দেশে। তরুণ-তাজারাও এর কবলে পড়ছেন। নিরন্তর। ২০০০ থেকে ২০১৫-র মধ্যে আমাদের দেশে ৩৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সি পুরুষের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু এক লক্ষে ৪৮ জন থেকে বেড়ে হয়েছে ৬১। মহিলাদের মধ্যেও এটা বাড়ছে। তবে পুরুষের থেকে অকস্মাৎ হার্ট অ্যাটাকে মহিলারা বেশ কিছুটা পিছনে এখনও।
কী হয় হার্ট অ্যাটাকে?
এমআই, সাধারণ ভাবে যাকে হার্ট অ্যাটাক বলা হয়ে থাকে, রক্তপ্রবাহ থেমে যায় মধ্যবর্তীস্তরের হার্টের প্রাচীরে। যে সব পেশী হার্টকে পাম্প করতে থাকে, সেখানেই এটা ঘটে। করোনারি আর্টারিতে বাধা তৈরি হলে অক্সিজেন বাহিত রক্ত আর পায় না হার্টের পেশীগুলি, তখনই কাল ঘনিয়ে আসে। অনেক দিন ধরে অক্সিজেন ভরপুর রক্ত ঠিক মতো না-পেতে পেতে হার্টের কোষের ক্ষতি হয়, পেশীর ক্ষতি হয়, এটাই এর কারণ।
আমদাবাদের অ্যাপোলো সিভিএইচএফ হার্ট ইনস্টিটিউটের সিইও কার্ডিওলজিস্ট ডা. সমীর দানী বলছেন, যখন আমরা জন্মাই আমাদের ধমনীগুলি মসৃণ এবং স্থিতিস্থাপক থাকে। ফলে দারুণ ভাবে রক্তসঞ্চালন হতে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধমনীতে কোলেস্টেরল জমে। বয়স, ক্রনিক রোগব্যধি, সেই সঙ্গে কোমর্বিডিটি যেমন ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ। অনেক সময় ধূমপান, মানসিক চাপ, জিনের গঠন ইত্যাদি হার্ট অ্যাটাকের কারণ হয়ে ওঠে। হার্ট অ্যাটাকের ফলে একটা তীব্র অস্বস্তি-- বুকে ব্যথা হতে থাকে, যা ছড়িয়ে পড়ে গলা চোয়াল ঘাড়ে বা হাতে।
পারিবারিক হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস কতটা দায়ী?
ডা. দানী বলছেন, হার্ট অ্যাটাকের ফ্যামিলি হিস্ট্রি থাকলেও আশঙ্কাটার পারদ অনেকটা নামিয়ে দেওয়া যায় ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরল লেভেল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। তামাক ছেড়ে দেওয়া এবং সচল জীবনযাপন, এবং ব্যালান্স ডায়েট করতে হবে। তবে, যাঁদের পারিবারিক হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস রয়েছে, তাঁদের এর ঝুঁকি অবশ্যই বেশি থাকে। যাঁদের ফ্যামিলি হিস্ট্রি নেই, তাঁদেরও মনে রাখতে হবে দুটি বিষয়-- প্রথমত, কোলেস্টেরলের টুঁটি টিপে ধরতে হবে এবং দ্বিতীয়ত, দিনের বেশির ভাগ সময়তেই বসে বা শুয়ে থাকা যাবে না। ব্যায়াম করতে হবে। আর যাঁদের হার্ট অ্যাটাকের পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে, তাদের উচিত ২০-২৫ বছর বয়স থেকে নিয়মিত হেলথ চেক-আপ করা। এবং অন্যান্য রিস্ক ফ্যাক্টরগুলিতে গুরুত্বের আতসকাচ ফেলা।
আরও পড়ুন- জিএসটি-র ঊর্ধ্বগতি জারি, কেন বাড়ছে কর আদায়, অর্থনীতিতে কি এর ফলে সুবাতাস?
সমস্ত হার্ট অ্যাটাক কি এমআই?
সব হার্ট অ্যাটাকই প্রধানত এমআই, তবে এর ভাগ রয়েছে। একটি হল, সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ বা সাডেন কার্ডিয়াক অ্য়ারেস্ট। জানালেন ডা. দানী। বললেন, হার্ট অ্যাটাকের ঘটনার মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। কিন্তু ১৫ থেকে ২০ শতাংশের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু অন্য রকম। কী সেটা? দানী জানাচ্ছেন, হঠাৎ করে পাম্পিংয়ের ক্ষেত্রে হার্ট অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। হয়তো হার্টের পেশীগুলি স্থূল হয়ে গিয়েছে, এতে করে আরও রক্তের প্রয়োজন হয়ে পড়ছে সেগুলির। অথবা ইলেকট্রিক্যাল বা বৈদ্যুতিক অস্বাভাবিকতা তৈরি হয়ে গিয়েছে হার্টের পেশীতে। অনেক অ্যাথলিটের মৃত্যু হয়েছে এর ফলে।
তাই সুস্থ হার্ট রাখতে গেলে, চাপ নেবেন না। হাঁটাচলা করবেন ভালমতো, হালকা এক্সসারসাইজও। খাওয়াদাওয়া ঠিকঠাক করবেন। পারিবারিক হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস থাকলে দেরি না-করে হার্ট চেক আপ করাবেন, ওই হিস্ট্রি না-থাকলেও কোলেস্টেরল সুগার যদি থাকে, তা হলেও চালাবেন নিয়ম করে হৃদয় পরীক্ষাপর্ব।
Read full story in English