Advertisment

গর্ভস্থ শিশুও কোভিড ১৯ সংক্রমিত হতে পারে?

আইসিএমআর কোভিড ১৯ অতিমারীর সময়ে গর্ভবতী মহিলাদের তদারকির বিষয়ে গাইড্যান্স প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, এই উল্লম্ব সংক্রমণ সম্ভব, যদিও এতে গর্ভবতীদের একটি অংশ সংক্রমিত হয়েছেন, তবে সদ্যোজাতদের ক্ষেত্রে এর সংখ্যা জানা যায়নি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

মার্কিন সংস্থা সিডিসি এখনও অবশ্য উল্লম্ব সংক্রমণের কথা বলতে চাইছে না (প্রতীকী ছবি)

এতদিন ধরে নেওয়া হচ্ছিল গর্ভবতী মহিলাদের থেকে তাঁদের অনাগত সন্তানের করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে না। এবার জানা গেল, তেমনটা সম্ভব।

Advertisment

এ সপ্তাহের গোড়ায় ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যকর্মী ও ধাত্রীরোগবিশেষজ্ঞদের উল্লম্ব সংক্রমণ (vertical transmission) বিষয়ে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা নেবার কথা বলেছে।

গার্গল করলে গলা ব্যথা সারে, করোনা আটকায় না

উল্লম্ব সংক্রমণ কী?

গর্ভবতী মহিলা থেকে শিশুতে সংক্রমণকে উল্লম্ব সংক্রমণ বলা হয়। এটি জন্মের পূর্বে, জন্মের কয়েকসপ্তাহ আগে থেকে কয়েক সপ্তাহ পরের মধ্যে বা জন্মের পরে হতে পারে।

এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। কেবল এই কারণে নয় যে এর কারণে সদ্যোজাতরা অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, কখন কীভাবে তা ঘটবে তাও স্পষ্ট নয়। ২০১৭ সালে সেল হোস্ট মাইক্রোবে এক আর্টিকেলে পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা লিখেছেন, বর্ধমান ভ্রূণে মাইক্রোব সংক্রমণের ভয়ানক প্রভাব ছাড়াও গর্ভাবস্থায় প্ল্যাজেন্টার প্রতিরোধ ভেদ করে উল্লম্ব সংক্রমণ ঘটাতে সম্ভব এমন সব প্যাথোজেন রয়েছে, যেগুলি সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না।

উল্লম্ব সংক্রমণ সম্ভব ভাইরাসের মধ্যে রয়েছে এইচআইভি, জিকা, রুবেলা এবং হারপিস। বাস্তবত, জিকা সংক্রমণের সময়ে বছর দুয়েক আগে জানা গিয়েছিল সদ্যোজাতরা সমস্যা নিয়ে জন্মাতে পারে।

কোভিড ১৯ ও বায়ুদূষণের সম্পর্ক

 আইসিএমআর কী বলছে?

আইসিএমআর কোভিড ১৯ অতিমারীর সময়ে গর্ভবতী মহিলাদের তদারকির বিষয়ে গাইড্যান্স প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, এই উল্লম্ব সংক্রমণ সম্ভব, যদিও এতে গর্ভবতীদের একটি অংশ সংক্রমিত হয়েছেন, তবে সদ্যোজাতদের ক্ষেত্রে এর সংখ্যা জানা যায়নি।

এই গাইডলাইনে স্বাস্থ্যকর্মীদের শুরু থেকে এ ধরনের কেস অনুসরণ করতে বলা হয়েছে, জন্মের আগে ও পরে শিশু ও মা-কে প্রয়োজনীয় তদারকি করতে বলা হয়েছে এবং যথাযথ পিপিই ব্যবহার করতে বলা হয়েছে, যাতে মায়ের থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সংক্রমণ না ছড়ায়- বিশেষ করে প্রসবের সময়ে যখন মায়ের দেহরস শিশু ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিধি মেনে শিশুকে জন্মের পর আলাদা রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে- এই সঙ্গে এক্ষেত্রে কোভিড ১৯ সংক্রমিত শিশুর শরীরে যেসব জটিলতা ঘটতে পারে সে সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের অভাবের উল্লেখও করা হয়েছে। ঘটনাক্রমে এই নথি প্রকাশিত হবার কয়েকদিন আগে ৩ এপ্রিল ভারতে প্রথম কোভিড ১৯ সংক্রমিত মহিলার প্রসব হয় এইমসে। শিশুর কোভিড ১৯ হয়নি। শিশুর বাবা, যিনি নিজে এইমসের রেসিডেন্ট চিকিৎসক এবং তাঁর মা দুজনেই পজিটিভ বলে চিহ্নিত হন।

কোভিড ১৯ কীভাবে হামের টীকাকরণ কর্মসূচি ব্যাহত করছে?

উল্লম্ব সংক্রমণ নিয়ে বৈজ্ঞানিক তথ্য কী বলছে?

গত ১২ ফেব্রুয়ারি উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৯জন গর্ভবতী মহিলার পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে ল্যান্সেট জার্নালে তাঁদের সিদ্ধান্ত জানান।

“গর্ভবতী কোভিড ১৯ সংক্রমিত নিউমোনিয়া আক্রান্ত মহিলাদের রিপোর্ট গর্ভবতী নন এমন প্রাপ্তবয়স্ক কোভিড ১৯ নিউমোনিয়া আক্রান্তদের সমতুল্য। এই স্বল্পসংখ্যক কয়েকজনকে নিয়ে গবেষণায় এখনও পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে যাঁরা কোভিড ১৯ আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের গর্ভ থেকে উল্লম্ব সংক্রমণের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।”

দশ দিন পর, কোভিড ১৯ সংক্রান্ত এই বোঝাপড়া পাল্টে যাচ্ছে।

কোভিড ১৯ নিয়ে জন্ম- একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য একদল গবেষক জানিয়েছেন ২২ ফেব্রুয়ারি উহানের রেনমিন হাসপাতালে একজন শিশুকন্যার জন্ম হয়। জন্মের ঠিক পরেই এই শিশুর মধ্যে ভাইরাস ও তার অ্যান্টিবডির উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। অ্যান্টিবডির উপস্থিতির কারণে গবেষকরা মনে করছেন সংক্রমণ ঘটেছে গর্ভাশয় থেকে।

উদাহরণ এই একটিই নয়। গত মাসে এনফিল্ডের নর্থ মিডলসেক্স হাসপাতালে কোভিড ১৯ সংক্রমিত মা এক সন্তানের জন্ম দেন, জন্মের ঠিক পরেই তারও টেস্ট পজিটিভ হয়। চিকিৎসকরা যদিও নিশ্চিত নন যে এর কারণ উল্লম্ব সংক্রমণ নাকি জন্মের পর অন্য কোথাও থেকে এই সংক্রমণ ঘটেছে, তা সত্ত্বেও এনএইচএস এখন বলছে, “যেহেতু এটা একটা নতুন ভাইরাস আমাদের এ সম্পর্কে অনেক কিছু জানা বাকি। গর্ভপাতের সংখ্যাবৃদ্ধির ঝুঁকির কোনও তথ্য আমাদের হাতে নেই। মায়ের থেকে শিশুর সংক্রমণ সম্ভব এমন প্রমাণ রয়েছে, যদিও এমন তথ্য মাত্র একটিই। এর তাৎপর্য এখনও অজানা, তবে আমরা মা ও শিশুর উপর নজর রাখছি।”

মার্কিন দৃ্ষ্টিভঙ্গি:

মার্কিন সংস্থা সিডিসি এখনও অবশ্য উল্লম্ব সংক্রমণের কথা বলতে চাইছে না। তারা বলছে, “গর্ভবতী মায়ের থেকে শিশুর শরীরে সংক্রমণ ঘচবার কথা নয়, তবে সদ্যোজাত জন্মাবার পর ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে সংক্রমণ সম্ভব। জন্মের পর অতি অল্প সংখ্যক শিশুই পজিটিভ হয়েছে। তবে তারা জন্মের আগে না পরে সংক্রমিত হয়েছে তা এখনও অজ্ঞাত। মাতৃদুগ্ধের মত মায়ের শারীরিক নমুনায় ভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়েনি।”

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

coronavirus
Advertisment