ইতিহাসে প্রথমবার! এক ওষুধেই নির্মূল হবে ক্যানসারের মতো মারণ ব্যাধি! এমনই দাবি মার্কিন গবেষকদের। ১৮ জন ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর ওপর পরীক্ষা করার পরই এমন সিদ্ধাতে এসেছেন গবেষকরা। তবে তাঁদের দাবি, এই বিষয়ে আরও অনেক গবেষণার প্রয়োজন। ১৮ জন রেক্টাল ক্যানসার রোগীকে একই ওষুধ দেওয়া হয়েছিল ৬ মাস ধরে। আর ৬ মাসের মাথায় সকলেই ক্যানসারকে হারিয়ে নতুন জীবনের পথে। বিশেষজ্ঞরা এই ওষুধকে ‘মিরাকল ড্রাগ’ নামেও উল্লেখ করেছেন। এই ঘটনা ক্যানসার চিকিৎসায় এক আলোক দিশা দেখাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে দেখা গিয়েছে যে ১৮ জন ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর ওপর এই বিশেষ ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে, তারা এখন সকলেই সুস্থ রয়েছেন হারিয়েছেন ক্যানসারের মতো মারণ ব্যাধিকে। ডোস্টারলিম্যাব (Dostarlimab) নামে এই ওষুধকেই এখন মিরাকল ড্রাগ হিসাবে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ক্যানসারের মতো মারণ ব্যাধিকে কীভাবে হারানো যায় তা নিয়ে গবেষণা চলছে।
এই মিরাকেল ড্রাগ নিয়ে আরও কিছু গবেষণা বাকি রয়েছে। আর সেই সকল পর্ব সফল ভাবে মিটলেই ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন এক দিগন্ত উন্মোচিত হতে চলেছে বলেই মনে করছেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা। গবেষকরা জানান, যে ১৮ জনকে ডোস্টারলিম্যাব (Dostarlimab) নামে এই ওষুধ দেওয়া হয়েছিল প্রতি ক্ষেত্রেই সকলকেই তার আগে কেমোথেরাপি এবং রেডিয়েশনও দেওয়া হয়েছিল। কারওর ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারও করতে হয়। কিন্তু তাতে বাগে আনা যায়নি কর্কট রোগকে। তার পরই এই মহার্ঘ্য ওষুধের প্রয়োগ করা শুরু হয়। আর তাতেই ঘটে মিরাকল। মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই সকলেই ক্যানসার মুক্ত হয়েছেন। ৬ থেকে ২৫ মাস পর্যন্ত আক্রান্তদের ওপর পর্যবেক্ষণ জারি রাখা হয়। তাতে দেখা গেছে মারণ রোগ তাদের শরীরে আর থাবা বসাতে পারেনি।
ট্রায়ালে নতুন কী আছে?
নয়া এই রিসার্চে দেখা গেছে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন রোগীর ওপর বাধ্যতামূলক নয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে শুধু মাত্র ওষুধের প্রয়োগ করেই ক্যানসার সম্পূর্ণ রূপে নিরাময় করা হয়েছে। কেমোথেরাপি তখনই দেয়া হয়, যখন ডাক্তাররা মনে করেন যে, ক্যান্সারের সেল শরীরের একাধিক জায়গায় আছে। অনেক সময় ক্যান্সার সেল অনেক দূর পর্যন্ত যায়। যেমন লিভার কিংবা ফুসফুসে গিয়ে ছড়াতে থাকে। রেডিওথেরাপির মাধ্যমেও ক্যান্সার সেল ধ্বংস করা যায়। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট ছোট জায়গায় রেডিও থেরাপি দেয়া যায়। তবে এর মাধ্যমে শরীরের সুস্থ কোষগুলো নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। ট্রায়ালের বিষয়ে বিশিষ্ট ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডঃ জুলকা বলেছেন, কেমো এবং রেডিওথেরাপির তুলনায় এগুলি দ্রুত কাজ করে এবং রোগীর শরীরে কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
টি-সেল কী?
টি-সেল হল এক ধরণের শ্বেত রক্তকণিকা যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা ও তার (ইমিউন সিস্টেম) কার্যকলাপের অন্যতম অঙ্গ। এই টি-সেল শরীরে প্রবেশ করা ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণকে প্রতিহত করে আমাদের সুস্থতা বজায় রাখে।
টি-সেল ক্যান্সার থেরাপি কী?
বিজ্ঞানীরা কৃত্তিম উপায়ে এই রোগ প্রতিরোধকারী টি-সেল বা শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে সেগুলিকে ক্যান্সারের টিউমার বা ক্যান্সার কোষকে (ম্যালিগন্যান্ট টিউমার) ধ্বংসের উদ্দেশ্যে চালিত করছেন। এর ফলে কেমোথেরাপি ছাড়াই ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করা সম্ভব। বিজ্ঞানীরা রক্ত থেকে শ্বেত কণিকা (টি-সেল) সংগ্রহ করে সেগুলিকে পরীক্ষাগারে কৃত্তিম উপায়ে বিভাজিত ও বৃদ্ধি ঘটাচ্ছেন। এর পর ওই কোষগুলির জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে সেগুলিকে এমন ভাবে চালিত করছেন, যাতে কৃত্তিম ভাবে তৈরি ওই কোষগুলি শুধুমাত্র ক্যান্সার কোষকেই ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে চালিত হয়।
ভারতে এই চিকিৎসা শুরু করা কী সম্ভব?
ওষুধটি যদি ভবিষ্যতে ব্যাপকভাবে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয় তাও এর খরচ থাকবে সাধারণের নাগালের বাইরেই। কারণ এই ‘মিরাকেল ড্রাগের’ প্রতি ডোজের দাম ৮.৫৫ লক্ষ টাকা। সেক্ষেত্রে ভারতের মত দেশে খরচ একটি প্রধান বাঁধা হয়ে উঠতে পারে। AIIMS-দিল্লির সার্জিক্যাল অনকোলজির অধ্যাপক ডাঃ এম ডি রায় বলেছেন, কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপির মাধ্যমেও ভালভাবে ক্যানসার আক্রান্তদের চিকিৎসা সম্ভব। তিনি বলেন, প্রায় ১০ থেকে ১৫% ক্যান্সার রোগীদের আসলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না। ইমিউনোথেরাপির সমস্যা হল যে সেগুলি ভারতের বেশিরভাগ লোকের জন্য এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং অসাধ্য। অবশ্যই যারা AIIMS-এ আসছেন তাদের জন্য। একটি জেনেটিক পরীক্ষার জন্য ৩০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে, এখানকার রোগীদের পক্ষে এত খরচ বহন করা সম্ভব নয়”।
আরও পড়ুন: Explained: স্মলপক্সের ভ্যাক্সিন নেওয়া থাকলে কি মাঙ্কিপক্স হবে না? আশঙ্কা-মোচন উত্তরটা জেনে নিন
তিনি আরও বলেছেন, নির্ভুল ওষুধ, যেমন বিশেষ ধরনের ক্যান্সারের জন্য বিশেষ ইমিউনোথেরাপি ওষুধ ব্যবহার করা, ভারতে এখনও একটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। "ক্যান্সারের চিকিত্সার জন্য নির্ভুল ওষুধ ভারতেও তৈরি সম্ভব, তবে এটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এটি বাজারে আসতে কমপক্ষে দশ বছর সময় লাগবে,”।
ইমিউনোথেরাপির খরচ কত?
ইমিউনোথেরাপি চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়। রোগীদের প্রায় ৬ মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত এই চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে খরচের পরিমাণ প্রায় ২৫ থেকে ৫০ লক্ষ টাকার হয়ে থাকে যা ভারতের মত দেশের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।