/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/08/pm-narendra-modi.jpg)
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লায় ভাষণ দিচ্ছেন (ছবি নীরজ প্রিয়দর্শী)
যাঁরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার সঙ্গে পরিচিত, তাঁরা জানেন, কম্বাইন্ড ডিফেন্স সার্ভিস বলে একটি পরীক্ষা হয়। যাকে বলে সিডিএস। সিডিএস-এর সে অর্থের সঙ্গে আরেকটি নতুন অর্থ যোগ করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে তিনি জানিয়েছেন, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ নামের একটি পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে এ দেশে। এই দায়িত্বে যিনি থাকবেন, তাঁর কাজ হবে তিনটি সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ স্তরে কার্যকর নেতৃত্বদান এবং তাদের মধ্যে সমন্বয়ের উন্নতিসাধন করা।
চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) অফিস কী?
সিডিএস হল উচ্চপর্যায়ের একটি সামরিক দফতর যা তিন সশস্ত্র বাহিনীর কাজ দেখাশোনা করে এবং তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে এবং যে কোনও অপারেশনের যৌথত্ব সহ দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে। এই অফিস ভারতের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করবে।
প্রায় সমস্ত গণতান্ত্রিক দেশেই সিডিএসকে বিভিন্ন সামরিক বাহিনীর অন্তর্কলহের উপরে রাখা হয় এবং সমস্ত সামরিক বাহিনীর প্রধানদের তাৎক্ষণিক কাজের দেখাশোনার দায়িত্ব থাকে সিডিএসের উপরেই। যুদ্ধের সময়ে সিডিএসের ভূমিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন, প্রধানমন্ত্রী মোদী কেন আলাদা চোখে দেখতে বললেন সম্পদ সৃষ্টিকারীদের?
যেসব দেশের সেনাবাহিনী শক্তিশালী, তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই এই পদ রয়েছে। তবে তাদের ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব এক এক দেশে এক এক রকম। আমেরিকায় জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ কমিটি যেমন অতীব ক্ষমতাশালী একটি পদ।
তিনি সর্বোচ্চ সামরিক অফিসার এবং প্রেসিডেন্টের সামরিক উপদেষ্টা এবং তাঁর ক্ষমতা ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কাউন্সিল ও ডিফেন্স সেক্রেটারির উপর।
তাহলে এতদিন কেন ভারত কোনও সিডিএস নিযুক্ত করেনি?
ভারতে প্রায় এরকম একটা পদ রয়েছে, যার নাম চেয়ারম্যান, চিফস অফ স্টাফ কমিটি। কিন্তু এ দফতরের দাঁতনখ নেই। তিনটি সামরিক বাহিনীর মধ্যে যিনি সবচেয়ে সিনিয়র, তিনিই এই পদে আসীন হন। এখন এই পদে রয়েছেন এয়ার চিফ মার্শাল বীরেন্দর সিং ধানোয়া। ৩১ মে তিনি এ পদের দায়িত্ব নেন। তাঁর আগে এই পদে ছিলেন নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল সুনীল লাম্বা। ধানোয়া ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অবসর নেবেন, অর্থাৎ এ পদে তাঁর মেয়াদ মাত্র চার মাসের।
২০১৫ সালে তৎকালীন প্রতিরক্ষমন্ত্রী মনোহর পরির্রকর বলেছিলেন সিওএসসির প্রথা সন্তোষজনক নয়। তিন বাহিনীর মধ্যে কোনও সংহতি না থাকার ফলে এক তো অদক্ষতা আছেই, এর পর একই সম্পদের জন্য দুবার অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
প্রথম সিজিএসের প্রস্তাব আসে কার্গিল রিভিউ কমিটির কাছ থেকে, ২০০০ সালে। বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন মন্ত্রিগোষ্ঠী ওই রিভিউ কমিটির রিপোর্ট ও প্রস্তাব খতিয়ে দেখে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটির কাছে সিডিএস পদের জন্য প্রসাব করে।
এ পদের প্রস্তুতির জন্য সরকার ২০০২ সালের শেষ দিকে ইন্টিগ্রেটেড ডিফেন্স সার্ভিস (আইডিএস) তৈরি করে, যা সিডিএসের সচিব হিসেবে কাজ করবে। কবে ১৭ বছর কাটলেও তা আর হয়ে ওঠেনি।
আরও পড়ুন, ১৫ অগাস্ট দিনটিতেই কেন পালিত হয় ভারতের স্বাধীনতা দিবস?
প্রস্তাবের কী হল?
তিন বাহিনীর মধ্যে কোনও ঐকমত্য হয়নি, বিশেষ করে বিমানবাহিনী এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল। তৎকালীন সময়ে বিরোধী আসনে থাকা কংগ্রেস বলেছিল সিডিএস পদের কাছে সামরিক শক্তি এইভাবে ঘনীভূত করাটা ঠিক হবে না। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকও একই কারণে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেছিল সামরিক ও অসামরিক বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক এর ফলে সংকটের মুখে পড়তে পারে।
অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল এইচ এস পনগের কথায় "সিডিএস-এর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকবে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর, যা প্রতিরক্ষামন্ত্রক একেবারেই চায় না।" তাঁর বক্তব্য প্রতিরক্ষামন্ত্রকের আমলাতন্ত্র তিন বাহিনীর উপর থেকে নিজেদের ক্ষমতা সরতে দিতে চায় না। একই সঙ্গে মন্ত্রক এক বাহিনীকে অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবহারও করে থাকে।
জেনারেল পনগ আরও বলেন," প্রতিটি বাহিনীর প্রধানরা মনে করেন সিডিএসের আওতায় কাজ করতে হলে তাঁরা নিজেরা বাস্তবর পরিচয়হীন হয়ে পড়বেন।"
আয়তনে খাটো বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর আশঙ্কা সিডিএস হবেন সেনাবাহিনীর মধ্যে থেকেই, যেহেতু তারা আয়তনে বড়। বিমানবাহিনীর তরফ থেকে দীর্ঘ দিন ধরে বলে আসা হচ্ছে যে মার্কিন বা অন্য পশ্চিমি সামরিকবাহিনীর মত অভিযান চালায় না ভারতীয় বাহিনী, ফলে সিডিএস প্রয়োজন নেই ভারতের।
২০১১ সালে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস দল, যারা সিডিএসের বিরোধিতা করেছিল, তারাই প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা পর্যালোচনায় নরেশ চন্দ্র কমিটি তৈরি করে। ১৪ সদস্যের ওই কমিটিতে ছিলেন বিভিন্ন বাহিনীর এবসরপ্রপাত প্রধান ও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। কমিটি প্রস্তাব দেয় সিওএসসি চেয়ারম্যানের পদ দুবছরের মেয়াদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হোক। সিওএসসি-র চেয়ারম্যানের হাতে আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা দেওয়ার কথা প্রস্তাব করে ওই কমিটি। কার্যত সিডিএস নাম ব্যবহার না-করে সিডিএস পদের কথাই বলা হয়েছিল ওই প্রস্তাবে।
সামরিক বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান উপদেষ্টা কে?
কার্যত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এই কাজ করে থাকেন। ২০১৮ সালে প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা কমিটি তৈরির পর থেকে বিশেষভাবে এই ভারা তাঁর উপর দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটির চেয়ারম্যান এনএসএ প্রধান অজিত দোভাল। তিন সামরিক বাহিনীর প্রধান ছাড়াও তিনজন সচিব রয়েছেন ওই কমিটিতে।
Read the Full Story in English