Advertisment

Explained: এক দেশ-এক ভোটের ভাবনা, কী কী চ্যালেঞ্জ?

সংসদ এবং রাজ্যের নির্বাচনগুলো ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত একযোগে হয়েছিল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
EVM

ইভিএম

লোকসভা এবং বিধানসভায় একযোগে নির্বাচন আয়োজনের চ্যালেঞ্জগুলো হল- প্রায় ৩০ লক্ষ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এবং ভোটার-ভেরিফাইড পেপার অডিট ট্রেল (ভিভিপিএটি) মেশিনের ব্যবস্থা করতে হবে। সারা দেশে বিপুল সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। যা, অনেক প্রাক্তন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) ধারণা, করা কার্যত অসম্ভব।

Advertisment

সংসদ এবং রাজ্যের নির্বাচনগুলো ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু, বছরের পর বছর ধরে বিধানসভা এবং লোকসভাগুলো তাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে গিয়েছিল। যার ফলে, নির্বাচনগুলো একে অপরের সঙ্গে সমন্বয়হীন হয়ে পড়ে। বর্তমানে, লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে অন্ধ্র, অরুণাচল প্রদেশ, ওড়িশা এবং সিকিমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০২২ সালে, তৎকালীন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্র বলেছিলেন যে ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) একযোগে নির্বাচন করার জন্য 'পুরোপুরি প্রস্তুত' ছিল। বর্তমান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার অবশ্য শুক্রবারের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ভোটিং মেশিন
একযোগে নির্বাচন করতে ইসির হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৩০ লক্ষ ইভিএম লাগবে। প্রাক্তন সিইসি ওপি রাওয়াত বলেছেন যে সরকার ইসিআইকে ২০১৫ সালে একযোগে নির্বাচনের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বলেছিল। রাওয়াত সেই সময়ে নির্বাচন কমিশনারদের একজন ছিলেন। রাওয়াত বলেন, 'নির্বাচন কমিশন ১৯৮২ সাল থেকে সুপারিশ করে আসছে যে লোকসভার সঙ্গে একইসঙ্গে নির্বাচন হয় না, এমন রাজ্যগুলোর আবার একইসঙ্গে নির্বাচন করাতে একটি সংশোধনী আনা উচিত। ২০১৫ সালে, আমরা সরকারের কাছে একটি সম্ভাব্য প্রস্তাব জমা দিয়েছিলাম। এজন্য সংবিধান এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন সংশোধনের প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট জানিয়েছে যে, আরও ইভিএম এবং ভিভিপিএটির জন্য আরও সময় এবং অর্থের প্রয়োজন। মোট প্রায় ৩০ লক্ষ ইভিএম নিয়ন্ত্রণ ইউনিট প্রয়োজন হবে।'

মার্চ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের ১৩.০৬ লক্ষ কন্ট্রোল ইউনিট (সিইউএস) এবং ১৭.৭৭ লক্ষ ব্যালট ইউনিট (বিইউএস) ইভিএম ছিল। সংসদে এমনটাই জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, আরও ৯.০৯ লক্ষ সিইউএস এবং ১৩.২৬ লক্ষ বিইউএস উৎপাদনের প্রক্রিয়া চলছে। যা মোট ২২.১৫ লক্ষ সিইউএস এবং ৩১.০৩ লক্ষ বিইউএসে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি-গান্ধীনগরের ডিরেক্টর এবং ইসিআইয়ের ইভিএম সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির সদস্য অধ্যাপক রজত মুনা বলেছেন যে, ৬-৭ লক্ষ ইভিএম তৈরি করতে প্রায় একবছর সময় লেগেছে। যার ফলে ২০২৪ সালে একযোগে নির্বাচন হওয়া অত্যন্ত কঠিন।

ভোটের খরচ
সরকার এবং সংসদের কমিটিতে প্রস্তাব জমা দেওয়ার সময়, নির্বাচন কমিশন বছরের পর বছর ধরে একযোগে নির্বাচন করতে গেলে কী করতে হবে, তা জানিয়েছে। কর্মী, জনঅভিযোগ, আইন এবং বিচার সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি তার ২০১৫ সালের প্রতিবেদনে নির্বাচন কমিশন দ্বারা নির্দেশিত 'বেশ কিছু অসুবিধা'র কথা উল্লেখ করেছে।

কমিটি তার প্রতিবেদনে বলেছে, 'নির্বাচন কমিশনের দ্বারা উল্লেখ করা প্রধান সমস্যা হল যে নির্বাচন একযোগে পরিচালনার জন্য বিপুল সংখ্যক ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন এবং ভোটার ভেরিফাইয়েবল পেপার অডিট ট্রেল মেশিন কেনা প্রয়োজন। একযোগে নির্বাচন পরিচালনার জন্য, কমিশন আশা করে যে ইভিএম এবং ভিভিপিএটি সংগ্রহের জন্য মোট ৯,২৮৪.১৫ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এই সব মেশিনগুলো প্রতি ১৫ বছর অন্তর বদলাতে হবে। এজন্যও অর্থ ব্যয় করতে হবে। তার ওপর, এই মেশিনগুলো সংরক্ষণ করলে গুদামজাত করলে, তার জন্য আলাদা ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।'

রাওয়াত বলেন, 'এখনও পর্যন্ত ভারতীয় নির্বাচন কমিশন বিশ্বের সবচেয়ে কম খরচে নির্বাচন পরিচালনা করে। এক ডলার, এক ভোট। অর্থাৎ প্রতিটি ইভিএম একাধিক নির্বাচনে ব্যবহৃত হয়। একইসঙ্গে ভোট হলে তিনটি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে, কারণ তাদের আয়ুষ্কাল প্রায় ১৫ বছর। ২০২১ সালে সংসদে দেওয়া উত্তর অনুসারে, কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত, রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে নির্বাচন আয়োজনের জন্য মোট ৫,৮১৪.২৯ কোটি টাকা দিয়েছে।'

আরও পড়ুন- ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’-এর ডাক মোদীর, এ আবার কোন নতুন ‘প্ল্যানিং’?

কেন্দ্রীয় বাহিনী, ভোটকর্মী
ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীন আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা আরেকটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। রাওয়াত জানিয়েছেন যে, বেশিরভাগ রাজ্যই নির্বাচনের সময় কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে থাকে। পোলিং পার্টির পাশাপাশি বাহিনীগুলো সরানো বা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া আরেকটি সমস্যা। যা সমাধান করতে হবে।

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা
প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টিএস কৃষ্ণমূর্তি বলেছিলেন যে একযোগে নির্বাচনের ধারণার সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। তিনি বলেন, 'এটি সময়, ব্যয় এবং প্রশাসনিক শ্রম কমাবে। সমস্যা আছে। কিন্তু সেগুলো সমাধান করা যাবে না, এমনটা নয়। তিন-চার মাসের ব্যবধানে নির্বাচন হলে, তা করাই যেতে পারে।'

Election evm Modi Government
Advertisment