ভারতের চন্দ্রযান-৩ এবং রাশিয়ার লুনা ২৫ উভয়ই চাঁদের কক্ষপথে রয়েছে। আগামী সপ্তাহে চাঁদে অবতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। লুনা ২৫ প্রথমে ২১ আগস্ট চাঁদে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর, চন্দ্রযান-৩ সম্ভবত দুই দিন পরে ২৩ আগস্ট নামবে। উভয় অভিযানই চাঁদের এমন একটি অঞ্চলে (দক্ষিণ মেরুর কাছে) করা হচ্ছে, যেখানে আগে কোনও মহাকাশযান যায়নি। ১৯৭৬ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের লুনা ২৪ অবতরণের পর, শুধুমাত্র চিন চাঁদে ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে যথাক্রমে চাঙ্গা ৩ এবং চাঙ্গা ৪ মহাকাশযান অবতরণ করাতে সক্ষম হয়েছে। আর, ভারত ও রাশিয়া উভয়েই তাদের প্রথম আলতোভাবে সফল অবতরণা করানোর চেষ্টা করছে।
যখন লুনা রওনা দিয়েছিল
লুনা ২৫ একটি শক্তিশালী রকেটে চড়ে ১০ আগস্ট উৎক্ষেপণের মাত্র ছয় দিনের মধ্যে চন্দ্রের কক্ষপথে পৌঁছেছে। আর, ১৪ জুলাই উৎক্ষেপণের ২৩ দিন পর চন্দ্রযান-৩ পৌঁছল। কারণ ইসরোর কাছে এখনও চন্দ্রের কক্ষপথে সরাসরি যেতে যথেষ্ট শক্তিশালী রকেট নেই। চন্দ্রযান-৩ এর সার্কিট রুট অবশ্য শক্তি ও খরচ বাঁচাতে সাহায্য করেছে। এখন যেহেতু উভয় মহাকাশযানই চন্দ্রের কক্ষপথে রয়েছে, লুনা ২৫-এর চন্দ্রযান-৩ এর থেকে বিশেষ কোনও সুবিধা নেই যা এটির প্রাথমিক অবতরণকে সহজতর করবে। এটা এমন নয় যে লুনা ২৫, চন্দ্রযান-3 এর চেয়ে দ্রুত চন্দ্রপৃষ্ঠে নামতে পারবে। কারণ, অবতরণের পছন্দসই তারিখ বিভিন্ন কারণ দ্বারা নির্ধারিত হয়।
চাঁদে দিনের শুরু
২৩ আগস্ট চাঁদে দিনের শুরু। একটি চন্দ্রদিন পৃথিবীর প্রায় ১৪ দিনের সমান। এই সময় চাঁদের ওই পৃষ্ঠে টানা সূর্যের আলো পাওয়া যায়। চন্দ্রযান-৩-এর যন্ত্রগুলোর আয়ু মাত্র একটি চন্দ্র দিবস বা ১৪টি পৃথিবী দিন। কারণ এগুলো সৌরচালিত যন্ত্র এবং সচল থাকার জন্য সূর্যালোকের প্রয়োজন হবে। রাতের সময় চাঁদ অত্যন্ত ঠান্ডা হয়। তাপমাত্রা চলে যায় মাইনাস ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। এই ধরনের কম তাপমাত্রায় কাজ করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি নকশা চন্দ্রযান-৩-এর করা হয়নি। তাই, চন্দ্রযান ৩-এর ইলেকট্রনিক্স রাতে হিমায়িত হয়ে যেতে পারে এবং কার্যকারিতা হারাতে পারে।
অবতরণে সময়টা গুরুত্বপূর্ণ
পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সর্বাধিক সময় বাড়ানোর লক্ষ্যে চন্দ্রযান-৩-এর চন্দ্রদিনের শুরুতে অবতরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনও কারণে ২৩ আগস্ট অবতরণের চেষ্টা করতে না-পারলে পরের দিন চন্দ্রযান-৩-এর আরেকবার অবতরণের চেষ্টা করার কথা। যদি তা-ও সম্ভব না-হয়, তাহলে এটি পুরো একমাস অপেক্ষা করবে (প্রায় ২৯ দিন)- চন্দ্র দিন এবং চন্দ্র রাত্রি শেষ হওয়ার জন্য। সোজা কথায়, ২৩ আগস্টের আগে চন্দ্রযান-৩ অবতরণ করতে পারবে না এবং ২৪ আগস্টের পরে অবতরণ করতে চাইবে না।
লুনার জেনারেটর আছে
লুনা ২৫-এর এমন কোনও বিধিনিষেধ নেই। এটিও সৌরশক্তি চালিত। তবে, এটিতে একটি অনবোর্ড জেনারেটরও রয়েছে যা রাতের সময় যন্ত্রগুলোতে তাপ এবং শক্তি সরবরাহ করে। এটির জীবনকাল এক বছরের, এবং এটির অবতরণের তারিখের পছন্দটি চাঁদে কতটা সময় সূর্যালোক রয়েছে, তা দ্বারা নির্ধারিত হচ্ছে না। যদিও বলা হচ্ছে যে অবতরণগুলো 'দক্ষিণ মেরুর' কাছাকাছি হবে, তবে অবতরণের স্থান চাঁদের মেরু অঞ্চলে নয়। চন্দ্রযান-৩-এর জন্য নির্বাচিত স্থানটি প্রায় ৬৮ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ এবং লুনা ২৫-এর স্থানটি ৭০ ডিগ্রি দক্ষিণের কাছাকাছি। কিন্তু, এগুলো এখনও চাঁদে অন্য যে কোনও অবতরণের চেয়ে দক্ষিণে অনেক দূরে রয়েছে। চাঁদের নিরক্ষীয় অঞ্চলে এখনও পর্যন্ত সমস্ত চন্দ্রযানের অবতরণ ঘটেছে, কারণ প্রধানত চাঁদের এই অঞ্চলটি সর্বাধিক সূর্যালোক পায়।
আরও পড়ুন- প্রপালশন মডিউল থেকে আলাদা হয়েছে চন্দ্রযান ৩, এরপর কী?
দক্ষিণ মেরুই নিশানা
চন্দ্রযান-৩ এবং লুনা ২৫-এর ল্যান্ডিং সাইটের মধ্যে প্রকৃত দূরত্ব চন্দ্রপৃষ্ঠে কয়েকশো কিলোমিটার হতে পারে। চাঁদের মেরু অঞ্চলটি ভবিষ্যতে আরও ব্যস্ত হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ, বেশ কয়েকটি আসন্ন অভিযান চন্দ্রের দক্ষিণ মেরুকে তাদের নিশানা করেছে। এর একটাই লক্ষ্য, চাঁদের মধ্যে হিমায়িত জলের অনুসন্ধান।