'যাত্রার জন্য ধন্যবাদ, সাথী!'- ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) সোশ্যাল সাইট X-এ বৃহস্পতিবার এমনটাই পোস্ট করেছে। কারণ, চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডার ১৭ আগস্ট, এর প্রপালশন মডিউল থেকে আলাদা হয়ে গেছে। ল্যান্ডারটিতে রয়েছে ২৬ কিলো ভারী রোভার বিক্রম। যা চাঁদের পৃষ্ঠে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে। কথামতো এটি ২৩ আগস্ট, ভারতীয় সময় প্রায় ৫টা ৩০-এ চন্দ্রের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে। চন্দ্রযান ৩ হল চন্দ্রপৃষ্ঠের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযানের 'অবতরণ'-এর জন্য ভারতের দ্বিতীয় প্রচেষ্টা। এর আগের অভিযানে চন্দ্রযান ২ চূড়ান্ত অবতরণের সময় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
ল্যান্ডার ধীরে ধীরে আরও নীচে নামবে
ইসরোর কথা অনুযায়ী, আগামিকাল সন্ধ্যার জন্য পরিকল্পিত একটি ডি-বুস্টিং কৌশলের পরে ল্যান্ডার মডিউলটি ১৫৩x১৬৩ কিলোমিটারের বর্তমান কাছাকাছি-বৃত্তাকার কক্ষপথ থেকে চন্দ্র পৃষ্ঠের দিকে আরও নেমে যাবে। মোটের ওপর, ল্যান্ডারটি নিজে থেকে দুটি কক্ষপথ কমিয়ে আনার কৌশল নেবে। প্রথমে তা বৃত্তাকার ১০০x১০০ কিলোমিটার কক্ষপথে প্রবেশ করবে। তারপর ১০০x৩০ কিলোমিটার কক্ষপথে প্রবেশ করে চাঁদের আরও কাছাকাছি যাবে। এই কক্ষপথ থেকেই ২৩ আগস্ট ল্যান্ডারটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুকে স্পর্শ করার জন্য সেখানে চূড়ান্ত অবতরণ শুরু করবে।
সফট ল্যান্ডিং-এর চ্যালেঞ্জ
চন্দ্রযান-২, চাঁদে রোভার স্থাপনে ভারতের আগের চেষ্টা অবতরণের শেষ কয়েক মুহুর্ত পর্যন্ত কিন্তু, প্রত্যাশামাফিকই চলেছিল। সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার উভয়েরই সমস্যা আগের ল্যান্ডারটিকে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সঠিকভাবে অবতরণের জন্য প্রয়োজনীয় গতি কমাতে বাধা দিয়েছিল। মহাকাশ থেকে চাঁদের মাটিতে আলতোভাবে অবতরণ বেশ কঠিন। এজন্য, উন্নত প্রযুক্তিগত ক্ষমতা প্রয়োজন। এই ব্যাপারে মঙ্গল গ্রহ সংক্রান্ত গবেষণায় নাসার রোভার মিশনের বিজ্ঞানী অমিতাভ ঘোষ দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, 'কল্পনা করুন একটি মহাকাশযান মহাকাশে ছুটে চলেছে একটি বিমানের চেয়ে ১০ গুণ বেশি গতিতে। ওই মহাকাশযানকে চাঁদের পৃষ্ঠে আলতোভাবে অবতরণের আগে প্রায় স্থবির হয়ে পড়তে হবে। সবই কয়েক মিনিটের ব্যাপার। আরও গুরুত্বপূর্ণ যে, সমস্তটাই করতে হবে কোনও মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই। এটিই সংক্ষেপে চাঁদের পৃষ্ঠে আলতোভাবে অবতরণ।'
আরও পড়ুন- বিচারে ব্যবহৃত লিঙ্গ-সংক্রান্ত শব্দ, এব্যাপারে কী বলছে সুপ্রিম নির্দেশিকা?
অবতরণের উপযোগী করে তৈরি
এই সব সমস্যার কথা মাথায় রেখেই চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার মডিউলকে এবার চন্দ্রপৃষ্ঠে আলতোভাবে অবতরণের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। ল্যান্ডার যাতে প্রত্যাশিত প্রভাব কাটিয়ে চাঁদের পৃষ্ঠে শক্তভাবে টিকে থাকতে পারে, সেজন্য তার পা বা স্টিল্টগুলোকে শক্তিশালী করা হয়েছে। অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে মোকাবিলা করার জন্য একাধিক যন্ত্র, আপডেট করা সফটওয়্যার এবং একটি বড় জ্বালানি ট্যাংক রাখা হয়েছে। যা যে কোনও শেষ মুহূর্তের পরিবর্তন করতে হলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। এই ব্যাপারে ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমানাথ চন্দ্রযান ৩ উৎক্ষেপণের সময় বলেছিলেন, 'গত দুই বছরে আমরা সম্ভাব্যতার পরিপ্রেক্ষিতে যা ভাবতে পেরেছি, সেটা করেছি। আর, তার ওপর ভরসা করে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই আমরা চন্দ্রযান ৩ উৎক্ষেপণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।'