আফ্রিকার নামিবিয়া থেকে ভারতের মধ্যপ্রদেশের কুনো বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে আটটি চিতা নিয়ে আসা হয়েছে। ১৯৫২ সালে চিতাকে ভারতে বিলুপ্ত প্রাণী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তারপর থেকে দীর্ঘ ৭০ বছর পর আজ (১৭ সেপ্টেম্বর) মধ্যপ্রদেশের কুনো ন্যাশন্যাল পার্কে নরেন্দ্র মোদীর ৭২তম জন্মদিন উপলক্ষে নামিবিয়া থেকে আনা আটটি চিতা বাঘ ছাড়া হলো।
বন মন্ত্রকের আশা, দীর্ঘ সময় ধরে ভারতে বিলুপ্ত থাকা চিতার সংখ্যা এদেশে ধীরে ধীরে বাড়বে।
কেন ইরান থেকে চিতা আনা হল না?
একটা সময় ভারতে ছিল এশীয় প্রজাতির চিতা। বর্তমানে শুধু ইরানের বনেই এশীয় প্রজাতির চিতা আছে। সেটাও অবশ্য বেশি নয়, মাত্র ১২টি। তবে, আফ্রিকায় বেশ কিছু চিতা আছে। সেখানকার নামিবিয়া থেকেই আনা হল এই চিতাগুলোকে। প্রথমে চেষ্টা হয়েছিল এশীয় চিতা আনার। কারণ, তাহলে চিতাগুলো এদেশের জলবায়ুর সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারবে। কিন্তু, ইরান চিতা দিতে রাজি হয়নি। তাই আফ্রিকা থেকেই চিতা আনা হল। কিন্তু, বিশ্বজুড়ে চিতা কেন বিলুপ্তির পথে?
কেন শুধুমাত্র আফ্রিকা আর এশিয়াতেই চিতা পাওয়া যায়?
চিতাদের বিবর্তন সম্পর্কিত একটি জনপ্রিয় তত্ত্ব বলে যে তারা আরেকটি বড় বিড়াল প্রজাতির প্রাণী, আমেরিকার পুমার মতই একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে। যা থেকে বোঝা যায়, চিতা সেই সময়ে দুটি মহাদেশে সীমাবদ্ধ ছিল না। প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার বছর আগে, শেষ বরফ যুগের শেষের দিকে, চিতার বিলুপ্তির ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময়ই চিতা-সহ বিশ্বের অনেক প্রাণী উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। শুধুমাত্র এশিয়া এবং আফ্রিকাতেই থেকে যায় চিতা।
চিতার সংখ্যা কি দীর্ঘদিন ধরেই কম?
এমনকী, ১৯০০ সালেও প্রায় লাখখানেক চিতা জীবিত ছিল। কিন্তু, পরে এর মাত্র দুটি প্রজাতি অবশিষ্ট থাকায় প্রজননের সমস্যা দেখা দেয়। জিনের বৈচিত্র্য হ্রাস পায়। রোগের ঝুঁকি বাড়ে। একইসঙ্গে, চিতারা আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে অক্ষম হয়ে পড়ে। সরকার এবং নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে গঠিত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (IUCN) অনুযায়ী, চিতা প্রধানত দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলোয় যেমন আলজেরিয়া, বাৎসোয়ানা, মধ্য আফ্রিকার প্রজাতন্ত্র ইথিওপিয়া, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং জিম্বাবোয়েতেই দেখা যায়।
আরও পড়ুন- কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী বাঘেলের আমন্ত্রণে ছত্তিশগড়ে মন্দির পরিদর্শন ভাগবতের, ফাঁপড়ে বিজেপি
এশীয় চিতার সংখ্যা কম কেন?
আগে, এশীয় চিতা আরব উপদ্বীপ থেকে ভারতীয় উপমহাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এশীয় চিতার চেহার আফ্রিকার চিতার চাইতে একটু ছোট। কিন্তু, নানা কারণে তাদের ব্যাপকহারে মৃত্যু হয়। বিশেষ করে মানুষের হাতেও বহু চিতার মৃত্যু ঘটেছে। ভারতীয় রাজারা বরাবরই শিকারে উৎসাহী ছিলেন। ব্রিটিশরাও ছিল শিকারে উৎসাহী। পাশাপাশি, পশুপালকরা তাদের পশুদের বাঁচাতে চিতা হত্যা করতে বাধ্য হত।
পাশাপাশি, বনাঞ্চল কেটে সেখানে কৃষিজমি তৈরি হওয়ায়, চিতাদের বাস্তুতন্ত্রে ব্যাঘাত ঘটেছে। এটা শুধু ভারতই না। এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোতেও একই ছবি ধরা পড়েছে। ২০১৭ সালেও ইরানে ৫০টি মত চিতা ছিল। কিন্তু, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, নিজেদের অঞ্চল থেকে চিতারা বারবার লোকালয়ে চলে আসার চেষ্টা করেছে। বহুবার চলন্ত গাড়ির ধাক্কা খাওয়ারও ঘটনা ঘটেছে। আর, এই সবের জন্যই এশীয় চিতার সংখ্যা দ্রুত কমে গেছে।
চিতা কেন বিলুপ্তপ্রায়?
IUCN তাদের মূল্যায়নে জানিয়েছে, বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় চিতা যেভাবে লোকালয়ে চলে আসছে। তাতে আগামী ১৫ বছরে বিশ্বে চিতার সংখ্যা ৫০% কমে যাবে। আগে যে সব সমস্যা ছিল, তার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনও চিতাদের আরও বিপন্ন করে তুলেছে। পশুর পশমের জন্য শিকার, পশুর অবৈধ চোরাচালানও চিতার সংখ্যা দ্রুতহারে কমার জন্য দায়ী। তার মধ্যেই গত কয়েক বছরে সংরক্ষণের চেষ্টার ফলে দক্ষিণ আফ্রিকায় এখনও যথেষ্ট চিতা রয়েছে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বনভূমির অভাব আগামী দিনগুলোয় চিতা সংরক্ষণে বড়সড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
Read full story in English