/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/08/maoist.jpg)
ছবি- ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
ছত্তিসগড় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গত ৩ অগাস্ট রাজনন্দনগাঁও এলাকায় বাগনড়ি এলাকায় সাতজন মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে। তার এক সপ্তাহ আগে বস্তারের মাচকোটে নিহত হয়েছেন সাতজন মাওবাদী। এক সপ্তাহে এ ধরনের অপারেশনে মোট ১৬ জন মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে। নিরাপত্তাবাহিনী যেমন ক্রমাগত তাদের শক্তি বাড়াচ্ছে এলাকায়, একই সঙ্গে সিপিআই মাওবাদীর কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন রিপোর্ট ও বৈঠকে বলা হচ্ছে ঘাঁটি হারাচ্ছে তারা, নতুন কেউ দলে আসছে না আর।
সাধারণ ভাবে বর্ষায় সংঘর্ষের ঘটনা কমে আসে। ছত্তিসগড় পুলিশের সাম্প্রতিক সাফল্যের পিছনের রহস্যগুলি কীকী?
মাওবাদী বিরোধী অপারেশন বিভিন্ন ঋতুকালীন কারণে শিথিল হয়ে পড়লেও মাওবাদী আন্দোলনের খবর এসে পৌঁছনো বন্ধ থাকে না। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির ব্যবহার জওয়ানদের জওয়ানদের গতিবিধির উপর যে কোনও জায়গা থেকে নজরে রাখা যায় এবং টার্গেটকে আরও ভালভাবে চিনতে পারা যায়। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর নার্সিং কোর্স যারা করেছে তারা ঘায়েল জওয়ানদের ঘটনাস্থলেই চিকিৎসকা করতে পারে, এবং রাতের হেলিকপ্টার নামার ব্যবস্থাও জওয়ানদের পক্ষে সুবিধাজনক হয়েছে।
ফলে বর্ষাকাল সত্ত্বেও মাচকোট এবং সীতাগোটা-শেরপার জঙ্গলে অপারেশনে সাফল্য এসেছে। দুটি ক্ষেত্রেই অস্ত্র ও মাওবাদীদের মৃতদেহ উদ্ধার করা গেছে তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই (এক জওয়ানের আহত হওয়ার ঘটনা ছাড়া আর কোনও ক্ষয়ক্ষতি নেই)।
সম্প্রতি স্থানীয় পুলিশ বাম উগ্রপন্থার সঙ্গে লড়াইয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছে কীভাবে?
ছত্তিসগড় রাজ্য পুলিশ কিছু প্রশিক্ষণ সংস্থার সাহায্যে নিজেদের ক্ষমতা বাড়িয়েছে এবং বিশেষ বাহিনী গড়ে তুলতে পেরেছে। কেন্দ্র রাজ্যকে সহায়তা করা ছাড়াও এসটিএফের বিশেষ বাহিনী এবং রাজ্য গোয়েন্দা ব্যুরোকে অর্থসাহায্য করছে।
আরও পড়ুন, মাওবাদীদের সঙ্গে ফারাক কৌশলগত, বলছেন চারু মজুমদার পুত্র
৩ অগাস্টের সংঘর্ষ ঘটেছে মাওবাদীদের উল্লিখিত মহারাষ্ট্র মধ্যপ্রদেশ ছত্তিসগড় এলাকায় (এমএমসি জোন)। এ সংক্রান্ত আশঙ্কার প্রকৃতি কীরকম এবং কীভাবে তার মোকাবিলা করা যেতে পারে?
২০১৪ সাল থেকে নতুন এমএমসি জোন তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে মাওবাদীরা। মহারাষ্ট্রের গোণ্ডিয়া, মধ্যপ্রদেশের বালাঘাট এবং রাজনন্দনগাঁও, কবীরধাম ও মুঙ্গেলি এলাকায় মিলিত হয় মাওবাদীরা। এখানে ওরা বস্তারের দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটির মত একটা কমিটি তৈরি করতে চাইছে। এ এলাকা মূলত জনজাতিদের, পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা এবং গেরিলা যুদ্ধ চালানোর উপযুক্ত। দণ্ডকারণ্যে র উত্তর গড়চিরোলির মাওবাদী ডিভিশনের লাগোয়াও বটে এই এলাকা। এমএমসি জোনের অধিকাংশ ক্যাডারদের বস্তার থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।
মাওবাদীদের বৃদ্ধি আটকাতে অতিরিক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার। ছত্তিসগড়ে অনেক নতুন থানা এবং নিরাপত্তা শিবির তৈরি করা হয়েছে। কবীরধামের পুলিশ সুপার বেশ কিছু সচেতনতা শিবির সংগঠিত করেছেন প্রত্যন্ত এলাকায়। ওই এলাকাগুলিতে মাওবাদীদের প্রভাবের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। গ্রামবাসীদের প্রশিক্ষণ এবং এবং কয়েকশ জনের সরকারি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। প্রশাসন উন্নয়নের কাজে ত্বরান্বিত করার পদক্ষেপ করছে। মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রও মাওবাদ বিরোধী অপারেশন ওই এলাকায় তীব্র করেছে। গত ৩ অগাস্ট এমএমসি-র গড়চিরোলি-রাজনন্দনগাঁও-বালাঘাট ডিভিশনের দাররেকাসা এরিয়া কমিটিকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে।
সি৬০ কম্যান্ডোরদের উপর গড়চিরোলির খোলা জায়গায় হামলা হয়েছিল ২ মে। কী ভুল হয়েছিল সেদিন?
গেরিলা জোনে খোলা জায়গা নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষে সবচেয়ে আশঙ্কাজনক। মাওবাদীরা প্রায় সকলেই দণ্ডকারণ্য এলাকার হওয়ায় তারা খুব সহজেই স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে মিশে গিয়ে পরিচয় গোপন করে ফেলতে পারে। এরকম এলাকায় মাওবাদীরা নিরাপত্তা বাহিনীর মোডাস অপারেন্ডি খুব সাবধানতার সঙ্গে লক্ষ্য করে এবং তারপর হামলা চালায়। ২ মের হামলা থেকে আমরা যেটুকু জানতে পেরেছি, তা হল সাধারণ যে পদ্ধতিগুলো লাগু আছে তা পুলিশ পালন করেনি। রাস্তা তৈরির কাজের জন্য নিয়ে আসা ৩ ডজন গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর এই পদ্ধতি পালনগুলো খুবই জরুরি ছিল। তবুও এ ঘটনাকে কম্যান্ডোদের ব্যর্থতা না বলে নিরাপত্তা বাহিনীর পেশার সমস্যা বলেই ধরা উচিত।
আরও পড়ুন, সন্তোষ রাণা: সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা এক সমাজবিপ্লবী
দুটো সফল সংঘর্ষ হয়েছে, তা সত্ত্বেও মাওবাদীরা বড় ধাক্কা খাওয়ার পরপরই দ্রুত পাল্টা হামলা করতে মাওবাদীরা কি সক্ষম হয়? যেমন ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে গড়চিরোলিতে ৫০ জন মাওবাদী নিহত হওয়ার পর পরই মহারাষ্ট্রের কুরখেড়ায় হামলা করে মাওবাদীরা।
যদি আমরা ওদের হামলাগুলো বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখা যাবে এ ধরনের হামলা মূলত হয়ে থাকে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ ও মে-জুন পর্যায়ে। এই সময়টায়ে ওদের রাজনৈতিক ও সামরিক স্তরের লোকজন একত্রিত হয়ে এরিয়া বা ডিভিশন কম্যান্ড তৈরি করে এবং বড়সড় হামলা করে। ফলে সিপিআই মাওবাদীরা সাংগঠনিক ভাবে কমে এলেও এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতা বাড়লেও মাওবাদীরা এখনও নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা চালাতে সক্ষম এবং ক্ষয়ক্ষতিও ঘটাতে পারে। ফলে এই সময়টায় (যাকে বলে ট্যাকটিকাল কাউন্টার অফেন্সিভ ক্যাম্পেন) অতিরিক্ত সজাগ থাকতে হবে নিরাপত্তা বাহিনীকে।
২০১৮ সালের মার্চে সুকমায় গাড়ি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল আইইডি দিয়ে। আইইডি-র মোকাবিলা করার সেরা উপায় কী হতে পারে?
চাক্ষুষ নজরদারি বা প্রযুক্তিগত গ্যাজেট ব্যবহার করে ঠিক সময়ে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া একটা উপায় হতে পারে। দ্বিতীয়ত, এলাকায় টহল দিয়ে দেখতে হবে যাতে আইইডি বিস্ফোরণ করার মত কোনও সন্দেহজনক বস্তু লোকানো রয়েছে কিনা। তৃতীয়ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মাওবাদীদের যারা বিস্ফোরক সরবরাহ করে, সেইসব দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। চতুর্থত বিস্ফোরক বা ডিটোনেটর তৈরির সময়েই সেগুলিকে চিহ্নিত করে ফেলা, তার নির্দিষ্ট উপায়ও রয়েছে। তবে এ সবকটা পদ্ধতিরিই সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ ছাড়াও আইইডির ব্যবহার অমানবিক বলে যথাযথ আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার নিন্দা করা করা উচিত।
আরও পড়ুন, বদলে গেছে নকশালবাড়ির রাজনীতি
এখান থেকে কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে নিরাপত্তা বাহিনী?
মাওবাদীরা দণ্ডকারণ্য, ওড়িশা এবং অন্য এলাকায় দুর্বল হয়ে গেলেও নিরাপত্তা বাহিনী ওদের যুদ্ধ কৌশলকে ছোট করে দেখার অবস্থায় নেই। যেখানে নিরাপত্তা বাহিনী নেই সে জায়গা গুলো পূরণ করতে হবে। আইইডি খুঁজে বের করা এবং সেগুলি নিষ্ক্রিয় করার জন্য উন্নততর প্রযুক্তি প্রয়োজন। প্রত্যন্ত এলাকায় প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ করা প্রয়োজন।
বনরক্ষা আইন হওয়া উচিত বনবাসীদের জন্য। মাওবাদীরা যে আর্থ সামাজিক বৈষম্যের দিকটাকে কাজে লাগায়, সে ব্যাপারে নজর দেওয়া দরকার। এলাকার মানুষদের অধিকার প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে সুনিশ্চিত করতে হবে।
(আর কে ভিজ ছত্তিসগড় পুলিশের বিশেষ ডিজি। আগে তিনি রাজ্যের মাওবাদী দমন শাখার অতিরিক্ত ডিজিপি ছিলেন।)
Read the Full Story in English