Advertisment

মাসুদ আজহার নিয়ে চিনের বাগড়া, এর পর কী করতে পারে ভারত?

ভারতের কাছে ৯ মাস সময় আছে চিনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করার, যাতে তারা আপত্তি তুলে নেয় এবং আজহারের তালিকাভুক্তি সম্পন্ন হয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
China blocked azhar listing what next

জিনপিংয়ের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী (ফাইল ফোটো)

চিন এ নিয়ে কতবার জৈশ-এ-মহম্মদ জঙ্গি মাসুদ আজহারকে নিয়ে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ঘোষণার ব্যাপারে বাধা সৃষ্টি করল?

Advertisment

গত দশ বছরে বেশ কয়েকবার রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে ১২৬৭ স্যাংশন কমিটিতে আজহারকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি ঘোষণা করার ব্যাপারে আপত্তি তুলেছে। প্রথমবারে বেজিং এ কাণ্ড ঘটায় ২০০৯ সালে, ২৬-১১ মুম্বই হামলার পর ভারত এ নিয়ে দাবি তোলার পরে। ২০১৬ সালে পাঠানকোট হামলার পর ফেব্রুয়ারি মাসে ফের এ ব্যাপারে নতুন করে আবেদন করে ভারত। চিন ফের পাকিস্তানের হয়ে আপত্তি তুলে টেকনিক্যাল আপত্তি জানায়। একই ঘটনা আবার ঘটে ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে এ প্রস্তাব আটকাতে চিন ভেটো প্রয়োগ করে। ১৯ জানুয়ারি ২০১৭-য় আজহারকে আন্তর্জাতিক অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার ব্যাপারে প্রস্তাব দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে ফের টেকনিক্যাল আপত্তি তুলে সে প্রস্তাব আটকে দেয় চিন।

সেক্ষেত্রে চিন যে ফের একই কাজ করবে, সে ব্যাপারে কি প্রস্তুত ছিল ভারত?

বেজিং যে ভাবে আইনের প্রসঙ্গ তুলে আপত্তি জানাচ্ছিল, তাতে ইঙ্গিত ছিলই। বুধবার পিটিআই মার্কিন স্বরাষ্ট্র দফতরের সহকারী মুখপাত্র রবার্ট পালাদিনোকে উদ্ধৃত করে জানায় যে চিনের এ প্রস্তাবের বিরোধিতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের এলাকায় শান্তি ও সুস্থিতির পরিবেশ তৈরির যৌথ চেষ্টার পরিপন্থী। এমনকি চিনের সঙ্গে চুক্তি করা সম্ভব নয়, এমন একটা কঠোর কথাও উঠে আসে। ফলে আপত্তি জানানোর সময়সীমা শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে চিনের আপত্তি তোলার ব্যাপারে নয়া দিল্লির প্রস্তুত থাকারই কথা।

আরও পড়ুন, মাসুদ আজহারের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করছে ফ্রান্স

চিনের এবারের পদক্ষেপ কি আগেরবারের থেকে আলাদা?

এবারের পদক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ। ২০০৯ এবং ২০১৬ সালে প্রস্তাব দিয়েছিল ভারত। তখন চিন ও পাকিস্তান মিলে বলতে শুরু করে যে নয়া দিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে রাজনৈতিক হিসেব মেলাতে চাইছে। ফলে, ২০১৭ সালে ভারত যখন তার কৌশলগত সঙ্গী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ফ্রান্সকে দিয়ে প্রস্তাব পেশ করায়, তখন ভারত-পাক দ্বন্দ্বের তত্ত্ব আর খাটেনি। তার জায়গায় আন্তর্জাতিক স্তরে সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধের প্রসঙ্গ সামনে চলে আসে।

এবার ভারত শুধু ওই তিনটি দেশকেই পাশে পায়নি, সঙ্গে রয়েছে আরও ১০টি দেশ। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স বাদ দিয়েও নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য ১০টি দেশ, জার্মানি, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইকুয়োটেরিয়াল গায়না, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইটালি, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও ভূটানও এবার প্রস্তাবের সঙ্গী।

China blocked azhar listing what next মাসুদ আজহার। ফাইল ছবি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

কোয়াড সদস্য দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া এ প্রস্তাবের সমর্থক, যা কৌশলগত জোটের ইঙ্গিতবাহী। এর ফলে মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জঙ্গি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে সুবিধে যেমন হবে, একই সঙ্গে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বজোড়া যুদ্ধের ক্ষেত্রেও তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

আজহারের তালিকাভুক্তি আটকানোর ব্যাপারে চিনের ভারতবিরোধী প্রয়াসের কি কোনও ধারাবাহিকতা রয়েছে?

ভারতের বিরুদ্ধে কৌশলগত অস্ত্র হিসেবে বরাবরই পাকিস্তানকে ব্যবহার করে এসেছে চিন, বলছেন এক প্রবীণ ভারতীয় আধিকারিক। আজহার সম্পর্কিত প্রস্তাবের ব্যাপারে বেজিংয়ের আপত্তি সে মনোভাবেরই প্রতিফলন। নয়া দিল্লির হিসেব অনুযায়ী পাকিস্তানের সামরিক ও গোয়েন্দা ক্ষেত্রে আজহার যথেষ্ট মূল্যবান। রাওয়ালপিণ্ডি এবং জৈশের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্কের ব্যাপারে বেজিং যথেষ্ট মনোযোগী এবং তার ব্যত্যয় হোক এমনটা তারা চায় না।

আজহারের তালিকাভু্ক্তি ছাড়াও এনএসজি-র সদস্যপদের জন্য ভারতের আবেদন আটকে চলেছে চিন। ২০১৬ সালের জুন মাসে নয়া দিল্লি এ ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা নেয় এবং সে সময়ে ভারতের বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর সিওল গিয়েছিলেন অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এনএসজি সদস্য দেশগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে।

বারবার ভারতের হতাশার কারণ হয়ে উঠে চিনের কী লাভ? পাকিস্তান থেকে উদ্গত সন্ত্রাসবাদের আন্তর্জাতিক বিরোধিতাতেই বা তারা শামিল নয় কেন?

চিনের পক্ষে পাকিস্তান যাকে বলে সব সময়ের সঙ্গী। তাদের সম্পর্ক লৌহদৃঢ়। পাকিস্তানে তাদের কৌশলগত বিনিয়োগ রয়েছে, রয়েছে চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডোর। সবসময়ের সঙ্গী হিসেবে পাকিস্তানের মর্যাদার উপর যে কোনও আঘাত নিজের উপর গ্রহণ করার জন্য চিন সদাপ্রস্তুত। এমনকি তার জন্য সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আন্তর্জাতিক সংগ্রামে তারা ভুল দিকে রয়েছে এ রকম ধারণা সৃষ্টির ঝুঁকি নিয়েও তারা এ কাজে রাজি।

China blocked azhar listing what next কার্টুন- উন্নিকৃষ্ণন (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)

সাম্প্রতিক হতাশার পর ভারতের পক্ষে সন্তোষজনক কিছু কি আদৌ রয়েছে?

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের সমর্থন যা তেরটি দেশের সমর্থনের মাধ্যমে সূচিত হয়েছে, তা থেকে স্পষ্ট যে ভারত বৃহত্তর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সমর্থন পেতে শুরু করেছে। ভারত-পাক উত্তেজনের সময়ে চিনের এবারের অবস্থান ছিল যথেষ্ট মাপা, যা কিছুটা নতুনও বটে, মনে করছে ভারত। বালাকোটের বিমান হামলার দু দিন পর অবধি পাক সার্বভৌমত্বে আঘাতের দায়ে ভারতকে অভিযুক্ত করেনি চিন। এটা বেজিংয়ের দিক থেকে শুভ সংকেত বলেই মনে করা হচ্ছে। এখানেই শেষ নয়। নিরাপত্তা পরিষদের নিন্দাবিবৃতিতেও চিন স্বাক্ষর করেছে, যে বিবৃতিতে জৈশের নাম ছিল এবং পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার নিন্দা করা হয়েছিল। পুলওয়ামা এবং বালাকোটের ঘটনা নিয়ে পৃথিবীর মোট ১১০টি দেশ বিবৃতি জারি করেছে, এর অধিকাংশ বিবৃতিই ভারতের পক্ষে।

আরও পড়ুন, চিন কেন জৈশ-এ-মহম্মদ ও আজহার মাসুদকে বাঁচাচ্ছে?

এই ইস্যুতে ভারতীয় কূটনীতির পরবর্তী পদক্ষেপ কী?

ভারতের কাছে ৯ মাস সময় আছে চিনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করার, যাতে তারা আপত্তি তুলে নেয় এবং আজহারের তালিকাভুক্তি সম্পন্ন হয়। তবে এর জন্য চিনের পক্ষে সুবিধাজনক কোনও একটা বিষয় ভারতকে আবিষ্কার করতে হবে। ২০১৭ সালে চিন চেয়েছিল ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে। ওই পদের অন্যতম দাবিদার ছিল ভারতের ঘনিষ্ঠ কৌশলগত সঙ্গী  জাপান। জাপানের বিরুদ্ধে চিনকে সমর্থন করতে রাজি হয়েছিল নয়া দিল্লি, তার বিনিময়ে পাকিস্তানের গ্রে লিস্টিং বিষয়ে বেজিংয়ের সমর্থন পেয়েছিল তারা। বেজিংয়ের সঙ্গে বিনিময়ের সে টা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। পরবর্তী ৯ মাসে ভারত এ ধরনের বিনিময়বিন্দু খুঁজে পেতে হবে, যাতে তারা বেজিংয়ের ব্যবহারে বদল আনতে পারে।

পাকিস্তান যাতে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সে ব্যাপারে সমস্ত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে ভারতকে। ফিনানশিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স ভারতে এ সুযোগ দিয়েছে, যার ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আগামী মে-সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্ত করা যেতে পারে। ইসলামাবাদ যদি আজহার এবং জৈশ সহ সন্ত্রাসবাদী এবং জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ না করে, তাহলে এমনটা ঘটতেই পারে।

Read the Full Story in English

china Masood Azhar Explained
Advertisment