প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও চিনের গণমুক্তি ফৌজের মধ্যেকার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ফের একবার আগ্রাসী চিনের সামনে নয়া দিল্লির কোন নীতি গ্রহণ করা উচিত, সে প্রশ্ন সামনে এনে দিয়েছে।
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুরের ইনস্টিট্যুট অফ সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের ডিরেক্টর তথা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কন্ট্রিবিউটিং এডিটর সি রাজা মোহনের কথা অনুসারে জম্মু কাশ্মীরের সাংবিধানিক মর্যাদা বদলের ঘটনাকে গণমুক্তি ফৌজের আগ্রাসী পদক্ষেপের যুক্তি হিসেবে তুলে ধরছে চিনা প্রতিষ্ঠানগুলি।
কিন্তু এ যুক্তিতে জোর খুব নেই কারণ পূর্বতন জম্মু কাশ্মীরের কোনও প্রভাব চিন ও পাকিস্তানের বর্তমান আঞ্চলিক সংকট নিয়ে নেই।
রাজা মোহনের কথায়, গণমুক্তি ফৌজের ক্রমবর্ধমান সামরিক ক্ষমতা ও তা ব্যবহার করার রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষাই চিনের পেশি প্রদর্শনের মূলে। দীর্ঘমোয়াদি আঞ্চলিক সুস্থিতি বজায় রাখতে ও নিজেদের সুরক্ষার জন্যই ভারতের উচিত বেজিংয়ের সঙ্গে সামরিক ও আর্থিক ভারসাম্যহীনতা কমানো। দিল্লি যখন জম্মু-কাশ্মীরের বিতর্কিত অংশ নিয়ে নিয়ে তাদের অবস্থান বদলায়নি, তেমনই চিনও দক্ষিণ সাগরে তাইই করেছে, এবং বিতর্কিত জলসীমায় নিজেদের শক্তিবৃদ্ধি করেছে।
প্রাক্তন বিদেশ সচিব তথা চিনে ভারতের রাষ্ট্রদূত বিজয় গোখলে বেজিংয়ের এই পদক্ষেপকে ইন্দো-প্যাসিফিকে নিজেদের প্রভাব বর্ধনের চেষ্টা বলে মনে করছেন। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর লিখিত এক নিবন্ধকে ভিত্তি করে গোখলে দেখিয়েছেন এসিয়ানের পক্ষে চিন ও আমেরিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা কতটা জরুরি।
এখনও পর্যন্ত উপকূলবর্তী রাষ্ট্রগুলি ও ইন্দো-প্যাসিফিকে যাদের বাজি রয়েছে, তারা ওই এলাকায় সবচেয়ে শক্তিশালী নৌবহর আমেরিকার কাছ থেকে নিরাপত্তার সুবিধা পেয়েছে- একই সঙ্গে চিনের আর্থিক উন্নতির সুবিধাও লাভ করেছে। কিন্তু বেজিংয়ের এই এলাকায় সাম্প্রতিক দাবি চুক্তি ভিত্তিক বা আইনিভাবে জোরদার, কোনওটাই নয় - এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও সুস্থিতির পক্ষেও সাহায্যকারী নয়।
তবুও এসিয়ান চাইবে চিন ও আমেরিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং এলাকার আঞ্চলিক পরিস্থিতিতে বড়ধরনের বদল আশা করা যায় না। “চিন ও আমেরিকার মধ্যে কাউকে বাছাটা বড় বিষয় নয় - বিষয় হল সকলের জন্য সব দিক খোলা রাখা অথবা ভবিষ্যতের জন্য সঙ্গী বাছার অধিকার আত্মসমর্পণ করা”- লিখছেন গোখেল।