চিন বদলাল না। দিন দুয়েক আগেই ভারতে চিনের প্রতিনিধি দাবি করেছিলেন, ভারত সীমান্ত এখন সম্পূর্ণ স্থিতিশীল। দু'দেশ ভবিষ্যতে একযোগে বিশ্বে বড় অবদান রাখতে পারে। তার পরপরই রবিবার অরুণাচল প্রদেশের ১১টি স্থানের নাম প্রকাশ করেছে চিন। ওই স্থানগুলোর পরিস্থিতি স্থিতিশীল বলে চিন সরকার দাবি করেছে। একইসঙ্গে বুঝিয়ে দিয়েছে, অরুণাচল প্রদেশের ওই সব জায়গাগুলো চিনের অংশ। অতীতেও চিন এমনভাবেই দু'মুখো নীতি নিয়েছে। মুখে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের কথা বলেও ২০১৭ এবং ২০২১ সালে ভারতের বিভিন্ন এলাকাকে ম্যাপ বানিয়ে নিজেদের বলে দাবি করেছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
ফলে চিনের আচরণে ভারত মোটেই হতবাক নয়। ভারত সরকারও প্রস্তুতই ছিল। বিদেশ মন্ত্রক চিনের দাবি যথারীতি নস্যাৎ করেছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, 'অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, আছে ও থাকবে। আমরা চিনের রিপোর্ট দেখেছি। চিন এমন চেষ্টা প্রথম করল না। আমরা চিনের দাবি সরাসরি খারিজ করছি। চিনের তালিকায় কিছু নাম যুক্ত হলেও বাস্তবটা বদলাবে না।'
তালিকায় থাকা জায়গাগুলো
রবিবার চিন অরুণাচল প্রদেশের যে ১১টি জায়গার নাম প্রকাশ করেছে। সেগুলো চিনা, তিব্বতি ও পিনয়িন অক্ষরে প্রকাশ করেছে। যা চিনের সরকারের সর্বস্তরের স্বীকৃতি ছাড়া অসম্ভব। চিনের প্রকাশিত তালিকায় থাকা ভারতের ওই জায়গাগুলোর মধ্যে দুটি ভূমি, দুটি আবাসিক, পাঁচটি পর্বতশৃঙ্গ, দুটি নদী এলাকা রয়েছে। এই সব জায়গার নাম, এর মধ্যে কোন জায়গা চিনের কোন প্রশাসনিক জেলার অধীনে পড়ছে, তা-ও তালিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
চিনের দাবি
চিন দীর্ঘদিন ধরেই অরুণাচল প্রদেশের প্রায় ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাকে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে। চিনা ভাষায় এই এলাকার নাম 'জাংনান' বা দক্ষিণ তিব্বত। অরুণাচল প্রদেশকে চিন তাদের মানচিত্রেও ভারতের অংশ বলেই দেখায়। আবার কখনও সখনও এই অঞ্চলকে 'তথাকথিত অরুণাচল প্রদেশ' বলে চিহ্নিত করে। এই অঞ্চল যে ভারতীয় ভূখণ্ড, তাকে এইভাবেই অস্বীকার করতে চিন বারবার চেষ্টা করে। কোনও ভারতীয় নেতা অরুণাচল প্রদেশে গেলে, চিন তার তীব্র নিন্দাও করে। অরুণাচল প্রদেশের জায়গাগুলোর চিনা নাম দেওয়া চিনের এই ধারাবাহিক চেষ্টারই অংশ।
আরও পড়ুন- রাষ্ট্রসংঘ জুলাই থেকে গভীর সমুদ্রে খননের অনুমতি দেবে, এতে উদ্বেগটা কোথায়?
চিনের লাভ
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলার সময়, সাংহাইতে ইনস্টিটিউট ফর সাউথ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়া স্টাডিজের তৎকালীন পরিচালক ওয়াং দেহুয়া জানিয়েছিলেন, চিন অরুণাচলের ওপর নিজেদের দখল প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। সেই জন্যই বারবার ম্যাপে অরুণাচলকে চিনের অংশ বলে থাকে। সঙ্গে, অরুণাচলের জায়গাগুলোর চিনা নাম দিয়ে নিজেদের দাবিকে তুলে ধরার চেষ্টা চালায়। ঠিক যেমনভাবে তাইওয়ান এবং দক্ষিণ চিন সাগরের কয়েকটি দ্বীপের ওপর চিন নিজেদের দখল বজায় রাখতে চায়, অরুণাচলের ব্যাপারটাও ঠিক একইরকম।