Advertisment

কোথায় কোথায়, কেন লাগু হবে না ক্যাব?

ক্যাব-এ বলা হয়েছে, এই ধারার কিছুই আসাম, মেঘালয়, মিজোরামের জনজাতি এলাকায় লাগু হবে না। লাগু হবে না ত্রিপুরাতেও।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
ILP, CAB

ফাইল ছবি

সোমবার, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) লোকসভায় পাশ হয়ে গেল। এই বিলে অভিবাসীদের একাংশকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেবার ব্যাপারে কিছু ছাড়ের প্রস্তাব রয়েছে। ক্যাবের এই নতুন সংস্করণে কেন্দ্র উত্তরপূর্বাঞ্চলের কিছু অংশকে ছাড় দিয়েছে। এই জায়গাগুলিতে ক্যাবের বিরোধিতায় বিক্ষোভ হয়েছিল।

Advertisment

কার্যত এই বিল থেকে অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামকে সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে মেঘালয়ের পুরোটা, আসাম-ত্রিপুরার বিভিন্ন অংশ। কিন্তু মণিপুরেের পুরোটাই ক্যাবের আওতায় থাকছে। (তবে মণিপুরের জন্য সরকার বিশেষ কিছু প্রস্তাব ঘোষণা করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে)।

পড়ুন আসাম এনআরসি নিয়ে কেন অসন্তুষ্ট বিজেপি, কেন তারা আগে ক্যাব চায়?

তিনটি রাজ্যকে পুরো বাদ দেওয়া হল কেন?

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব)-এ বলা হয়েছে, এই ধারার কিছুই আসাম, মেঘালয়, মিজোরামের জনজাতি এলাকায় লাগু হবে না। লাগু হবে না ত্রিপুরাতেও। কারণ সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিল অন্তর্ভুক্ত এলাকা এবং ১৮৭৩ সালের বেঙ্গল ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রেগুলেশনের আওতায় ইন্টার লাইন নোটিফায়েড এলাকাগুলি পুরোটাই এই ক্যাবের আওতার বাইরে থাকবে। ইন্টার লাইন পারমিট (আইএলপি) লাগু রয়েছে অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামে। নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর শহর ইন্টার লাইন পারমিটের আওতাধীন নয়।



আইএলপি ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে?

আইএলপি এক বিশেষ ধরনের পারমিট বা অনুমতি। ভারতের অন্য যে কোনও জায়গার নাগরিকদের এই তিনটি রাজ্যে প্রবেশ করতে গেলে এই বিশেষ পারমিট লাগে। এর জন্য অনলাইনে আবেদনে করা যায়, আবেদন করা যায় শারীরিক ভাবে উপস্থিত হয়েও। ভ্রমণের তারিখ এবং ঠিক কোন কোন স্থানে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, জানাতে হয় তাও।

এই ছাড়ের ফলে কী হবে?

আইএলপি ভুক্ত রাজ্যগুলিতে, অন্য রাজ্য থেকে আসা বহু অভিবাসী ইতিমধ্যেই রয়েছেন। তাঁদের দীর্ঘমেয়াদি পারমিট রয়েছে এবং সেগুলি রিনিউও করানো হয়। এখন প্রশ্ন হল, ক্যাবের আওতায় যাঁরা নাগরিক হবেন, তাঁরা কি এ রাজ্যগুলিতে অনয নাগরিকদের মতই আইএলপির জন্য আবেদন করতে পারবেন!

পড়ুন, বিশ্লেষণ: নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) কী, এ নিয়ে এত বিতর্কই বা কেন?

এ ছাড়াও বহিরাগতদের (অন্য রাজ্য বা অঞ্চলের ভারতীয় নাগরিক) ষষ্ঠ তফশিল বা ইনারলাইন ভুক্ত এলাকায় প্রচুর বিধিনিষেধ রয়েছে। এই নিয়মগুলির আওতাতেই ক্যাবের মাধ্যমে যাঁরা নাগরিক হয়ে উঠবেন তাঁদের উপরেও বিধিনিষেধ লাগু হবে বলে প্রত্যাশিত।

প্রভাবশালী সংগঠন ইয়ং মিজো অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডেন্ট বনলারাউতা বলছেন, "এই ছাড়ের মানে ক্যাবের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া কোনও বাংলাদেশি মিজোরামে বা অন্য কোনও আইএলপি ভুক্ত রাজ্যে বসবাস করতে পারবেন না। এটাই আমাদের দাবি ছিল।"

ষষ্ঠ তফশিল কী, ক্যাবের আওতায় কোন কোন এলাকা ষষ্ঠ তফশিল হিসেবে ছাড় পাচ্ছে?

সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিলে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের স্বায়ত্তশাসিত জেলা পরিষদ (এডিসি)গুলিতে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে। জনজাতি এলাকার উন্নয়ন এবং জনজাতিদের স্বশাসনের উদ্যোগ বৃদ্ধির জন্য এই এলাকাগুলিতে এডিসি আইন প্রণয়ন করতে পারে।

মিজোরাম পুরোটাই আইএলপিভুক্ত। অন্য তিনটি রাজ্যের বেশ কিছু এলাকা ষষ্ঠ তফশিলভুক্ত। জনজাতি অধ্যুষিত মেঘালয়ে তিনটি এডিসি রয়েছে, যার আওতায় চলে আসবে প্রায় পুরো রাজ্যই। শুধু শিলং শহরের একাংশ এর থেকে বাদ থাকবে। আসামে তিনটি ও ত্রিপুরায় একটি এডিসি রয়েছে।

CAB, ILP

তাহলে মণিপুর কেন এ দুয়ের কোনটার আওতাতেই এল না?

মণিপুর, ত্রিপুরার মতই রাজন্যশাসিত রাজ্য ছিল। তারা যখন ১৯৪৯ সালে ভারতীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়, (পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পায় ১৯৭২ সালে) তখন দুই রাজ্যকেই ষষ্ঠ তফশিলের বাইরে রাখা হয়েছিল বলে জানালেন জেএনইউয়ের স্কুল অফ সোশাল সায়েন্সেসের অধ্যাপক এল লাম খান পিয়াং।

তিনি জানালেন, "এই ১৯৮৫ সালে ষষ্ঠ তফশিল ত্রিপুরার জনজাতি এলাকায় লাগু হয়। ত্রিপুরাকে তফশিলের অন্তর্ভুক্ত করবার পর কেন্দ্র বলেছিল কিছুদিনের মধ্যে মণিপুরেও তফশিল লাগু হবে। কিন্তু সে আর হয়নি। তবে মণিপুর রাজ্য সরকার তিনবার ষষ্ঠ তফশিলের প্রস্তাব করেছে, কিন্তু সে নিয়ে খুব চাপাচাপি করেনি।"

পড়ুন, বিশ্লেষণ: পুলিশের মেরে ফেলার অধিকার

মণিপুরের উপজাতি এলাকার কী হল?

মণিপুরকে ভৌগোলিক ভাবেই দু ভাগে ভাগ করা যায়। ইমফলসহ উপত্যকা এলাকায় ভৌগোলিক ভাবে রাজ্যের ১০ শতাংশ, কিন্তু সেখানে বাস করেন জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ। এঁরা মূলত মেইতেই সম্প্রদায়ের। বাকি ৯০ শতাংশ পাহাড়ি এলাকায় বাস করেন ৪০ শতাংশ নাগরিক। এঁদের একটা বড় অংশ জনজাতি সম্প্রদায়ের, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন নাগা ও কুকিরা।

পিয়াং বললেন, "কেন্দ্র রাজ্যের স্বীকৃতি দিলেও জনজাতিদের নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এ কথা জানত, সে কারণে তারা ৩৭১ সি অনুচ্ছেদ প্রবর্তন করে।"

৩৭১ সি আবার কী?

এর অর্থ মণিপুরের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। রাষ্ট্রপতি চাইলে মণিপুরের পার্বত্য এলাকার বিধায়কদের নিয়ে কোনও কমিটি গঠন করতে পারেন। সরকারের কাজকর্মে রদবদল ঘটাতে এবং রাজ্যের বিধানসভা কার্যবিধির জন্য আইন তৈরি করতে পারেন। ওই কমিটি যাতে ঠিকভাবে কাজ করতে পারে সে কারণে রাজ্যপালকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে।

এ ছাড়াও, রাজ্যপাল বার্ষিকভাবে বা যখনই রাষ্ট্রপতি চাইবেন, তখনই মণিপুর রাজ্যের পার্বত্য এলাকার প্রশাসন নিয়ে রিপোর্ট দেবেন। ওই এলাকাগুলির প্রশাসনের বিষয়ে যে কোনও রকম নির্দেশ রাজ্য সরকারে দিতে পারে কেন্দ্র।

পিয়াং বলছেন, এই বিধি অনুসারে মণিপুরের জনজাতিদের বিধানসভায় সুরক্ষাকবচ দেওয়া হল।

মণিপুরে অন্য কোনও ব্যবস্থাও কি রয়েছে?

মণিপুর (পার্বত্য এলাকা) জেলা পরিষদ আইন, ১৯৭১ সংসদে পাশ হবার পর ১৯৭২ সালে ৬টি এডিসি তৈরির রাস্তা ১৯৭২ সালে পাকা হয়ে গিয়েছিল। পিয়াং বলছেন, ষষ্ঠ তফশিল ছাড়া এই কাউন্সিলগুলির ক্ষমতা তফশিলভুক্ত এডিসিগুলির তুলনায় অনেকটাই কম।

পড়ুন, উধম সিং: যাঁর কথা বলে পার পেতে চাইছেন প্রজ্ঞা ঠাকুর

গত বছর বিধানসভায় মণিপুর জনসাধারণ বিল পাশ হয়। এই বিলে বহিরাগত ও অমণিপুরী জনতার জন্য বেশ কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। বিলে মণিপুরী জনসাধারণ বলতে কী বোঝানো হয়, তার সংজ্ঞা স্থির করার জন্য প্রচুর আলোচনা হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৫১ সালেকে কাট অফ বছর স্থির করা হয়।

উত্তর পূর্বের অন্য রাজ্যগুলির কী অবস্থা?

এ বছরের নভেম্বর মাসে, মেঘালয় মন্ত্রিসভা ২০১৬ সালে মেঘালয় রেসিডেন্টস সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাক্টের সংশোধনী মঞ্জুর করে। এর জেরে মেঘালয়ের বাসিন্দা নন এমন যে কাউকে এ রাজ্যে আসতে গেলে নিজেদের নথিভুক্ত করতে হবে। আইএলপি ঘরানার ব্যবস্থা লাগু করার দাবিতে এবং নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক নেতাদের উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ। উদ্বিগ্নদের তালিকায় ছিল মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার নামও। এঁদের আশঙ্কা আসাম এনআরসসি-তে ঠাঁই না-পাওয়া মানুষ দলে দলে মেঘালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারেন।

আসামের কিছু অংশেও আইএলপি অন্তর্ভুক্ত করবার প্রস্তাব এসেছে। অসম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদ সারা রাজ্যে আইএলপি লাগু করার দাবি তুলেছে।

পড়তে ভুলবেন না, স্পেশাল রিপোর্ট এনকাউন্টারের এক অন্য কাহিনি, ছত্তিসগড়ে

Citizenship Bill
Advertisment