Advertisment

কংগ্রেস অন্দরে 'চিঠি' ঘিরে অশান্তি! এবার কি 'হাতবদল'?

দলে রয়েছে আদর্শ-নীতি, ক্ষমতায় আসীনের গৌরবজ্জ্বল ইতিহাসও রয়েছে। কিন্তু এরই মাঝে বিজেপির উত্থান এবং দেশের যুব সমাজের মোদীপ্রীতি ভাবিয়ে তুলছে কংগ্রেস নেতাদের।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

কংগ্রেসের অন্দরে এই 'চিঠির' ঘটনা কি প্রথমবার? সম্প্রতি ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শতাব্দী প্রাচীন দলে ভীষণভাবে বদল প্রয়োজন চেয়ে যে চিঠি পাঠান হয়েছে সেটিকে ঘিরে এমনই প্রশ্ন উঠে আসছে। পাঁচ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, একাধিক কংগ্রেস কার্যকরী কমিটির সদস্য, বর্তমান সাংসদ ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের একাংশ সহ মোট ২৩ জন শীর্ষ কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধীর কাছে যে চিঠি পাঠালেন তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। অন্তত আজকের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে।

Advertisment

দলে রয়েছেন বর্ষীয়াণ নেতা, রয়েছে আদর্শ-নীতি, ক্ষমতায় আসীনের গৌরবজ্জ্বল ইতিহাসও রয়েছে। কিন্তু এরই মাঝে বিজেপির উত্থান এবং দেশের যুব সমাজের মোদীপ্রীতি ভাবিয়ে তুলছে কংগ্রেস নেতাদের। কেন কংগ্রেস দলের প্রতি দেশের যুবসমাজের আস্থা ফিরছে না সেই প্রশ্নের উল্লেখও রয়েছে চিঠিতে। তবে এই চিঠি পাঠানোর মাধ্যমে যে দলের বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ উগরে দেওয়া হয়েছে, তা নয় বরং অন্য সমীকরণও সামনে আসছে, এমনটাই মত ওয়াকিবহাল মহলের।

এই চিঠি আসলে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

এখন কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি সোনিয়া গান্ধী। তাই দলনেত্রীর উদ্দেশেই পাঠান হয় পাঁচ পাতার একটি চিঠি। সেখানে নানাবিধ বিষয়কে ব্যাখ্যা করা হয়। তবে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে এই 'বৈচিত্র্য' নি:সন্দেহে দলকে ধাক্কা দিচ্ছে।

তবে কংগ্রেস নেতাদের এই অসন্তোষ মেনে নিয়েছে সুপ্রিমেরা। মেনে না নেওয়া ছাড়া উপায়ই বা কি? শত চেষ্টা করেও মোদী-শাহের জয়রথ থামাতে পারেনি কংগ্রেস শিবির। পর পর দু'বার লোকসভা নির্বাচনে লজ্জার হার। এমতাবস্থায় যে দলের নেতা, কর্মীদের মনের মধ্যে অসন্তোষ থাকবে তা বলাই বাহুল্য। চিঠিতে মূলত দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাজেরই সমালোচনা করা হয়েছে। লড়াইয়ের ময়দানে জয়-পরাজয় হবেই। কিন্তু অধিনায়ক তো তিনিই যিনি পরাজয়ের পরও দলকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে, জেতার খিদে বাড়িয়ে তুলবে। কংগ্রেসে যেন সেই তাগিদের অভাব। অন্তত চিঠির লেখনী তো এমনটাই বলছে।

শুধু চিঠি কেন সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিষয়ও কিন্তু সেই দিকেই আঙুল তুলছে। তা সে মধ্যপ্রদেশের সরকার গঠন কিংবা রাজস্থানের রাজনৈতিক সংকট। দলের মধ্যে যুব এবং প্রবীণদের মতানৈক্য যেন কংগ্রেস শিবিরের রোজকার বিষয়। একটি সংগঠনের মধ্যে কেন অবাধ আলোচনা নেই সেই দিকটিও উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। নেতাদের একটাই দাবি এখনই সেই সময় যখন দলে আরও ব্যবস্থা স্থাপনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

কবে থেকে এই সমস্যার সূত্রপাত?

কংগ্রেসের গোড়াপত্তন থেকে এমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি কখনও। ২০০০ সালে সোনিয়ায় গান্ধী দলের নেত্রী হওয়ার পরও শক্ত হাতেই 'হাত শিবিরের' রাশ ধরেছিলেন। ২০০৪ থেকে ২০১৪, টানা ১০ বছর ক্ষমতায় ছিল সোনিয়ার নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকেই হাত শিবিরে ফাটল দেখা দিতে থাকে। সোনিয়ায়র পর দলের হাল কি রাহুল গান্ধী ধরবে? এমন একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। কিন্তু দলের নেতাদের সঙ্গে সেই সম্পর্ক কোথায় রাহুলের? অতএব চিঠির পন্থা অবলম্বন। গত মাসেই কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়ায় গান্ধীর ডাকা বৈঠকে দলের প্রবীণ নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী কপিল সিব্বলের সঙ্গে বিরোধ চরমে ওঠে। প্রসঙ্গত, এই চিঠিতে ২৩ জনের মধ্যে তিনিও রয়েছেন। এমনকী কংগ্রেসের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমও। কীভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে তাঁদের মনোভাব বোঝা উচিত দলের সে বিষয়টিও উত্থাপন করেছেন তিনি।

সমস্যা কি একেবারেই ছিল না?

ছিল। ১৯৯৬ থেকে ২০০৪ অবধি টালমাটাল পরিস্থিতি দেখছে কংগ্রেস। ১৯৯৮ সালে তা চরমে উঠেছিল। কিন্তু তফাৎ হল সেই সময় কংগ্রেসের দায়িত্ব গান্ধী পরিবারের হাতে ছিল না। সীতারাম কেশরি ছিলেন দলের প্রধান। অনেকেই বলেন সেই সময় সোনিয়াকে দলের নেত্রী করতে সীতারাম কেশরির বিরুদ্ধে কাজ করছিল 'দিল্লি লবিবাজি'। তবে এমন ঘটনা একবার বহুবার হয়েছে। ইন্দিরা গান্ধী থাকাকালীনও হয়েছে। দেশের এমারজেন্সির পর নেহেরু কন্যার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন দলের দুই প্রাক্তন সভাপতি।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে তবে এই চিঠির ঘটনা এত ভাবিয়ে তুলছে কেন? একটাই কারণ এই চিঠিতে ২৩ জনের স্বক্ষর থাকলেও দলের অনেকেই এই চিঠির যে বিষয়বস্তু তার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেছেন। তাই এই ঘটনাকে চাপা দেওয়া সহজ নয় এই মুহুর্তে। তাই কোন দিকে এগোয় নেহেরু-গান্ধী পরিবারের রাজনীতি, তা ভাবিয়ে তুলছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।

Read the full story in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

CONGRESS rahul gandhi sonia gandhi
Advertisment