/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/04/constitution-basic-nature.jpg)
দেশের সংবিধান সে দেশের মৌলিক আইন
ঠিক ৪৭ বছর আগে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কেশবানন্দ ভারতী বনাম কেরালা সরকার মামলায় ঐতিহাসিক এক রায় দিয়েছিল, যা ভারতের বিচারবিভাগের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে গণ্য।
১৩ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ ৭-৬ ভোটে রায় দিয়েছিল সংবিধানের মূল কাঠামো পরিবর্তনযোগ্য নয় এবং সংসদ তা বদল করতে পারবে না।
সংবিধান সংশোধন
দেশের সংবিধান সে দেশের মৌলিক আইন। অন্য সমস্ত আইন তৈরি ও প্রয়োগ করা হয়ে এর ভিত্তিতে। কিছু সংবিধানের কিছু অংশ সংশোধনযোগ্য নয়, এবং তাদের বিশেষ বিধিবলে সুরক্ষার বন্দোবস্ত করা রয়েছে। ভারতে সংবিধান গৃহীত হবার সময় থেকেই সংসদ এর গুরুত্বপূর্ণ অংশের সংশোধন করতে পারবে কিনা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। স্বাধীনতার পরের প্রথমদিকের বছরগুলিতে সুপ্রিম কোর্ট সংবিধান সংশোধনের পূর্ণ অধিকার সংসদকে দিয়েছিল, যা ধরা পড়েছে শংকরী প্রসাদ (১৯৫১) ও সজ্জন সিং (১৯৬৫)-দের দেওয়া রায়ে। এর কারণ হিসেবে মনে করা হয় প্রথম দিকে শীর্ষ আদালত রাজনৈতিক নেতাদের প্রজ্ঞার উপরে পূর্ণ ভরসা রেখেছিলেন, কারণ স্বাধীনতা আন্দোলনের যোদ্ধারাই সংসদ সদস্যের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
আরও নোট ছাপা হবে, না হবে না
পরবর্তী বছরগুলিতে সংবিধান শাসকদলের স্বার্থানুসারে সংশোধিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে গোলোকনাথ মামলায় (১৯৬৭)-তে বলেছিল সংসদের সংশোধনী ক্ষমতা মৌলিক অধিকারকে স্পর্শ করতে পারে না, সে ক্ষমতা একমাত্র গণ পরিষদেরই রয়েছে।
সংসদ ও বিচারবিভাগের মধ্যে সংঘাত
১৯৭০-এর প্রথম দিকে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সরকার সংবিধানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনে (২৪, ২৫, ২৬ ও ২৯ তম) যা সুপ্রিম কোর্টের ১৯৭০ সালের আরসি কুপার, ১৯৭০ সালের মাধবরাও সিন্ধিয়া ও পূর্বোক্ত গোলোকনাথের মামলার রায়কে খর্ব করে।
আরসি কুপার মামলায় আদালত ইন্দিরা গান্ধীর ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ নীতি মানেনি এবং মাধবরাও সিন্ধিয়া মামলায় পূর্বতন শাসকদের সম্পত্তি অবলুপ্তির সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিয়েছিল।
গোলোকনাথ রায় সহ চারটি সংশোধনীই কেশবানন্দ ভারতী মামলায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে- যেখানে ধর্মীয় নেতা কেশবানন্দ ভারতী বনাম কেরালা সরকার সহ দুই রাজ্যের ভূমি সংস্কার আইনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। গোলোকনাথের মামলায় যেহেতু ১১ জন বিচারপতি ছিলেন, ফলে তার সংশোধনীর জন্য বৃহত্তর বেঞ্চের প্রয়োজন হয়, সে সুবাদেই কেশবানন্দ মামলায় ১৩ বিচারপতির বেঞ্চ প্রস্তুত করা হয়।
সরকারের বিরুদ্ধে আইনজীবী হিসেবে মামলা লড়েছিলেন ননী পালকিওয়ালা, ফলি নরিম্যান এবং সোলি সোরাবজির মত নামি আইনজীবীরা।
কেশবানন্দ মামলার রায়
এই মামলায় ৭-৬ হিসেবে রায় দেওয়া হয় সংবিধানের মূল কাঠামো বদলানো যাবে না। আদালত বলে ৩৬৮ নং অনুচ্ছেদে সংসদের হাতে সংশোধনী ক্ষমতা থাকলেও সংবিধানের কিছু অংশ সংশোধন করা যাবে না, যার জেরে সংবিধানের চরিত্র বদলাতে পারে না।
ডিপ ন্যুড- সাইবার জগতের বড় বিপদ
মূল কাঠামো বলতে কী বোঝায় তা আদালত নিশ্চিত করে বলেনি, তবে - সার্বভৌমত্ব, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এসব নীতি এই মূল কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তার পর থেকেই আদালত এ ধারণায় নতুন সংযোজনী শুরু করে। যে সাতজন এর পক্ষে ছিলেন, তাঁরা হলেন প্রধান বিচারপতি এস এম সিক্রি, বিচরপতি কে এস হেগড়ে, এ কে মুখার্জি, জে এম শিলেট, এ এন গ্রোভার, পি জগমোহন রেড্ডি এবং এইচা আর খান্না। বিরুদ্ধে ছিলেন বিচারপতি এ এন রায়, ডিজি পালেকর, কেকে ম্যাছিউ, এমএইচ বেগ, এস এন দ্বিবেদী এবং ওয়াই ভি চন্দ্রচূড়।
কেশবানন্দের সময় থেকে মূল কাঠামো
এর পর থেকেই সংবিধানের মাহাত্ম্য বোঝাতে মূল কাঠামো বোঝানো হয়ে থাকে, যার মধ্যে পড়ে আইনের শাসন, বিচারবিভাগের স্বাধীনতা, ক্ষমতার ভাগাভাগি, ফেডেরালিজম, ধর্মনিরপেক্ষতী, সরকারের সংসদীয় ব্যবস্থা, স্বাধীন ও মুক্ত নির্বাচন নীতি, কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ইত্যাদি।
এর একটা উদাহরণ হল ১৯৯৪ সালে এস আর বোম্মাই এর সিদ্ধান্ত যখন সুপ্রিম কোর্ট বাবরি মসজিদ পতনের পর বিজেপি সরকার ফেলে দেবার সিদ্ধান্ত বজায় রাখে, কারণ ওই সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে বিপদ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল।
এই মতের সমালোচকরা বলেন এ পদ্ধতি অগণতান্ত্রিক কারণ অনির্বাচিত বিচারপতিরা সংবিধান সংশোধনী খারিজ করে দিতে পারেন। আবার এর সমর্থকরা বলেন সংখ্যাগুরুবাদ ও কর্তৃত্ববাদের প্রেক্ষিতে এ এক অপরিহার্য ছাঁকনির কাজ করে।