সারা পৃথিবীতেই করোনার জেরে বয়স্ক মানুষদের মৃত্যুই বেশি হচ্ছে। বিশেষ করে যাঁদের আগে থেকে হৃদরোগের মত সমস্যা রয়েছে। মার্কিন রোগনিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বলছে, সারা বিশ্বে করোনাঘটিত রোগে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ৮৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষদের।
এই ভাইরাসে বয়স্কদের বেশি ঝুঁকি কেন?
জার্নাল অফ ট্রাভেল মেডিসিনে সম্পাদকের দফতরে পাঠানো এক চিঠিতে লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ পাবলিক হেলথের অধ্যাপক জেমস ডায়াজ একটি চিঠি লিখেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, যাঁরা হৃদরোগ, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস ও দীর্ঘদিনের কিডনির সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের ওষুধের মধ্যে মৃত্যুর কারণ নিহিত থাকতে পারে।
কী দাবি করছেন তিনি?
বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগের সমস্যায় ভোগা রোগীদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি চালু ওষুধ হল অ্যাঞ্জিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম ইনহিবিটর (ACEIs) এবং অ্যাঞ্জিওটেনসিন রিসেপটর ব্লকার (ARBs)।হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভোগা বয়স্ক মানুষ এবং যাঁদের ডায়াবেটিস ও কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাঁদেরও এই ওষুধগুলিই দেওয়া হয়ে থাকে।
পশুদের উপর ব্যবহার করে দেখা গিয়েছে, ACEI ও ARB ইন্ট্রাভেনাস ইঞ্জেকশন ব্যবহার করলে তাদের হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের রক্ত চলাচলের উপর ACE2 রিসেপটর বাড়ে।
আরও পড়ুন, ২১ দিনের লকডাউনে প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের জোগান দিতে ভারত কতটা প্রস্তুত?
মানবশরীরে এর প্রভাব কী দেখা গিয়েছে?
ACE2 রিসেপটর করোনাভাইরাসের বহিরঙ্গে উপস্থিত প্রোটিনের সঙ্গে আবদ্ধ হয়। আবার SARS-CoV-2-র বহিরঙ্গে উপস্থিত “S” প্রোটিনের সঙ্গে আবদ্ধ হয় করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগীর নিম্ন শ্বাসনালীর ACE2 রিসেপটর।
এর জেরে ভাইরাস সহজেই রোগীর ফুসফুসে পৌঁছতে পারে, যার ফলে রোগীর নিউমোনিয়া হতে পারে এবং শ্বাসযন্ত্র অকেজো হয়ে পড়তে পারে।
২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত চিনের ১০৯৯ জন করোনারোগীর বিস্তারিত বিশ্লেষণ উদ্ঋত করে ডায়াজ দেখাচ্ছেন, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, করোনারি আর্টারির রোগ এবং কিডনির রোগীরা ব্যাপক ভুগেছেন। এই ১০৯৯ জনের তালিকায় আইসিইউয়ে ভর্তি রোগী, কৃত্রিম ভেন্টিলেশনের রোগী এবং মৃতরা রয়েছেন।
এঁরা সকলেই ACEI ও ARB জনিত চিকিৎসার মধ্যে ছিলেন, ফলে এমনটা হতে পারে যে কোভিড ১৯ -এ এই ওষুধ সম্ভাব্য ঝুঁকিপ্রবণ।
ডায়াজ বলছেন, এই সব রোগে আগে থেকেই ভোগা বয়স্ক নাগরিকরা সম্ভবত ওই ওষুধগুলি ব্যবহার করছিলেন, ফলে তাঁদের ক্ষেত্রে এটা জীবনমরণ সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।
শিশুরা যে এ রোগের হাত থেকে বেঁচে যাচ্ছে তার সম্ভাব্য কারণ তাদের নিম্ন শ্বাসনালীতে ACE2 রিসেপ্টর কম থাকে যে কারণে করোনাভাইরাস তাদের ফুসফুসে পৌঁছতে পারছে না।