মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি আবশ্যকীয় পণ্যসামগ্রী বাড়ি বাড়ি পৌঁছনো নিশ্চিত করবার ব্যাপারে সমস্ত পদক্ষেপ নেবে। আপাতত ২১ দিনের জন্য সারা দেশলে লকডাউনের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে সবচেয়ে আবশ্যিক যা, সেই খাদ্যের জোগানের ব্যাপারে ভারত কতটা প্রস্তুত - খতিয়ে দেখল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
জাতীয় পর্যায়ে খাদ্যসামগ্রী কী পরিমাণে রয়েছে? এই বিধিনিষেধ পরিস্থিতিতে কী প্রভাব পড়তে চলেছে?
খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে কৃষিপণ্যের ব্যাপারে সত্যিই কোনও সমস্যা নেই। ১ মার্চের হিসেবে এফসিআইয়ের কাছে চাল ও গম রয়েছে ৭৭.৬ মিলিয়ন টন। ১ এপ্রিল পর্যন্ত ন্যূনতম যে পরিমাণ কৌশলগত মজুত রাখার প্রয়োজন হয়, তার তুলনায় এই পরিমাণ সাড়ে তিন গুণ বেশি। এ ছাড়া নতুন গম বাজারে আসবে সামনের মাসে।
খাদ্যশস্যের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। নাফেড (ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল কোঅপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া)-এর কাছে ১৯ মার্চ পর্যন্ত মজুত খাদ্যশস্যের পরিমাণ ২.২৫ মিলিয়ন টন। এর সঙ্গেই বাজারে আসতে শুরু করে দিয়েছে চানা, মুসুর ও মটরের মত নতুন রবিশস্য।
কোভিড ১৯ সংক্রান্ত প্রভাব উৎপাদনের উপর পড়বে না, কারণ রবি শস্য পাকার পথে, যদি না ইতিমধ্যেই ফসল তোলা হয়ে গিয়ে থাকে। এই উৎপাদন বাজারে পৌঁছনো এবং গ্রাহকের কাছে পৌঁছনোর বিষয়টি নিয়েই সমস্যা। সোজা কথায় বললে, সমস্যা জোগানের নয়, জোগান শৃঙ্খলের। কিন্তু এফসিআই বা নাফেডের হাতে থাকা চাল, গম ও খাদ্যশস্য নিয়ে সমস্যা হবার কথা নয়। কারণ তাদের মজুতে থাকা পণ্য কেবল গুদাম থেকে রেশন দোকানে পৌঁছতে হবে। কেন্দ্রের কাছে এটা একটা সুযোগও বটে, যার মাধ্যমে নিয়মিত মুদি দোকান ও রেশন দোকানে এই সামগ্রীগুলি পৌঁছে দেওয়া যাবে।
দুধ, চিনি ও ভোজ্য তেলের কী হবে?
ডেয়ারিগুলি চাষিদের কাছ থেকে ভেন্ডরের মাধ্যমে দুধ সরাসরি কেনে। আখও একইভাবে সুগারমিলের হাতে আসে কৃষকদের কাছ থেকে। দুটি ক্ষেত্রেই বাজারে কৃষিসামগ্রী পৌঁছোন সমস্যা নয়।
বর্তমান লকডাউন পরিস্থিততে হোটেল রেস্তোরাঁ ক্যাটারিং যেহেতু বন্ধ থাকবে, ফলে এখন তেল, দুধ, চিনির জোগান ও চাহিদা কেবল উপভোক্তার, ব্যবসা থেকে ব্যবসা চক্রটি এখন অনুপস্থিত।
আরও পড়ুন, করোনা সংক্রমণ কিন্তু সবসময়ে শ্বাসযন্ত্রের পরীক্ষায় ধরা পড়ছে না
এর দুটি দিক রয়েছে।
একদিকে দুধ, দই, চিনি ও ব্র্যান্ডেড তেলের বিক্রি গত কয়েকদিনে বেড়ে গিয়েছে। গুজরাট কোঅপারেটিভ মিল্ক মার্কেটিং ফেডারেশনের এমডি আর এস সোধি বলছেন, দিল্লি এনসিআর এলাকায় আমূল দুধের দৈনিক বিক্রি এখন ৩৭ লক্ষ লিটার, মহারাষ্ট্রে ২২ লক্ষ লিটার। সাধারণ ভাবে দিল্লিতে দৈনিক বিক্রি হয় ৩১ থেকে ৩২ লক্ষ লিটার এবং মহারাষ্ট্রে এই পরিমাণ ১৮-১৯ লক্ষ লিটার।
কিন্তু কেউই যখন আর বাইরের খাবার প্রায় খাচ্ছেন না, এই পরিস্থিতিতে আইসক্রিম ও চিজ তৈরির জন্য স্কিমড মিল্ক পাউডারের বিক্রি ব্যাপক কমে গিয়েছে। চিনির ক্ষেত্রেও মিষ্টি বা নরম পানীয়ের জন্য নিয়মিত বিক্রি একেবারেই প্রায় নেই। তেল সংস্থাগুলি পেট্রোলের সঙ্গে মেশানোর জন্য চিনির বাই প্রোডাক্ট ইথানল কিনছে না, কারণ মানুষজন বাড়িতেই রয়েছেন এবং গাড়ি নিয়ে বেরোচ্ছেন না।
ফলে ব্যবসা থেকে ব্যবসার শৃঙ্খলটি একদিকে যেমন ভেঙে পড়েছে, তেমনই ব্যবসা থেকে উপভোক্তা শৃঙ্খলের জন্য প্রচুর পণ্য মজুত।
আরও পড়ুন, করোনায় মৃত রোগীর দেহ নিয়ে কী করতে হবে?
তাহলে কোন কোন খাদ্যপণ্যের জোগান বিঘ্নিত হবে?
মূলত সব্জি ও ফল। নবি মুম্বইের ভাশি মার্কেটের ফ্রুট ট্রেডার্স অ্যান্ড কমিশন এজেন্ট জানিয়ে দিয়েছে বুধবার থেকে তারা কাজ বন্ধ করে দেবে। এই পরিস্থিতি অন্যান্য বাজারেও ঘটতে চলেছে। এখন গ্রামীণ এলাকায় করোনাতঙ্ক কিছুটা কম। তবে উত্তর প্রদেশের শামলি জেলার খেরি বৈরাগী এলাকার আখ চাষি জিতেন্দর সিং হুড়ার আশঙ্কা, আগামী দিনগুলিতে ফসল কাটার চাষির সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমবে। তিনি বলছেন, বহু পরিযায়ী শ্রমিক বিহারে নিজের গ্রামে ফিরে গিয়েছেন। এর ফল পড়বে ফসল কাটার এই চূড়ান্ত মরশুমে।
আগামী দিনগুলির জন্য সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?
কোভিড ১৯ নিয়ে জাতির উ্দ্দেশে প্রথম ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন দুধের মত অত্যাবশ্যক পণ্যের জোগান নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। সম্ভবত এর জেরেই গ্রামীণ পিছিয়ে থাকা এলাকা থেকে শহরাঞ্চল পর্যন্ত দুধের জোগান নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু অন্য খাদ্য সামগ্রী নিয়ে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এমনটা দেখা যাচ্ছে না। আন্তঃরাজ্য ট্রাক চলাচলের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার জেরে অন্ধ্র সীমান্তে দাঁড়িয়ে পড়ছে টোমাটো বোঝাই ট্রাক। কর্নাটকের বেগুন বোঝাই গাড়ি হায়দরা বাদ পৌঁছতে পারছে না। রত্নগিরি ও সাংলির আলফোনসো আম এবং আঙুর তোলা হচ্ছে, কিন্তু তা কোথাও পৌঁছনোর জো নেই।
ফল ও সব্জি সংগ্রহ এবং তা বিপণন কেন্দ্রে পৌঁছন নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। অনলাইন মুদি দোকান বন্ধ, উত্তর প্রদেশের সুগার মিলের হাত থেকে সময় চলে যাচ্ছে। এসব নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, লকডাউনের প্রথম দিন থেকে দুধের ক্ষেত্রে যেমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।