Advertisment

উপসর্গহীনদের থেকে কীভাবে করোনা সংক্রমণ ছড়াতে পারে?

কতজন রোগাক্রান্ত, তার চেয়ে বড় প্রশ্ন কারা অন্যদের মধ্যে রোগ ছড়াচ্ছেন। উপসর্গবিহীনরা কি অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারেন?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

করোনার সময়ে ঘরে থাকার বার্তা পশ্চিমবঙ্গের রাস্তায় (ছবি- পার্থ পাল)

যাঁরা উপসর্গবিহীন, তাঁদের মধ্যে থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর বিষয়টি এখন বিজ্ঞানীদের একটা মাথা ব্যথা।

Advertisment

এরকম অনেকেই থাকতে পারেন। যেহেতু এই উপসর্গগুলি খুবই আবছা এবং প্রায় অনুপস্থিত, ফলে যা দেখা যাচ্ছে, সংক্রমিতের সংখ্যা তা না-ও হতে পারে। সত্যিকারের সংখ্যাটা অনেক বা অল্প বেশি হতে পারে।

করোনায় শিশুরা আক্রান্ত কম, কিন্তু তাদের ঝুঁকি বেশি

অনেক বিশেষজ্ঞরাই বলবার চেষ্টা করছেন যে সংক্রমিত থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর হার এ বিষয়টা বোঝবার জন্য যথেষ্ট নয়। এই হার যদি ২ হয়, তাহলে এমন হতে পারে যে ২০ জন ব্যক্তি প্রত্যেকে ২জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছেন, আবার হিসেবটা এমনও হতে পারে যে তাঁদের মধ্যে ১৯ জন কাউকে সংক্রমিত করেননি, একজনই ৪০ জনকে সংক্রমিত করেছেন।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফ্রি শামান চিন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখিয়েছেন সেখানে মহামারী ছড়িয়েছিল তত অসুস্থ নন, এমন ব্যক্তিদের থেকে। তাঁর হিসেব, প্রকোপের শুরুতে ৮৬ শতাংশ সংক্রমণ এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে ঘটেছিল, যাঁরা ডাক্তার দেখানোর মত অসুস্থ বলে নিজেদের বোধই করেননি।

কোভিড ১৯ সংক্রমণ ও মৃত্যুর জাতীয় হিসাব ও বিশ্লেষণ

এই গবেষণাপত্রটি সায়েন্স ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে এবং নীরব বাহকদের সম্পর্কে সতর্কতাবাণী হিসেবে জনপ্রিয়ও হয়েছে। চিনের অন্য একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সে দেশে একটি পরিবারে সংক্রমিতদের মধ্যে উপসর্গ বিহীন থেকে অতিউপসর্গজনিতরাও রয়েছেন।

আইসল্যান্ডে যথেচ্ছ টেস্টিংয়ে দেখা গিয়েছে ৫০ শতাংশ ব্যক্তি সংক্রমিত কিন্তু উপসর্গবিহীন।

কিন্তু কতজন রোগাক্রান্ত, তার চেয়ে বড় প্রশ্ন কারা অন্যদের মধ্যে রোগ ছড়াচ্ছেন। উপসর্গবিহীনরা কি অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারেন?

শামান বলছেন, বাস্তবতা ওরকম স্পষ্ট নয়। উপসর্গ ব্যক্তিভিত্তিক এবং নিজে থেকে জানানোর বিষয়।

“মৌলিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বের ব্যাপারে চোখ খুলে দিতে পারে এই মহামারী”

সামান্য করোনাভাইরাসের উপসর্গে জ্বর ছাড়া আর কিছু থাকে না, এবং অধিকাংশ সময়েই আর সব ঠিক থাকলে জ্বর কেউ মাপেনও না। নতুন তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে খুব মৃদু সংক্রমণের ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি গন্ধ পাবার ক্ষমতা হারাতে পারেন। এরকম হলে তাঁদের নিজেদের অসুস্থ বলে বিবেচনা করা উচিত।

নতুন করোনাভাইরাস আসার আগে শামান কোভিড ১৯ উপসর্গের মত বিষয়ে গবেষণা করেছিলেন, জ্বর ও ঠান্ডা লাগা নিয়ে। নিউ ইয়র্ক সিটিতে বাইরে বেরোনোর মত ২৫০০ স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিকে নিয়ে তিনি ঠান্ডা ও সর্দিকাশির ভাইরাসের যে গবেষণা করেছিলেন, তাতে তিনি বিভিন্নতা পেয়েছিলেন- তিনি দেখেছিলেন উপসর্গ রয়েছে কিন্তু অসুস্থতা নেই, অসুস্থতা রয়েছে কিন্তু উপসর্গ নেই।

আরেকটি গবেষণায় তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা ২০০ জনের মধ্যে গবেষণায় দেখেছিলেন, ফ্লু-এর ক্ষেত্রে প্রতি চারজনে একজন ডাক্তার দেখান, ঠান্ডা লাগলে ডাক্তারের পরামর্শ নেন প্রতি ২৫ জনে একজন।

কোভিড ১৯ পূর্ববর্তী সময়ে অনেকেই কাশি, গলা ব্যথা, ঠান্ডা লাগার মত উপসর্গ নিয়ে কাজে যেতেন, দোকানে যেতেন, রেস্তোরাঁয় যেতেন এবং কখনও কখনও প্লেনও চাপতেন। শামান বলছেন, এ কারণেই শ্বাসজনিত এই ভাইরাস এত দ্রুত ছড়াতে পারে।

প্রাবল্যের ভিন্নতার কারণেই এই অতিমারীর সঙ্গে যুদ্ধ কঠিন হয়ে পড়েছে- সার্সের মত প্রায় সকলের মধ্যে যদি এর প্রাবল্য থাকত তাহলে একে আটকানো সহজ হত। এটা অধিকাংশের মধ্যেই যদি মৃদু হত, তাহলে একে ফ্লুয়ের মত করে মোকাবিলা করা যেত। কিন্তু এ কিছুজনের ক্ষেত্রে মারাত্মক ও কিছু জনের ক্ষেত্রে মৃদু- এমনকি নীরব।

আমেরিকায় অধিকাংশ অল্পবয়সীরা হাসপাতালে যাচ্ছেন, চিনে যাঁদের অবস্থা গুরুতর তাঁদের অধিকাংশের বয়স ষাটের উপর। এটা ভাইরাসের মিউটেশনের কারণে হচ্ছে বলে মনে হয় না। এখানে স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এবং সচেতনতার অভাবের প্রশ্ন রয়েছে। অধিকাংশ চিনারাই শুরুতে মনে করেছিলেন তাঁদের ঠান্ডা লেগেছে বা সর্দি হয়েছে।

এতদিনে জানা গিয়েছে সংক্রমিত হবার ৫ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে অসুস্থ বোধ করবার জন্য এবং এ কদিনে একজন সংক্রমিত কতজনের মধ্যে রোগ ছড়াতে পারবেন, তা অজানা।

গবেষণায় শামান ও তাঁর সহকর্মীরা ১০ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারি, চিন ভ্রমণ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা জারির ঠিক আগে পর্যন্ত উপসর্গের রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করেছেন।

সেখান থেকে তিনি দেখাচ্ছেন ভাইরাস সংক্রমিত ব্যক্তিরা ভাল বোধ করছেন, সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, এবং সংক্রমণের নতুন শৃঙ্খল তৈরি করছেন।

সে কারণেই অসুস্থ বোধ করলে বাড়ি থাকতে বলা যথেষ্ট নয়। যথেষ্ট পরিমাণ টেস্ট এবং সংস্রব চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে সাফল্য আসবে। আমেরিকা এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত ব্যর্থ। এ অবস্থায় অন্যদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব রাখাই বাঞ্ছনীয়, যাতে সংক্রমণ দূরে রাখা যায়।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

coronavirus Asymptomatic
Advertisment