Advertisment

করোনাভাইরাস সংক্রমণ: বাড়িতে অন্তরীণ থাকার নিয়ম কী?

বাড়িতে অন্তরীণ থাকা সবসময়েই সেনা বাআধাসেনায় অপরিচিতদের সঙ্গে থাকার চেয়ে ভাল। সেখানে রোজ ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়া অন্য বিধিনিষেধও রয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Coronavirus, Quarantine

বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে মুখোশ পরিহিত নিরাপত্তাকর্মী (ছবি- পার্থ পাল)

করোনাভাইরাস রোগ (COVID 2019)-এর সঙ্গে যুঝতে ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রক বাড়িতে এক পক্ষকাল কীভাবে কোয়ারান্টাইন থাকতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। সেনাবাহিনী বা আধাসেনার চেয়ে বাড়িতে কোয়ারান্টাইন থাকার পদ্ধতি সরলতর। বাড়িতে কোয়ারান্টাইন থাকার নিজস্ব বিধিনিষেধ রয়েছে।

Advertisment

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব: বাড়িতে অন্তরীণ থাকার অর্থ কী?

অন্তরীণ থাকা হল কোনও সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবের সময়ে অন্যদের থেকে আলাদা থাকা। আলাদা থাকা বা আইসোলেশনের সময়ে রোগগ্রস্ত মানুষকে যাঁরা রোগগ্রস্ত নন, তাঁদের থেকে আলাদা রাখা হয়। কোয়ারান্টাইন বা অন্তরীণ থাকার মানে যাঁদের সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে তাঁদের পৃথক করা এবং তারপর দেখা যে তাঁরা অসুস্থ হচ্ছেন কিনা।

বাড়িতে অন্তরীণ থাকবেন কী ভাবে?

বাড়িতে অন্তরীণ থাকার অর্থ হল কোনও ব্যক্তিকে নিজের বাড়ির খোলামেলা একটি ঘরে বন্ধ রাখা, তাঁর জন্য অ্যাটাচড বা পৃথক শৌচাগার থাকলে ভাল হয়। যদি পরিবারের অন্য কাউকে সে ঘরে থাকতেই হয়, তাহলে দুজনের মধ্যে অন্তত এক মিটারের দূরত্ব রাখতেই হবে।

করোনাভাইরাস: সংক্রমণ যুঝতে কীভাবে এগোচ্ছেন বিজ্ঞানীরা?

কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে বাড়তি ঝুঁকির কথা মনে রাখতে হবে। তাঁকে বয়স্ক মানুষ, গর্ভবতী মহিলা, শিশু এবং বাড়ির মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা আছে এমন কারও কাছ থেকে দুরে থাকতেই হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে শিশুদের সংক্রমণের হার অন্যদের চেয়ে কম - চিনে ২০ বছরের নিচে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ২ শতাংশেরও কম। তবে, এই ভাউরাস যেহেতু অজানা, সে কারণে সরকারের বাড়িতে অন্তরীণ থাকার নির্দেশিকায় শিশুদের থেকেও দূরত্ব বজায় রাখবার কথা বলা হয়েছে।

সমস্ত সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া ১৪ দিনের জন্য এড়িয়ে চলতে হবে। অন্তরীণ ব্যক্তি ডিশ, জলের গেলাস, কাপ, তোয়ালে, বিছানা বাড়ির অন্য কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না এবং সর্বদা মাস্ক পরে থাকবেন। রোগী, কেয়ারগিভার, নিকটজন, সকলেই সাধারণ ব্লিচ সলিউশন (৫ শতাংশ) বা সোডিয়াম হিপোক্লোরাইট সলিউশন (১ শতাংশ) দিয়ে জীবাণুমুক্ত করবেন এবং তারপর অনেকটা গভীরে পুঁতে দিয়ে বা জ্বালিয়ে দিয়ে সেগুলি নষ্ট করে দেবেন। হেলথ সার্ভিসের ডিরেক্টর জেনারেলের নির্দেশিকায় এমনটাই বলা রয়েছে।

রোগ ছড়ানো নিয়ন্ত্রণ করতে এটি কি পরিচিত পদ্ধতি?

কোভিড ১৯ সনাক্তকরণ এবং নজরদারির কাজে যুক্ত আধিকারিকরা বলছেন, "সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। এক আধিকারিকের কথায়, কোনও ব্যক্তিকে অন্তরীণ থাকার নিয়মাবলীতে শিথিলতা দেখালে তার ফল কী হবে, তা বোঝালে মানুষ অতিরিক্ত সাবধান হয়ে যান।"

জল-সাবানই কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ আটকানোর মোক্ষম অস্ত্র

এইটাই হল আসল কথা। যদি কোনও ব্যক্তি ১৪ দিনের অন্তরীণ থাকার সময়কাল রোগের সংস্পর্শে না এসে কাটানোর পর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা শুরু করেন এবং ফের একবার COVID-2019 রোগীর সংস্পর্শে আসেন, তাহলে তাঁকে ফের ১৪ দিনের জন্য বাড়িতে অন্তরীণ থাকতে বলে জানাচ্ছেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের সংক্রামক রোগ বিষয়ক বিভাগীয় প্রধান ডক্টর আর আর গঙ্গাখেড়কর।

কাদের বাড়িতে অন্তরীণ রাখা প্রয়োজন?

COVID-2019 রোগে আক্রান্ত বা সংক্রমণ সম্ভাবনা যুক্ত কোনও ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন, এমন প্রত্যেকের বাড়িতে অন্তরীণ থাকা উচিত। তার কারণ শুধু এই নয় যে এ রোগ অতি সংক্রামক। তার আরও একটা কারণ হল এই ভাইরাসের ইনকিউবেশনের সময়কাল ১৪ দিন। এই ১৪ দিনের মধ্যে কোনও ব্যক্তির কোনও রোগলক্ষণ না দেখা দিলেও তিনি ভাইরাস ছড়াতে পারেন।

COVID-2019-এর রোগীদের সঙ্গে সংস্পর্শ এ ভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে:

COVID-2019 আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির সঙ্গে একই বাড়িতে বসবাস;

COVID-2019 আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সংস্পর্শ বা তাঁর সংক্রমিত নিঃসরণের সংঙ্গে প্রয়োজনীয় সুরক্ষাকবচ ব্যাতিরেকে সংস্পর্শ;

বদ্ধ পরিবেশে যে ব্যক্তি COVID-2019 সংক্রমিত কারও মুখোমুখি সংস্পর্শে এসেছেন যখন উভয়ের মধ্যে দূরত্ব ১ মিটারের কম ছিল। এর মধ্যে বিমানযাত্রাও ধরতে হবে।

বাড়িতে অন্তরীণ থাকার সময়ে পরিবারের লোকজনকে কী ধরনের নিয়ম মেনে চলতে হবে?

প্রথমত পরিবারের নির্দিষ্ট একজনই মাস্ক ও গ্লাভস পরিহিত অবস্থায় কেয়ারগিভার হওয়া উচিত। সমস্ত রকম শারীরিক সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে, বিছানাপত্রও আলাদা হওয়া উচিত। কেউ দেখতে আসা চলবে না। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, "কোনও ব্যক্তি অন্তরীণ থাকবার সময়ে যদি তাঁর রোগলক্ষণ দেখা যায়, তাহলে তাঁর নিকটজনের সকলকেই ১৪ দিনের অন্তরীণ থাকতে হবে এবং আরও ১৪ দিন বা ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় রোগ বিষয়ে নেতিবাচক রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত ফলো আপ করতে হবে।"

বাড়িতে অন্তরীণ থাকবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষিত হল জীবাণুমুক্ত করা এবং ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা সব কিছু ১ শতাংশ সোডিয়াম হাইপোক্লারাইট দিয়ে পরিষ্কার করা। শৌচাগার ফিনাইল জাতীয় বা বাড়ির জন্য ব্যবহৃত অন্য কোনও ব্লিচিং সলিউশন দিয়ে পরিষ্কার করা যেতে পারে। জামাকাপড় আলাদা ধুতে হবে।

সেনাবাহিনীর চেয়ে এখানে বিধিনিষেধ কম কেন?

বাড়িতে অন্তরীণ থাকা সবসময়েই সেনা বাআধাসেনায় অপরিচিতদের সঙ্গে থাকার চেয়ে ভাল। সেখানে রোজ ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়া অন্য বিধিনিষেধও রয়েছে। খেলাধুলো, একসঙ্গে টিভি দেখা ও ব্যারাকে একসঙ্গে খাওয়া ছাড়া অন্য ব্যারাক সদস্যদের সঙ্গে কোনও পারস্পরিকতার বিষয় সেখানে নেই।

coronavirus
Advertisment