ভারতের উড়ান পরিষেবাগুলির মধ্যে সর্ববৃহৎ পরিবহন সংস্থাটি হল ইন্ডিগো (IndiGo)। জনপ্রিয়তার নিরিখেও শীর্ষস্থানে রয়েছে এই উড়ান সংস্থা। দেশে ইন্ডিগোই সেই সংস্থা যারা সাধারণ মানুষের জন্য কম খরচে প্লেনে চড়ার আনন্দ দিয়েছিল। কিন্তু লকডাউনে বদলে গেল সেই চিত্র। দেশের বৃহত্তম বেসরকারি উড়ান সংস্থা বাধ্য হল কর্মী ছাঁটায়ের পথে হাঁটতে।
করোনার জেরে লকডাউন। আর এর ফলে বন্ধ ব্যবসাপাতি। অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রাবল্যে মোট কর্মীদের ১০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করল এই সংস্থা। কিন্তু ভয় সেখানেই। ইন্ডিগো যে কেবল শুধু জনপ্রিয় তাইই নয়, ব্যালেন্সশিট বলছে দেশের মধ্যে এটিই সবচেয়ে 'লাভবান' উড়ান সংস্থা। লকডাউনের জেরে অর্থনৈতিক টানাপোড়নে রয়েছে সকলেই। কিন্তু এর মাঝে বৃহত্তম সংস্থা ইন্ডিগোকেই যদি এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তবে বাকি সংস্থাগুলির কী হবে?
ঠিক কোন অবস্থায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হল ইন্ডিগো?
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে গত কয়েক মাস ধরে আন্তর্জাতিক-অন্তর্দেশীয় সব উড়ান বন্ধ রয়েছে দেশে। ২৫ মে থেকে অন্তর্দেশীয় বিমানের উড়ানে ছাড়পত্র মিললেও, এই মুহূর্তে হাতেগোনা কিছু বিমানই চলাচল করছে। তাইও লাভের দিক দূরঅস্ত, ক্ষতির খতিয়ানই ভাবিয়ে তুলছে উড়ান সংস্থাটিকে। লকডাউনের ফলে আদায়যোগ্য নয় (নন-রিকভারেবল) এমন ক্ষতির মুখ দেখেছে ইন্ডিগো। যার ফলে বেতন হ্রাস, বিনা বেতনে ছুটি এবং সবশেষে কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছে সংস্থাটি।
এই মুহূর্তে ইন্ডিগোর কর্মীসংখ্যা ২৩ হাজার ৫৩১। তার মধ্যে ১০ শতাংশকে ছাঁটাই করা হলে অনেকেই চাকরি হারাবেন। কিন্তু এ ছাড়া উপায় নেই বলে জানিয়েছেন উড়ান সংস্থার কর্ণধার রণজয় দত্ত। গত মাসেই সংস্থার তরফে জানান হয় যে ২০২০ সালের মার্চ মাসে মোট ৮৭০.৮০ কোটি টাকা লোকসান করেছে তারা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে যেখানে নগদের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৪১২.৮ কোটি, ৩১ মার্চ ২০২০-তে সেই নগদের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৯২৮ কোটিতে। গত মাসে ঠিক এই কারণে পাইলটদেরও বিনা বেতনে ছুটিওতে পাঠায় ইন্ডিগো। অর্থনীতির কাঠামোকে ঠিক রাখতেই এই সিদ্ধান্ত এমনটাই জানান হয়েছে সংস্থার পক্ষ থেকে।
কিন্তু বেতন হ্রাসের প্রয়োজন হল কেন?
উড়ান পরিবহন এমন এক ব্যবসা যেখানে জ্বালানির খরচটাই বিপুল। এরপর থাকে বিমান লিজ, রক্ষণাবেক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ খরচ। লকডাউনে উড়ান পরিষেবা বন্ধ হতেই জ্বালানি তেলের খুচরো বিক্রেতারা বিমান চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় টারবাইন তেলের দাম প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে দেয়। কিন্তু আনলক পর্যায়ে বিমান পরিষেবা চালু হতেই দাম বাড়ানো শুরু করে তাঁরা। এহেন পরিস্থিতিতে মুশকিলে পড়ে উড়ান সংস্থাগুলি। একদিকে সামাজিক দূরত্ব বিধি মানতে যাত্রীবোঝাই বিমান চালাতে অপারক তাঁরা, অন্যদিকে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি। ফলে ফের ঘাটতির মুখে পড়ে আয়ের হিসেব।
দেশে উড়ান পরিবহন ক্ষেত্রের ঠিক কী অবস্থা?
ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ)-এর তরফে জানান হয় উড়ান পরিবহনের ইতিহাসে কোনদিন এমন দুর্দিনের সম্মুখীন হতে হয়নি এই ক্ষেত্রটিকে। ২০২০ সালে এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকাগুলিতে এক ভয়ঙ্কর অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে উড়ান সংস্থাগুলি।শুধুমাত্র করোনার জেরেই ক্ষতি হয়েছে ২৯ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ভারতীয় উড়ান সংস্থাগুলির ক্ষতি হয়েছে ১১.৬১ বিলিয়ন ডলার। আর সেই ক্ষতির কোপেই চাকরি হারিয়েছেন কয়েক লক্ষ কর্মী।
Read the story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন