Advertisment

মাস্ক ব্যবহার নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মত বদল- গোটা পৃথিবীতে কী নিয়ম

পরিবর্তিত গাইডলাইনে বলা হয়েছে, সকলেরই জনসমক্ষে নন-মেডিক্যাল কাপড়ের মাস্ক পরা উচিত। এই মাস্কে অন্তত তিনটি বিভিন্ন ধরনের বস্তুর স্তর থাকা প্রয়োজন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Face Mask WHO

একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, গোষ্ঠী সংক্রমণ আটকাতে বাড়িতে তৈরি মাস্কই যথেষ্ট

মাস্ক ব্যবহার নিয়ে নিজেদের অবস্থান বদলাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা বলেছে কোভিড-১৯ ছড়ানোর ঘটনা প্রতিরোধ করার জন্য জনসমক্ষে ফেস মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। ইতিমধ্যে সারা পৃথিবীতে ৬.৭ মিলিয়ন মানুষ এ রোগে আক্রান্ত, মৃতের সংখ্যা ৪ লক্ষ। এক বিবৃতিতে সংস্থার মহাসচিব বলেছেন বিভিন্ন প্রমাণ পাওয়ার পর এবং আন্তর্জাতিক স্তরের বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে নিবিড় আলোচনার পর পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে নতুন গাইডলাইন প্রকাশ করা হচ্ছে।

Advertisment

হুয়ের নতুন গাইডলাইন কী?

ফেস মাস্ক নিয়ে হুয়ের নতুন গাইডলাইন পূর্ববর্তী গাইডলাইনের থেকে অনেকটাই আলাদা। এতদিন অবধি তারা বলেছিল, স্বাস্থ্যবান মানুষদের মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই এবং বলা হয়েছিল যাঁরা অসুস্থ বা তাঁদের পরিচর্যা করছেন, তাঁদের মেডিক্যাল মাস্ক পরা উচিত।

ভারতের ও সারা পৃথিবীর রেস্তোরাঁ ফের খোলার জন্য কী কী ব্যবস্থা গৃহীত হচ্ছে

এখন পরিবর্তিত গাইডলাইনে বলা হয়েছে, সকলেরই জনসমক্ষে নন-মেডিক্যাল কাপড়ের মাস্ক পরা উচিত। এই মাস্কে অন্তত তিনটি বিভিন্ন ধরনের বস্তুর স্তর থাকা প্রয়োজন।  যদি কোনও ব্যক্তির কোভিড উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে তিনি মেডিক্যাল মাস্ক পরবেন এবং সেলফ আইসোলেশনে যাবেন ও যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

সরকারগুলিকে হুয়ের পরামর্শ, তারা যেন যেসব জায়গায় ব্যাপক হারে সংক্রমণ ছড়িয়েছে এবং যেসব জায়গায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা মুশকিল, যেমন গণপরিবহণ, দোকান বা বদ্ধ জায়গা, সেখানে যেন নাগরিকদের মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হয়।

এছাড়া যেসব জায়গায় ব্যাপক হারে সংক্রমণ ছড়িয়েছে সেসব জায়গার ক্ষেত্রে হুয়ের পরামর্শ, চিকিৎসাক্ষেত্রে কর্মরত সকলেই যেন মেডিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করেন, কেবল কোভিড রোগীদের পরিচর্যাকারী কর্মীরাই নন।

সাধারণ মানুষকে মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহ দিলে কি কোনও অসুবিধে হতে পারে?

হু বলেছে সাধারণভাবে সমস্ত স্বাস্থ্যবান মানুষও যদি মাস্ক ব্যবহার করেন, তাহলে তার কিছু অসুবিধা ও ক্ষতিকর দিক রয়েছে। ফেস মাস্ক ঠিক মত ব্যবহার না করলে তা থেকে কোনও ব্যক্তি নিজেই নিজেকে সংক্রমিত করতে পারেন, নন মেডিক্যাল মাস্ত ভিজে গেলে বা নোংরা হয়ে যাওয়ার পর তা না বদলালে ক্ষতি হতে পারে, এর ব্যবহারের ফলে শ্বাসকষ্ট ও মাথাব্যথা যেমন হতে পারে তেমনই এর ব্যবহারের ফলে সুরক্ষা সম্পর্কে মিছে আশ্বাসও জন্ম নিতে পারে, যার ফলে হাতের স্বাস্থ্যবিধি না মানা বা শারীরিক দূরত্ব বজায় না রাখার মত ঘটনা ঘটতে পারে। 

ফেস মাস্কের গাইডলাইন- সারা পৃথিবী জুড়ে

ভারত- কেন্দ্র ৮ জুন থেকে মল, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ধর্মস্থান খোলার অনুমতি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রক সাধারণ পরিচালনা প্রণালী প্রকাশ করেছে। সেই গাইডলাইনে এই সমস্ত জায়গায় প্রবেশ করতে গেলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক বলে জানান হয়েছে।

কোভিড সংক্রমণ আটকাতে ‘সোশাল বাবল’-এর গুরুত্ব

আমেরিকা- মার্কিন সংস্থা সিডিসি জনসমক্ষে বেরোলে কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করতে বলেছে, তবে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য তৈরি মাস্ক সাধারণের ব্যবহারের জন্য নয় বলেও জানিয়েছে।

ব্রিটেন- সরকারের পরামর্শ মানুষ বদ্ধ স্থানে যদি মুখ ঢেকে রাখুন। সরকার বলেছে মুখ ঢেকে রাখলে কেউ যদি কোভিড-১৯ সংক্রমিত হন, তাঁর রোগের সম্ভাবনা কমবে। এ ছাড়া বিবিসি জানিয়েছে হাসপাতালের পরিদর্শনকারী ও আউট পেশেন্টদের মুখ ঢেকে রাখতে হবে এবং হাসপাতাল কর্মীদের সর্বক্ষণ মেডিক্যাল মাস্ক পরে থাকতে হবে।

 স্পেন- স্পেন যেখানে সোশাল ডিসট্যান্সিং মেনে চলা সম্ভব নয়, সেরকম ক্ষেত্রে ঘরের ভিতর ও বাইরে দু জায়গাতেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক বলে জানিয়েছে। ৬ বছরের নিচের শিশু ও যাঁদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা এর আওতা থেকে বাদ পড়বেন।

জার্মানি- এপ্রিলের শেষে, জার্মানি নতুন আইন এনেছে যার বলে গণপরিবহণ ও দোকানের মত জায়গায় কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক, তবে বিষয়টি এলাকার উপর নির্ভরশীল।

সিঙ্গাপুর- সরকার বলেছে বাড়ির বাইরে পা রাখলে মাস্ক পরতে হবে।  দৌড়োনো বা জগিংয়ের মত শারীরিক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটানো যেতে পারে। মাস্ক ছাড়া বাড়ির বাইরে কাউকে দেখা গেলে ৩০০ ডলার জরিমানা হবে এবং এ অপরাধ ফের করলে বেশি জরিমানা বা অন্য শাস্তি হতে পারে।

দক্ষিণ কোরিয়া- গণপরিবহণ বা ট্যাক্সিতে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক।

তথ্যপ্রমাণ

গত মাসে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, অতিমারীর মধ্যে মাস্কের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যতই বিতর্ক হোক, বিজ্ঞানীদের অধিকাংশই বলছেন এমনকী বাড়িতে তৈরি মাস্কও কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে অনেকটা সুরক্ষা দিতে পারে। যেমন,আরিজোনা, হারভার্ড ও সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় নিউ ইয়র্কের একটি জনসংখ্যার মধ্যে আঙ্কিক মডেল ব্যবহার করে দেখানো হয়েছে, যদি নিউ ইয়র্কের ৭০ শতাংশ ব্যক্তি প্রত্যেকবার বাইরে বেরোনোর সময়ে কার্যকর প্রফেশনাল মাস্ক ব্যবহার করতেন, তাহলে সে শহরে অতিমারী থাকত না।

লকডাউনে সত্যিই কত কোভিড মৃত্যু আটকানো গেল?

আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, গোষ্ঠী সংক্রমণ আটকাতে বাড়িতে তৈরি মাস্কই যথেষ্ট। যদিও এই গবেষণার মূল লেখক বলেছেন মাস্ক পরলেও শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে চলতে হবে।

নতুন গাইডলাইনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, “মাস্ক স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির সুরক্ষার (যাতে সংক্রমিত ব্যক্তির কাছ থেকে সংক্রমণ না আসে) জন্য ব্যবহৃত হতে পারে আবার উৎস নিয়ন্ত্রণের (সংক্রমিত ব্যক্তি যাতে আর সংক্রমণ না ছড়ান) জন্যও ব্যবহৃত হতে পারে।”

WHO coronavirus
Advertisment