Advertisment

গোষ্ঠী প্রতিরোধ অসম্ভব, বলছে গবেষণা

"এই গবেষণার ভিত্তিতে বোঝা যাচ্ছে স্বাভাবিক সংক্রমণের মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটির দিকে কোনও প্রস্তাবিত পদক্ষেপ শুধু অনৈতিকই নয়, অসম্ভবও।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
herd immunity

শিমলার লোয়ার বাজারে মার্কেটিংয়ে দলে দলে (ছবি- প্রদীপ কুমার)

ল্যান্সেট জার্নালে প্রকাশিত এক নতুন গবেষণার সিদ্ধান্ত, কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে গোষ্ঠী প্রতিরোধ (herd immunity) এই পর্যায়ে অসম্ভব। ভিন্ন মতে তা আদৌ সম্ভব নয়। স্পেনের সমগ্র জনসংখ্যার সেরোপ্রিভ্যাল্যান্স থেকে পাওয়া তথ্য থেকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছনো গিয়েছে।

Advertisment

গোষ্ঠী প্রতিরোধ কী?

এটি এমন এক পরিস্থিতি যেখানে জনসংখ্যার একটি নির্দিষ্ট শতাংশ একটি নির্দিষ্ট রোগ সংক্রামক প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি হয়ে যায়, যার জেরে জনসংখ্যার বাকি অংশের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ায় না। বিষয়টি প্রধানত ভ্যাকসিনেশনের প্রেক্ষিতে আলোচ্য হলেও যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হওয়ার পরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুললে গোষ্ঠী প্রতিরোধ অর্জিত হওয়া সম্ভব।

একটি নির্দিষ্ট শতাংশের মানুষের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে গেলে, তাঁরা আর গোষ্ঠীর অন্য সদস্যকে সংক্রমিত করতে পারবেন না। এর ফলে সংক্রমণ শৃঙ্খল ভেঙে পড়বে, এবং সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের সংক্রমিত হওয়া থেকেও বাঁচাবে।

নতুন গবেষণা কী বলছে?

এই গবেষণায় দেখা গিয়েছে স্পেনের জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশের মধ্যে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। এর অর্থ ৯৫ শতাংশ এখনও ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারেন।

এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ৬৬৮০৫। গবেষণা চালানো হয়েছে ২৭ এপ্রিল থেকে ১১ মে-র মধ্যে।

এই গবেষণা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

এটি ইউরোপে সংঘটিত এখনও পর্যন্ত সর্ববৃহৎ গবেষণা এবং এখানে কোভিড-১৯ সংক্রমণের আসল সংখ্যা ধরা হয়েছে, ল্যাবরেটরি টেস্টেভিত্তিক সংখ্যা নয়। এর ফলে সারা দেশের জনসংখ্যার এক সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে।

এই গবেষণার গুরুত্ব কী?

সেরোপ্রিভ্যালেন্স স্টাডিতে মূলত ভাইরাসে পূর্ববর্তী এক্সপোজার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। কোভিড-১৯ এর কোনও চিকিৎসা বা ভ্যাকসিনের অনুপস্থিতিতে কী করণীয় এই স্টাডির প্রতিপাদ্য ছিল সেটাই। সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে এই পর্যায়ে হার্ড ইমিউনিটি সম্ভব নয়।

সেখানে বলা হয়েছে, হার্ড ইমিউনিটি পেতে গেলে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হবে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর প্রভূত চাপ পড়বে।

এই গবেষণার উপর ভিন্ন এক মন্তব্যে জার্মান ভাইরোলজিস্ট ইসাবেলা একরেলে এবং বেঞ্জামিন মেভর ল্যান্সেটে লিখেছেন "এই গবেষণার ভিত্তিতে বোঝা যাচ্ছে স্বাভাবিক সংক্রমণের মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটির দিকে কোনও প্রস্তাবিত পদক্ষেপ শুধু অনৈতিকই নয়, অসম্ভবও। যেহেতু জনসংখ্যার বড় অংশ এই সংক্রমণে এখনও ভোগেননি - ভাইরাসের চক্রপথ সেক্ষেত্রে দ্রুত প্রাথমিক অতিমারীর পর্যায়ে পৌঁছবে এবং বিধিনিষেধ প্রত্যাহৃত হলেই অতিমারী পরিস্থিতি তৈরি হবে।"

স্পেন ছাড়া অন্য দেশগুলির কাছেও এই গবেষণা ইঙ্গিত পাঠাচ্ছে যে কোভিড-১৯ অন্যে যেসব দেশে বহুল, সেখানেও অতিমারী শেষ হতে অনেক দেরি, ফলে বিধিনিষেধ শিথিল করার ব্যাপারে সাবধানী হওয়া উচিত।

গবেষণায় হার্ড ইমিউনিটিকে দুঃসাধ্য বলা হচ্ছে কেন?

অতিমারীর শুরুতে ব্রিটেন ইঙ্গিত দিয়েছিল কৌশল হিসেবে দেশের ৬০ শতাংশ জনগণের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে দেওয়া হবে যাতে হার্ড ইমিউনিটি পাওয়া যায়।

স্পেনের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, গোষ্ঠী সংক্রমণের পর মাত্র ৫ শতাংশে মধ্যে ভাইরাসের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। ফলে গবেষণায় এই সিদ্ধান্ত টানা হয়েছে।

তাঁদের মন্তব্যে জারামান ভাইরোলজিস্টরা দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেছেন। বর্তমানে সার্স কোভ ২ সংক্রমণের প্রতিরোধ অসম্পূর্ণ ও ক্ষণস্থায়ী হবে , যা কয়েক মাস থেকে কয়ক বছর পর্যন্ত কার্যকর হবে, দ্বিতীয়ত, এই রোগীরা অন্য প্রতিরোধী সক্রিয়তা থেকে সুরক্ষিত থাকবেন কিনা তা অজানা।

এ ধরনের পূর্ববর্তী গবেষণায় কী বলা হয়েছে?

১১ জুন ল্যান্সেটে এক গবেষণা প্রকাশিত হয়। জেনিভার ২৭৬৬ অংশগ্রহণকারী নিয়ে সার্স কোভ ২ অ্যান্টিবডির এই গবেষণা সংঘটিত হয়েছিল। গবেষকরা বলেছিলেন প্রত্যেক নিশ্চিত সংক্রমণ থেকে গোষ্ঠীর ১১.৬ জন সংক্রমিত হয়েছেন বলে হিসেব পাওয়া যাচ্ছে।

COVID-19
Advertisment