পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশে লকডাউন চলছে যাতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শৃ্ঙখল ভেঙে যায়। অতিমারীর বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে সামনের সারিতে রয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
ফেব্রুয়ারি মাসে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপারে সাবধান করেছিলেন যে ডাক্তার, সেই লি ওয়নলিয়াং এই রোগেই মারা যান। ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নালে জানানো হয়েছে মার্চের শুরুতে চিনে ৩৩০০ স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রমিত, তাঁদের মধ্যে ২২ জন মারা গিয়েছেন। ইতালিতে ২০ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত, অনেকেই মৃত।
ল্যানসেট জার্নালের সম্পাদকীয়কে বলা হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীরাই সব দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ এই সময়ে, সরকারগুলির কাছে তাঁদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দেবার অনিরোধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে যেন তাঁরা প্রয়োজনীয় খাদ্য, বিশ্রাম ও মানসিক সাহচর্য পান।
স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকি
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে ৪১ জন স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ সার্জিক্যাল মাস্ক পরিহিত অবস্থায় এবং বাকিরা এন ৯৫ মাস্ক পরিহিত অবস্থায় রোগী দেখেছেন। ১০ মিনিট সময় ধরে তাঁরা রোগীর ২ মিটারের মধ্যে ছিলেন। তা সত্ত্বেও তাঁদের সংক্রমণ হয়নি।
অন্যদিকে চিনে ৩০০০ স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রমিত। এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে তাঁদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা না থাকা, দীর্ঘক্ষণ বহু সংখ্যক রোগীর সংস্পর্শে থাকা, কাজের চাপ, বিশ্রামের অভাব, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাবকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তাহলে স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের সুরক্ষিত রাখবেন কীভাবে?
হাসপাতাল থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়ানো সহজ। চিনে পিপিই কম থাকার জন্য সেখানে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির হাসপাতালগুলিকে অনুদান চাইতে হয়েছে ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেরা নিজেদের পিপিই বানিয়ে নিয়েছেন। বিভিন্ন গবেষণায় বারবার স্বাস্থ্যকর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণের উপর জোর দিতে বলা হয়েছে।
ভারতের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নির্দেশিকা
পরিবার ও স্বাস্থ্যকল্যাণ মন্ত্রক স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নির্দেশিকা তৈরি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে প্রবেশের আগে সমস্ত প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে হবে, হাতের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, এবং পিপিই পরতে হবে।
আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে বেরোনোর আগে পিপিই খুলে ফেলার কথাও বলা হয়েছে। এরপর দস্তানা খুলে হাত ধোয়া, ডিসপোজেবল সব কিছু নির্দিষ্ট বিনে ফেলার কথাও বলা হয়েছে।
ভারতে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি
সবচেয়ে ভাল হয় প্রতি কোভিড ১৯ রোগীকে আলাদা ঘরে রাখলে। কিন্তু তত জায়গা যেহেতু নেই, ফলে এক মিটার দূরে বেড সমন্বিত ঘরে তাঁদের রাখতে হবে। ১০ জন রোগীর জন্য ২০০০ বর্গফুটের ঘর প্রয়োজন।
আইসোলেশন ওয়ার্ডে ঢোকা বেরোনোর দরজা আলাদা হতে হবে। ডায়ালিসিস ইউনিট, সার্জিকাল ইউনিট বা লেবার ইউনিটের সঙ্গে এই ইউনিট সংশ্লিষ্ট হতে পারবে না। এটি বাতানুকূল ঘর হলে প্রতি ঘণ্টায় ১২ বার হাওয়া বদল নিশ্চিত করতে হবে।
এ ধরনের ওয়ার্ডের মেঝে সাফ রাখা হবে কী করে?
মন্ত্রক বলছে, দুবার করে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এর মধ্যে ভিজে কাপড় দিয়ে ধুলো ঝাড়া এবং ফিনাইলজাতীয় দ্রব্য দিয়ে ঘর মোছা এবং সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট দিয়ে সারফেস পরিষ্কার করার কথা বলা