Advertisment

পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর যে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে, তা কি নিরাপদ?

পুণেতে এই রাসায়নিক বাড়ির উপর স্প্রে করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, তথা রাজ্যের সংক্রামক রোগ প্রতিরোধক টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান সুভাষ সালুঙ্খে বলেছেন, এর ফলে বাড়ির মধ্যে থাকা লোকজনের ক্ষতি হতে পারে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর রাসায়নিক স্প্রে করা হচ্ছে উত্তরপ্রদেশের বেরিলিতে

যে সব পরিযায়ী শ্রমিকরা  নিজেদের রাজ্যে ফিরছিলেন, রবিবার ও সোমবার বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের গায়ে, তাঁদের সঙ্গের জিনিসপত্রে রাসায়নিক স্প্রে করা হয়েছে। বলা হচ্ছে জীবাণুমুক্ত করবার জন্যই এই পদক্ষেপ। উত্তর প্রদেশের বেরিলিতে শ্রমিকদের গায়ে, দিল্লিতে তাঁদের জিনিসপত্রের উপর রাসায়নিক স্প্রে করা হয়েছে. যে রাসায়নিক স্প্রে করা হয়েছে তা হল সোডিয়াম হাইপোক্লারাইট। সোডিয়াম হাইপোক্লারাইট ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়, ব্যবহার করা হয় সুইমিং পুল সাফ করার কাজেও। গুজরাট, মহারাষ্ট্র এবং পাঞ্জাবে বিভিন্ন বিল্ডিং ও নিরেট তল (solid surface)-এর উপর এই কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছে, লক্ষ্য- নভেল করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব দূর করা।

Advertisment

 এই রাসায়নিক কি নিরাপদ?

সাধারণ ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করবার কাজে ব্যবহৃত হয়। এতে ক্লোরিন থাকে, যা জীবাণুনাশক। কী কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে মিশ্রণে রাসায়নিকের ঘনত্ব কতটা। বেশি পরিমাণ ক্লোরিন ক্ষতিকর হতে পারে। গৃহস্থালিতে যে ব্লিচ ব্যবহার করা হয়, তাতে ২ থেকে ১০ শতাংশ হাইপোক্লোরাইট সলিউশন থাকে। ০.২৫ থেকে ০.৫ শতাংশ রাসায়নিক কাটা ছড়ার ক্ষতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। হ্যান্ডওয়াশের জন্য কোনও কোনও সময়ে ব্যবহার করা হয় আরও কম (০.০৫ শতাংশ) সলিউশন।

বিভিন্ন জায়গায় যা স্প্রে করা হয়েছে, তাতে কত ঘনত্বের সলিউশন ব্যবহৃত হয়েছে?

আধিকারিকরা বলছেন, দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিকের জিনিসপত্রের উপর যে স্প্রে করা হয়েছে, তাতে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট সলিউশনের পরিমাণ ছিল ১ শতাংশ। বিভিন্ন বিল্ডিং, গাড়ি সহ অন্যান্য জায়গায় যে স্প্রে ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে এই পরিমাণ কত ছিল তা স্পষ্ট নয়।

১ শতাংশ সলিউশন মানিষের ত্বকের সংস্পর্শে এলে তা ক্ষতিকর হতে পারে। শরীরের মধ্যে প্রবেশ করলে তা ফুসফুসের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট জারক পদার্থ এবং তা মূলত কঠিন তল সাফ করবার কাজে ব্যবহৃত হয়। মানুষের উপর তা ব্যবহারের কথা নয়, স্প্রে বা শাওয়ার হিসেবে তো নয়ই। এমনকী ০.০৫ শতাংশ সলিউশনও চোখের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে।

বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের কীটনাশক আধিকারিক ডক্টর রঞ্জন নারিনগ্রেকর বলেছেন, “এর ফলে চুলকানি ও পুড়ে যাবার অনুভূতি হতে পারে, এবং মানুষের উপর এই কেমিক্যাল ব্যবহারের অনুমতি নেই।” তিনি বলেন, এরকম ভাবে মানুষের উপর এই কেমিক্যাল ব্যবহার করা উচিত নয়। “সুইমিং পুলে অতি অল্প পরিমাণ সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট ব্যবহার করা হয়, যাতে ত্বকের কোনও ক্ষতি না হয়।”

আরও পড়ুন, কোভিড ১৯ সেরে যাবার পর ফের কীভাবে হতে পারে?

পুণেতে এই রাসায়নিক বাড়ির উপর স্প্রে করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, তথা রাজ্যের সংক্রামক রোগ প্রতিরোধক টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান সুভাষ সালুঙ্খে বলেছেন, এর ফলে বাড়ির মধ্যে থাকা লোকজনের ক্ষতি হতে পারে। এক বিবৃতিতে এ ধরনের পদ্ধতি না নেবার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

 এই রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে নভেল করোনাভাইরাস থেকে কি মুক্তি পাওয়া যেতে পারে?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং মার্কিন সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন কঠিন তল পরিষ্কার ও নভেল করোনাভাইরাস মুক্ত করতে ২-১০ শতাংশ ঘনত্বের গৃস্থালির ব্লিচ সলিউশন ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়েছে।

মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির টিউটোরিয়ালে বলা হয়েছে, এই সলিউশন ব্যবহার করলে শুধু করোনাভাইরাস নয়, রেহাই পাওয়া যায় ফ্লু, খাবার থেকে রোগ এবং আৎও অনেক কিছু থেকেই। তবে একইসঙ্গে বলা হয়েছে, “এই ব্লিচ সবসময়েই হাওয়া চলাচলকারী জায়গায় ব্যবহার করতে হবে এবং এ ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করবার সময়ে দস্তানা পরতে হবে।”

coronavirus
Advertisment