গত সোমবার থেকে দিল্লি, হায়দ্রাবাদ এবং জয়পুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিছু ব্যক্তির কথা জানা গিয়েছে। সরকারের এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তরফে বেশ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। যে আতঙ্কের উৎস অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভয় পাইয়ে দেওয়া কিছু হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের ব্যাপক হারে আদানপ্রদান।
কী কী সতর্কতা নেওয়া উচিত, কী কী নিরাপদ আর কী-ই বা বিপজ্জনক, কী কী করণীয় এবং কী করণীয় নয়, জেনে রাখুন।
করোনোভাইরাস নির্ধারণ করতে কী কী পরীক্ষা করতে হয়? বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে কি সেই পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো আছে?
রক্তের নমুনা নিয়ে প্রথম যে পরীক্ষাটা করা হয়, তাকে বলে PCR (Polymerase Chain Reaction Test)। এই টেস্টের রিপোর্ট যদি 'পজিটিভ' আসে, তাহলে রক্তের নমুনা পাঠানো হয় পুনের 'National Institute of Virology’-তে। এটিই একমাত্র সরকারি পরীক্ষাগার, যেখানে 'genome sequencing’ করে শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়।
PCR Test দেশের একাধিক সরকারি হাসপাতালে করা যায়। যেমন দিল্লির এআইআইএমএস, লক্ষ্মৌয়ের কিং জর্জস মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি, জয়পুরের সাওয়াই মান সিং হাসপাতাল, নাগপুরের ইন্দিরা গান্ধী গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ, বা কলকাতার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজ। কিছু বেসরকারি হাসপাতালেও এই টেস্টের ব্যবস্থা আছে, তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানে যাওয়াই শ্রেয়।
মুখোশ, অর্থাৎ 'মাস্ক' পরলে কি করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা যায়?
হ্যাঁ, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোন ব্যক্তি বা আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে সংস্পর্শে আসা কেউ, এঁদের অবশ্যই 'মাস্ক' পরা উচিত, যাতে রোগটা না ছড়ায়। এই রোগের চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত সকলেরও 'মাস্ক' পরে থাকা উচিত।
তবে এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষের পক্ষে 'মাস্ক' পরাটা অবশ্যকর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। তাছাড়া 'মাস্ক' পরার কিছু কুফলও রয়েছে। অন্য কোন রোগে আক্রান্ত, এমন ব্যক্তি 'মাস্ক' পরলে হিতে বিপরীত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভুলভাবে 'মাস্ক' পরলে বরং উল্টে রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি।
জন্মদিনের পার্টিতে বা ওই জাতীয় অনুষ্ঠানে বাচ্চাদের পাঠানোটা কি ঝুঁকির হতে পারে? সাধারণ গণপরিবহনে চড়াটা কি নিরাপদ?
যদি পার্টির আয়োজক বা অতিথিদের মধ্যে কারোর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার পূর্বইতিহাস থাকে, বা যে যে দেশে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়েছে সেইসব দেশে সাম্প্রতিক অতীতে ভ্রমণের ইতিহাস থাকে, তাহলে পার্টির আয়োজন করা বা পার্টিতে যাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। অন্যথায়, পার্টির আয়োজন করা বা পার্টিতে যাওয়ায় এই মুহূর্তে কোন ঝুঁকি নেই। তবে হাঁচা বা কাসার সময় মুখে হাত বা রুমাল চাপা দেওয়াটা খুবই জরুরি। যেমন জরুরি হাত বারবার ধোওয়া বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করা।
ভারতে করোনাভাইরাস: 'হ্যান্ড স্যানিটাইজার'-এর ব্যবহার কি প্রতিরোধে কার্যকরী?
হ্যাঁ, কার্যকরী, তবে সেই স্যানিটাইজারের মূল নিহিত উপাদান হতে হবে অ্যালকোহল এবং অ্যালকোহলের পরিমান হতে হবে অন্তত ৬০ শতাংশ। 'ইউ এস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল'-এর সুপারিশ অনুযায়ী, "হাত ধোওয়ার সময় জলের সঙ্গে সবসময় সাবান ব্যবহার করা উচিত, কারণ হাত ভালো করে ধুলে হাতে থাকা জীবাণু এবং রাসায়নিকের পরিমান কমে আসে। কিন্তু হাতের কাছে যদি জল আর সাবান না থাকে, তবে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল-যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে জীবাণু প্রতিরোধে।" তবে হাত ধোওয়াটাই সেরা পন্থা, এবং গরম জল দিয়ে।