Advertisment

করোনা সংক্রমণ আটকাতে সামাজিক দূরত্ব নীতি কতটা কার্যকর?

এর পরের প্রশ্ন হল সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে কতটা শক্তিপ্রয়োগ করা উচিত এবং এই নিয়ম তুলে দেবার ব্যাপারে সরকারকে কোন কোন বিষয় মাথায় রাখতে হবে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ঠিক কতটা শারীরিক দূরত্ব নিরাপদ, তা কার্যত এখনও বুঝতে পারছেন না নাগরিকরা সকলে (ছবি- পার্থ পাল)

সারা দুনিয়ায় সরকারেরা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আটকাতে লকডাউন ও কারফিউয়ের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক দূরত্বের নীতিও অবলম্বন করেছে। চিনে, যেখানে এ রোগের প্রকোপ প্রথম ঘটেছিল, সেখানকার উদাহরণ যদি ধরা যায়, তাহলে কিছু প্রমাণাদি পাওয়া যাচ্ছে, যা থেকে বোঝা যায় সেখানে লকডাউন প্রক্রিয়া কার্যকর হয়েছে, কিন্তু এ পদ্ধতি অবলম্বনের সুফল কতটা, তা সম্পূর্ণ স্পষ্ট নয়।

Advertisment

এর পরের প্রশ্ন হল সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে কতটা শক্তিপ্রয়োগ করা উচিত এবং এই নিয়ম তুলে দেবার ব্যাপারে সরকারকে কোন কোন বিষয় মাথায় রাখতে হবে।

লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনে এক প্রাথমিক গবেষণায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হার কমাতে ব্রিটেনের সরকারের শারীরিক দূরত্ব রাখায় বিষয়টি কতটা প্রভাবিত করেছে তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

২৩ মার্চ থেকে ব্রিটেন শারীরিক দূরত্বের নীতি কার্যকর করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মানুষকে বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া, দিনে একবার একসারসাইজের জন্য এবং খাদ্য ও ওষুধের মত প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছে। স্কুল, রেস্তোরাঁ, বার ও জিম বন্ধ।

গবেষণটা ঠিক কী নিয়ে?

১৩৬৫ জন প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এ নিয়ে গবেষণা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে অংশগ্রহণকারীদের দৈনিক সংস্রবের পরিমাণ কমেছে ৭৩ শতাংশ। অর্থাৎ দৈনিক হিসেবে ১০.৮ শতাংশ থেকে সংস্রব কমে এসেছে ২. ৯ শতাংশে। গবেষকরা হিসেব করে দেখাচ্ছেন, লকডাউনের আগে করোনাভাইরাসের পুনরুৎপাদন (reproduction) হার যেখানে ছিল ২. ৬ শতাংশ, লকডাউনের পর তা কমে আসতে পারে ০.৬২ শতাংশে।

 এর অর্থ কী?

সব মিলিয়ে গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ব্রিটেনের ১৩৬৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক ৩৮৪৯ জনের সংস্পর্শে এসেছেন। গবেষণায় দাবি করা হয়েছে সমস্ত অংশগ্রহণকারীর এই পর্যায়ে সংস্পর্শের পরিমাণ কমেছে, যে কারণে আগামী সপ্তাহগুলিতে রোগীর সংখ্যা কমতে পারে, তবে দ্রুত সংখ্যাহ্রাস নাও ঘটতে পারে।

চিনে একইরকমের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, সামাজিক দূরত্বের কারণে সংস্রবের পরিমাণ কমেছে। প্রকোপের আগে যা ছিল ১৪.৬ তা এই সময়ে কমে দাঁড়িয়েছে ২। এমনটাও সম্ভব যে ব্রিটেনের গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা অনেক বেশি পরিমাণে শারীরিক দূরত্বের বিষয়টি মেনে চলেছেন যে কারণে এর সম্ভাব্য ফলের পরিমাণ বেশি দেখা গিয়েছে।

অন্য গবেষকরা কী বলছেন?

ল্যানসেট জার্নালে উহানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে যে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, সে নিয়ে এক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে এপ্রিলের শুরু পর্যন্ত যদি শারীরিক দূরত্বের বিষয়টি লাগু থাকে, তাহলে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ফল পাওয়া যাবে।

অন্যদিকে মার্চেই যদি ক্রমে এ পদক্ষেপ লঘু করে হতে থাকে তাহলে, তিন মাস পরে, জুনের শেষে সংক্রমণ আরও বেশি হতে পারে। তার বদলে এপ্রিল পর্যন্ত সময় পাওয়া গেলে ভাইরাস আরও দু মাস পরে অর্থাৎ অগাস্টে ফের দেখা দেবে এবং অক্টোবরে তা চূড়ান্ত রূপ নেবে।

উহান থেকে বিধিনিষেধ তোলা হচ্ছে ৮ এপ্রিল। এর জেরে সংক্রমণ ফের আসতে দেরিই হবে। গবেষকরা বলছেন, বিধিনিষেধ হঠাৎ এবং আগেভাগে তুলে নিলে তা দ্বিতীয়বার দ্রুত ফিরে আসবে। সারা পৃথিবীতেই সামাজিক দূরত্বের যে বিধি ও নীতি সরকারগুলি গ্রহণ করেছে তা সংক্রমণের চূড়ান্তে পৌঁছতে দেরি করাবার জন্য, যাতে এই মহামারী চূড়ান্ত আকার কমানো যায়।

ল্যানসেটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে সামাজিক দূরত্বের কার্যকারিতা অন্য কিছু বিষয়ের উপরেও নির্ভরশীল। এর মধ্যে রয়েছে সামান্য উপসর্গসহিত সংক্রমিত ব্যক্তিদের অনুপাত, তাঁরা নিজেদের বিচ্ছিন্ন করেছেন কি না, এবং উপসর্গ দেখা দেবার পর তাঁরা নিজেদের আইসোলেট করছেন কিনা তাও।

coronavirus
Advertisment