করোনাভাইরাসের কারণে জাতীয় লকডাউনের ৯ দিনের মাথায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থিক সংকট যখন ছায়া ফেলছে, সে সময়ে ২১ দিনের শেষে এ থেকে কীভাবে বেরোনো যায়, তার উ্ত্তর খুঁজছে সরকারও।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিও বৈঠকে একটি সম্ভাব্য রাস্তার কথা বলেছেন। তিনি লকডাউন শেষে জনসাধারণকে ধীরে ধীরে ফের স্বাভাবিকতার পথ দেখানোর একটি সাধারণ কৌশল খুঁজে বের করার উপর জোর দিয়েছেন।
এই কৌশলের ব্যাপারে তিনি রাজ্যগুলিকে মাথা খাটিয়ে তাঁর কাছে সাজেশন পাঠাতে বলেছেন। তাঁর সরকারের মধ্যেই এই মুহূর্তে এলাকাভিত্তিক সীমিত লক ডাউনের ভাবনা জোর পেতে শুরু করেছে।
কিন্তু এই সীমিত বিষয়টি ঠিক কী হবে তা অনেকগুলি বিষয়ের উপর নির্ভর করছে। এর অন্যতম হল করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার প্রকৃতি।
সরকারের একটি অংশ বলছে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে নতুন কোনও ঘটনা ঘটবে না, এমনটা অসম্ভব। ফলে সেরা উপায় হল কিছু পকেট চিহ্নিত করা যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া সেখানেই সীমাবদ্ধ রাখা যায়।
সরকারের এক উচ্চপদাধীন সূত্রের কথায়, “আমরা যদি সারা দেশের কিছু পকেটকে চিহ্নিত করি- ধরুন কয়েকশ পকেট - এবং আমার যদি মনে হয় বাকি দেশ নিজেদের কাজকর্ম শুরু করতে পারবে, তাহলে কেবল সেই এলাকাগুলিতেই বিধিনিষেধ লাগু থাকবে।”
এই পদক্ষেপের অতিরিক্ত সুবিধা হল সমস্ত রিসোর্স এই এলাকাগুলিতে একত্রিত করা যাবে, পুরোমাত্রায় নজরদারি সম্ভব হবে এবং সমস্ত কার্যকরী ফলোআপ পদ্ধতি নেওয়া যাবে।
সূত্রটি বলছে, এই পরিকল্পনায় সমস্যা হল দিল্লিতে গত কয়েকদিনে তাবলিগি জামাতের ঘটনার জেরে রোগীর সংখ্যার ব্যাপক বৃদ্ধি- ওই জমায়েতে হাজিরার সূত্রে ৯টি বিভিন্ন রাজ্যে অন্তত ৪০০ জনের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে বুধবার এইমসের ডিরেক্টর ডক্টর রণদীর গুলেরিয়া বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন।
“আমার কাছে বিষয়টা হল দ্রুত পরিসংখ্যানে নজর দেওয়া। প্রথমত, লকডাউন কি চালিয়ে যাওয়া উচিত। দ্বিতীয়ত সারা দেশে কি লকডাউন থাকা উচিত, নাকি তৃতীয়ত কিছু কিছু জায়গা থেকে তা তুলে নেওয়া উচিত। এগুলো সবই পরিসংখ্যান নির্ভর হওয়া প্রয়োজন। রোগীর সংখ্যা, হটস্পট, কোথায় কোথায় কম বিপজ্জনক।”
ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানোর কথা অস্বীকার করেছেন। কিন্তু সূত্র বলছে মেয়াদ শেষে “স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসবে এ সম্ভাবনা একেবারে নেই তা নয়, কিন্তু কম।”
সরকারের এক আধিকারিকের কথায় “এই সময়ের পর ভাইরাস হঠাৎ করে চলে যাবে, এ নিয়ে সামান্য হলেও সংশয় রয়েছে। যদি আমাদের ভাগ্য ভাল হয়, তাহলে একে আমরা কিছু জায়গায় আটকে রাখতে পারব, যদি না হয়, তাহলে ফের লড়াই।” জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন লড়াই শবে শুরু হয়েছে।
লকডাউন আরও দু সপ্তাহ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। সূত্র বলছে, “এটা একটা পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি। পরিস্থিতির উপর দাঁড়িয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এখানে কোনও ছক চলবে না। কিন্তু বিভিন্ন জায়গা থেকে চিকিৎসাক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা লকডাউনের কথাই বলে চলেছেন। এখন বিষয় হল আমাদের অর্থনীতি কতটা চাপ সামলাতে পারে।”