কোভিড ১৯ রোগাক্রান্তের সংখ্যা সারা পৃথিবীতে ৬ লক্ষ ছাড়িয়েছে। বেশ কিছু দেশে লকডাউন। ভারতেও লকডাউন শুরু হয়েছে। কার্যত সারা পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ মানুষ ঘরবন্দি।
লকডাউনের ফলে বিশ্বের অর্থনীতিতে ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে, কোটি কোটি মানু,ের জীবনধারণ চ্যালেঞ্জের মুখে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এর ফলে সারা বিশ্বের জি়ডিপি ৪ শতাংশ কমবে, যা ২০০৮-এর আর্থিক সংকটের দ্বিগুণ।
আর্থিক কাজকর্ম বন্ধ হবার ফলে আরেকটা ব্যাপার হয়েছে। পৃথিবীর বহু দেশে দূষণের মাত্রা অনেকটা নেমে এসেছে।
করোনা সংক্রমণের দেরে দূষণ কত কমেছে?
লকডাউনের জন্য ৩০০ কোটি মানুষ আটকে পড়বার ফলে বিশ্ব অর্থনীতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ বন্ধ।
পৃথিবীতে মোট কার্বন নিঃসরণের এক চতুর্থাংশ ঘটে থাকে পরিবহণের কারণে, তা ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। সড়ক ও আকাশ পরিবহণ দুইই বন্ধ বহু দেশে। বিভিন্ন শিল্পেও প্রভাব প্রচুর। ভারত, চিন, আমেরিকা, ইতালি, স্পেন, এবং ব্রিটেনে দূষণ নিঃসরণের পরিমাণ ব্যাপক কমেছে, বাতাসের মান বৃদ্ধি ঘটেছে। ভারতের বড় শহরগুলিতে দুষণের মাত্রা কমেছে। নয়া দিল্লি ও মুম্বই তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
চিনে উপগ্রহ চিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে, দূষণের মাত্রা সেখানে ব্যাপক কমেছে। বিবিসির এক রিপোর্ট অনুসারেস লকডাউনের ফলে বছরের শুরু তুলনায় সেখানে নিঃসরণের পরিমাণ কমেছে ২৫ শতাংশ, এবং ৩৩৭টি শহরে ভাল মানের বাতাসের অনুপাত বেড়েছে ১১.৪ শতাংশ।
গত বছরের তুলনায় নিউ ইয়র্কে কার্বন মনোঅক্সাইডের পরিমাণ ৫০ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা
লকডাউনের শেষে দূষণের মাত্রা কী হবে?
দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকা বলছে, সাময়িকভাবে উন্নতি হলেও, আর্থিক সংকট কাটাবার জন্য সারা বিশ্বে যে পদক্ষেপ করা হবে তাতে পরিবেশের ক্ষতিই হবে।
২০০৮ সালের আর্থিক সকটের পরে, নির্মাণের মত ক্ষেত্রগুলির এক যোগে উৎসাহব্যাঞ্জক কর্মসূচি নেওয়ায় এবং ফসিল জ্বালানির দাম কমায়, ভারত ও চিনের মত উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে ব্যাপক বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়।
অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব জুড়ে কার্বন নিঃসরণ আর্থিক সংকটের আগের সময়ের চেয়ে বেড়ে যায় অনেকটাই।
এরকম আগেও হয়েছে। ১৯৭৩ ও ১৯৭৯ সালের তৈল সংকটের পর, সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর এবং ১৯৯৭ সালের এশিয়ার আর্থিক সংকটের পর এরকম উদাহরণ আরও দেখা গিয়েছে।
নভেল করোনাভাইরাস জনিত সংকট কাটার পর বিভিন্ন যে উদ্যোগ সংকট কাটাবার জন্য নেওয়া হবে, তাতেও একই বিষয় ঘটতে পারে।
দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকা বলছে, সৌর বিদ্যুৎ ক্ষেত্র ব্যাপক মার খেতে পারে এবং ২০১৫ সালে প্যারিসের পর রাষ্ট্রসংঘের COP26 সম্মলেনে যে উৎসাহ প্রথমবার দেখা গিয়েছিল, তাও ঝিমিয়ে পড়তে পারে।
এর প্রবাব পরিবেশের উপর কতটা পড়বে তা নির্ভর করছে দুটি বিষয়ের উপর। প্রথমত লকডাউন কতদিন চলবে এবং সরকার তাদের অর্থনীতিকে সাহায্য করবার জন্য কী কী পজক্ষেপ নেবে। পরিবেশের পক্ষে কম ক্ষতিকর নতুন, পরিবেশ বান্ধব শিল্পে বিনিয়োগ করা হলে তা পরিবেশের পক্ষে কম ক্ষতিকর হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।